এবার অধিকৃত পশ্চিমতীরে ট্যাংক পাঠাল ইসরাইল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:৪৩

দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অধিকৃত পশ্চিমতীরে ট্যাংক পাঠিয়েছে ইসরাইল। এতে পশ্চিমতীরে অস্থিরতা বাড়বে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনি কতৃপক্ষ।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতানিয়াহুর সাথে পরামর্শ করে তিনি সেনাবাহিনীকে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার আদেশ দিয়েছেন। পশ্চিমতীরের শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসবাদ দমনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এ ছাড়াও তিনি জানান, ‘অঞ্চলটিতে ইসরাইলের সেনারা এক বছর অবস্থান করবেন। এ সময় কোনো ফিলিস্তিনিকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।’
১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দু’দিন পর থেকে পশ্চিমতীরে অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধি করেছে ইসরাইল। অভিযানে এ পর্যন্ত ৮০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে আট মাসের গর্ভবতী এক নারীর মৃত্যু বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।’
পশ্চিমতীরে নিজেদের আধিপত্য দীর্ঘস্থায়ী করতে এসব অভিযান চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন ফিলিস্তিনিরা। অঞ্চলটিতে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি সামরিক শাসনের অধীনে বাস করেন। এই অভিযানে গাজা উপত্যকার মতো পরিস্থিতি হতে পারে আশঙ্কা করছেন পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা।
এর আগে, পশ্চিমতীরের কিছু শরণার্থী শিবির এলাকায় সেনাবাহিনীকে দীর্ঘদিন অবস্থানের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ওই এলাকাগুলো থেকে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রাণভয়ে পালিয়ে গেছেন।
কয়েক দশক আগে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধের পর পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিরা এই শিবিরগুলোতে বাস করতেন। চলমান অভিযান কবে শেষ হবে, কবে নাগাদ তাদের ফিরতে দেয়া হবে; সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু জানায়নি ইসরাইল প্রশাসন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী চলতি বছর পুরোটাই অবস্থান করতে পারে।’ নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যতদিন প্রয়োজন, সেনাবাহিনী ততদিন অবস্থান করবে।’
২০০২ সালে শেষবার পশ্চিম তীরে সাঁজোয়া যান পাঠিয়েছিল ইসরাইল। সে সময় শক্তহাতে ফিলিস্তিনি আন্দোলন দমন করেছিল তেলআবিব।
ইসরাইলের সাম্প্রতিক অভিযানকে অবৈধ আগ্রাসন হিসেবে নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ আহ্বান করেছে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরাইলি সেনাদের অভিযানে পশ্চিমতীরের অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।
জেনিন থেকে পালিয়ে আসা এক ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ আল-সাদি বলেছেন, ‘পশ্চিম তীরের ভূমি আমাদের অধিকার। আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ইসরাইলের বাত ইয়াম ও হোলোন শহরের পার্কিং লটে তিনটি বাসে বিস্ফোরণ ঘটে।
ওই ঘটনার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গভীর রাতে নিরাপত্তা পর্যালোচনা শেষে পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন।
এছাড়াও রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক ঘোষণার মাধ্যমে ‘জিম্মি’দের মুক্তি দেয়ার সময় ‘অপমানজনক অনুষ্ঠান’ করার অভিযোগ এনে ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি আটকে দেয় ইসরাইল প্রশাসন।
এই পরিস্থিতিতে ইসরাইল-হামাস দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চুক্তির মধ্যস্ততাকারী দেশ মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বন্দীদের মুক্তি না দিলে কোনো চুক্তি হবে না বলে জানিয়েছে হামাস। চুক্তির আলোচনা নিয়ে অগ্রগতি নিয়ে ইসরাইল প্রশাসন থেকেও দেখা যায়নি কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ।
সূত্র : এএফপি