৩ ইসরাইলির বিনিময়ে ছাড়া পেল ৩৬৯ ফিলিস্তিনি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:২৩
![](https://www.dailynayadiganta.com/resources/img/article/202502/19692467_15.jpg)
গাজার যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা শঙ্কার মধ্যেই তিনজন ইসরাইলি পণবন্দীকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে তাদেরকে গাজার খান ইউনিস থেকে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, শনিবার মুক্তি পাওয়া তিনজন বন্দী ইতোমধ্যে ইসরাইলে পৌঁছেছে।
ওই তিনজন পণবন্দী মুক্তি পাওয়ার পর তাদের বহনকারী রেডক্রসের গাড়ি গাজার খান ইউনিস ছেড়ে যায়।
প্রাথমিকভাবে ইসরাইলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ওই তিনজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তারা পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া বেশ কিছু ছবিতে দেখা যায়, পণবন্দীদের মুক্তি দেয়ার আগে তাদেরকে ঘিরে রয়েছেন বন্দুকধারীরা।
গাজা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা হামাসের হাতে বন্দী ছিলেন।
মুক্তি পাওয়া বন্দীরা হলেন ইসরাইলি-রুশ নাগরিক আলেকজান্ডার ট্রুফানোভ, ইসরাইলি-আর্জেন্টাইন ইয়ায়ার হর্ন এবং ইসরাইলি-আমেরিকান সাগুই ডেকেল-চেন।
ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, ইসরাইলও ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিচ্ছে। এর মধ্যে তাদের কিছু অংশ পশ্চিম তীরে পৌঁছেছে। বাকিরা পরে গাজায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এর আগে গত সোমবার হামাস জানায়, তারা এই সপ্তাহান্তে আর কোনো বন্দী মুক্তি দেবে না এবং তারা ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষারোপ করে।
ইসরাইল জানিয়েছে, যদি শনিবার দুপুরের মধ্যে বন্দীদের মুক্তি না দেয়া হয়, তবে তারা গাজায় আবার হামলা শুরু করবে।
রামাল্লায় বন্দীদের স্বজনদের ভিড়
পণবন্দী মুক্তিকে কেন্দ্র করে দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় শনিবার বিশাল জনসমাগম ঘটে। কেননা আগে থেকে জানানো হয়েছিল সেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের ছোট একটি অংশকে আনা হবে।
যে কারণে বন্দীদের আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত হয়। সেখানে থাকা অনেককে স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
তারা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার কারণেই শনিবার অনেকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে।
‘আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম, যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেস্তে যেতে পারে এই আশঙ্কায় আমরা ঘুমাতেও পারিনি। আমরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের প্রার্থনা ছিল যুদ্ধবিরতি বজায় থাকুক, গাজা পুনর্নির্মাণ হোক এবং সব বন্দীকে মুক্তি দেয়া হোক,’ সেখান থেকে বলছিলেন এক ব্যক্তি, যিনি ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময় আটক হওয়া একজন স্বজনের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন।
শনিবার ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ যাদের মুক্তি দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসরাইলিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিরা যাদের কোনো বিচার কিংবা অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছিল।
ফিলিস্তিনি বন্দী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইল যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিচ্ছে তাদের মধ্যে ২৯ জন পশ্চিম তীরের এবং সাতজন জেরুসালেম ও আশপাশের এলাকার।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজা থেকে আটক হওয়া ৩৩৩ জনকে মুক্তি দেয়া হবে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে।
মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি ইসরাইলিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার দায়ে দণ্ডিত হলেও বেশির ভাগই যুদ্ধকালীন সময়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা বিচার হয়নি।
নেতানিয়াহুর দফতরের বিবৃতি
হামাস ও ইসরাইলি পণবন্দী মুক্তির দিনে হিব্রু ভাষায় একটি বিবৃতি দিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়।
এই বিবৃতিতে তিনজন ইসরাইলি বন্দীমুক্তির বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
একইসাথে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এখনো গাজায় আটক থাকা বন্দীদের মুক্ত করতে ইসরাইল সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
এছাড়াও বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে যে হামাস এ সপ্তাহে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের চেষ্টা করেছিল’ এবং ‘ভুয়া অভিযোগের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে’।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, গাজার অভ্যন্তরে ও আশপাশে ইসরাইলি বাহিনীর উপস্থিতি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন অবস্থানের’ কারণে বন্দীমুক্তি অব্যাহত রয়েছে।
বিবৃতির শেষে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করছে ইসরাইল, যাতে গাজায় আটক সব বন্দীকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্ত করা যায়।’
আলোচনা ছাড়া মুক্তির প্রশ্নই আসে না : হামাস
হামাস জানিয়েছে, আলোচনার বাইরে অন্যকোনো উপায়ে বন্দীদের মুক্তি দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, আজকের বন্দীমুক্তি প্রমাণ করে যে শুধুমাত্র আলোচনা এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে চললেই কেবল গাজায় আটককৃত বন্দীদের মুক্তি সম্ভব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাবাসীকে স্থানান্তরের যে কথা বলেছেন সে প্রসঙ্গ টেনে হামাস বলেছে, ‘আমরা সারা বিশ্বকে বলছি, জেরুসালেম ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
চলতি সপ্তাহের শুরুতে হামাস জানিয়েছিল যে তারা বন্দীদের মুক্তি দেবে না। এর কারণ হিসেবে ইসরাইল তিন সপ্তাহের পুরনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগ করে হামাস।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা