৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩০ রজব ১৪৪৬
`

গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের আবেগঘন পুনর্মিলনী

গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের আবেগঘন পুনর্মিলনী - ছবি - সংগৃহীত

ইসরাইলের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ১১০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তির সময় অবরুদ্ধ গাজা ও পশ্চিম তীরে আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় প্রিয়জনের ফিরে আসার খুশিতে পরিবারগুলোকে আনন্দ উদযাপন করতে দেখা গেছে। অনেক ফিলিস্তিনি একে একটি প্রতীকী বিজয় হিসেবে দেখছেন।

মুক্তিপ্রাপ্ত ১১০ জনের মধ্যে কমপক্ষে ৩২ জন ইসরাইলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ২৪ বছর ধরে সেখানকার কারাগারে বন্দী ছিলেন।

এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩০টি শিশুও ছিল।

বন্দী বিনিময়ের পর গাজায় উল্লাস ও মিশ্র অনুভূতি
ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির পর গাজার পরিবেশে উল্লাস ও মিশ্র অনুভূতি বিরাজ করছে।

পরিবারগুলো আবেগঘন জমায়েতে তাদের প্রিয়জনদের ফিরে আসাকে উদযাপন করছে। তবে তা পুরোপুরি দুশ্চিন্তামুক্ত ছিল না। কারণ খান ইউনিসে ইসরাইলি বন্দীদের হস্তান্তরের সময় জনগণ উল্লাস প্রকাশ করার ছবি গাজা থেকে সম্প্রচারিত হলে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে দেরি করে ইসরাইল।

ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো আশা করছে যে আগামীকাল ইসরাইলি পণবন্দীদের বিনিময়ে আরো ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে।

একটি প্রতীকী বিজয়
খান ইউনিসের জনাকীর্ণ পঞ্চম সড়কে সাবেক হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বাড়ির কাছে পণবন্দীদের হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হয়। পণবন্দীদের হস্তান্তরকে উপস্থিত অনেক ফিলিস্তিনি ‘একটি প্রতীকী বিজয়’ হিসেবে দেখছেন।

এ সময় দুই নারীকে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে থাকতে দেখা যায়। প্ল্যাকার্ডে তাদের সমর্থন করার জন্য ইরান, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হাউসিদের ধন্যবাদ জানানো হয়। এর মধ্যে ২৮ বছর বয়সী ইয়াসমিন একটি ব্যানার ধরেছিলেন যাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের সাথে যারা দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের সকলের জন্য, আমাদের বিজয় তোমাদের।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিরোধকে সমর্থনকারী প্রতিটি দেশকে আমরা ধন্যবাদ জানাতে এসেছি, বিশেষ করে ইরান, হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনকে। তবে আমাদের জনগণের দৃঢ়তা আমাদের এখানে এনেছে।’

গাজায় বন্দীদের হস্তান্তরে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ‘ঐক্যের’ ইঙ্গিত : মনিটর
যুদ্ধ পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার গাজার দক্ষিণ খান ইউনিসে পণবন্দীদের হস্তান্তরের সময় বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি হামাসের সাথে তাদের অব্যাহত সমন্বয় ও যোগাযোগের ইঙ্গিত দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিরক্ষা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (আইএসডব্লিউ) ও ক্রিটিক্যাল থ্রেটস প্রোজেক্ট (সিটিপি) জানিয়েছে, দুই ইসরাইলি পণবন্দীর হস্তান্তরের সময় হামাস, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ বাহিনী, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ কমিটি ও ফিলিস্তিনি মুজাহিদিন আন্দোলনের যোদ্ধারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আইএসডব্লিউ ও সিটিপি তাদের সর্বশেষ গাজা প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরাইলের সাথে ১৫ মাসের যুদ্ধের পর ‘দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় ব্যবস্থার কারণে চ্যালেঞ্জের’ মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ‘ঐক্য’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া থাই পণবন্দীরা সুস্থ রয়েছেন
এদিকে, ফিলিস্তিনের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া থাই পণবন্দীরা সুস্বাস্থ্যে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইসরাইলের চিকিৎসকরা।

এপি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তেল আবিবের শামির মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক ডা: ওসনাত লেভজিয়ন-কোরাচ বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে না থাকা সত্ত্বেও থাই পণবন্দীরা সুস্থ রয়েছেন।

তবে থাই পণবন্দীদের সুস্থ থাকার বিপরীত চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখিয়েছেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মুহাম্মাদ শেহাদা, যেখানে তিনি তুলে ধরেন মুক্তিপ্রাপ্ত ২০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি বন্দী মোহাম্মাদ সাবাহর খারাপ অবস্থা।

১৪ বছর বয়সে জেলে যাওয়া মোহাম্মাদ সাবাহকে মুক্তির সময় শীর্ণকায় দেখাচ্ছিল। তিনি চর্মজনিত রোগ স্ক্যাবিসে ভুগছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র : আল জাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement