সিরিয়ায় ‘জাতীয় সংলাপ সম্মেলন’ আয়োজনের প্রতিশ্রুতি নতুন নেতার

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণে একটি ‘জাতীয় সংলাপ সম্মেলন’ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন।

এক দিন আগে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শারা দেশের ‘নাগরিক শান্তি’ বজায় রাখা এবং ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন।

শারা তার পূর্বে ধারণকৃত টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা একটি কমিটি গঠন করব, যারা জাতীয় সংলাপ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেবে। এই সম্মেলন আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রোগ্রাম নিয়ে বিভিন্ন মতামত শোনার জন্য একটি সরাসরি মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।

তিনি আরো জানান, পুরনো সংবিধান স্থগিত করার পরবর্তী সময়ে একটি ‘সংবিধানিক ফরমান’ জারি করা হবে, যা দেশের অন্তর্বর্তী সময়ে আইনি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

শারা প্রতিশ্রুতি দেন, ‘যারা সিরিয়ায় রক্ত ঝরিয়েছে এবং অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে, তা তারা দেশেই থাকুন বা বিদেশেই থাকুক।’ এছাড়া তিনি ‘বাস্তব রূপান্তরমূলক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন।

শারার এই ভাষণের আগে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি দামেস্ক সফর করেন। কাতারের রাজ দরবার জানিয়েছে, আমির শারার নিয়োগে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘সিরিয়ায় সমাজের সব শ্রেণিকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি সরকার গঠন জরুরি প্রয়োজন, এটি স্থিতিশীলতা সংহত করতে এবং পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রকল্পগুলো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’

বুধবার সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শারাকে একটি অন্তর্বর্তী আইন পরিষদ গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ঘোষণা করেছে, আসাদ সরকারকে উৎখাত করা সশস্ত্র গ্রুপগুলো এবং আগের সরকারের সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করা হবে।

ইতোপূর্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে, যেটি ১ মার্চ পর্যন্ত এই বহুজাতিক ও বহুধর্মীয় দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে।

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি জানিয়েছেন, কাতারের প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনায় দেশটির প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত অঞ্চলের পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

‘ঐতিহাসিক সফর’
কাতারের আমিরের এই সফর সিরিয়ায় ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখলের দুই মাস পর প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সফর। এর আগে কাতারের প্রধানমন্ত্রীও এই মাসে দামেস্ক সফর করেছেন।

কাতারের রাজ দরবারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সমাজের সকল স্তরের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সরকার গঠনের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি প্রকল্পে এগিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।’

এছাড়া বুধবার সিরিয়ার নতুন প্রশাসন ঘোষণা করে যে শারাকে একটি অন্তর্বর্তী আইনসভা গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আসাদের পতনে জড়িত সব সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সাবেক সরকারের সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করার ঘোষণাও দেয়া হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই ১ মার্চ পর্যন্ত দেশ পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

পুনর্গঠন ও আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি জানিয়েছেন, কাতারি প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ার পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কাতার সিরিয়ার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও অন্যান্য অবকাঠামোগত পুনর্বাসনে সাহায্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এদিকে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শারাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন।

এই কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সিরিয়া সফর করেছেন।

সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তুরস্কের একটি উচ্চপর্যায়ের সামরিক প্রতিনিধি দলও বৃহস্পতিবার সিরিয়া সফর করেছে।
সূত্র : এএফপি