৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৫
`

নিজ এলাকায় ফিরে যে অবস্থায় পড়লেন গাজাবাসী

বিধ্বস্ত গাজার একটি চিত্র - ছবি : সংগৃহীত

উত্তর গাজায় ফিরছে অধিবাসীরা। উচ্ছ্বসিত মনে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিচ্ছে দীর্ঘ পথ। বিপুল মানুষের ভিড়ে হেঁটে চলা কষ্টকর। তবুও মাতৃভূমিতে ফেরার আনন্দের সামনে সব যেন তুচ্ছ। দীর্ঘ ১৫ মাস পর বাড়িতে যাচ্ছে সবাই। এই আনন্দ অনুভূতিই যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে ক্লান্ত-ভারক্রান্ত দেহগুলো।

গাজাবাসী দুস্তর পথ পাড়ি দিয়ে মুখোমুখি হচ্ছে নতুন অভিজ্ঞতার। নিজ এলাকায় পৌঁছে পাচ্ছে না কোনো স্মৃতিচিহ্ন। চিনতে পারছে না রাস্তাঘাট। কোনটি পথ, কোনটি বাড়ি, তা-ও নির্ণয় করা যাচ্ছে না। ইসরাইলি বুলডোজার সব যেন সমান করে রেখেছে।

উত্তর গাজায় ফিরেছেন ৩ লাখ ৭৬ হাজার ফিলিস্তিনি। জাতিসঙ্ঘ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সরেজমিনে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম আইটিভি নিউজের সংবাদকর্মীরা।

তারা জানিয়েছেন, এক সময় এই উত্তর গাজাতেই বাস করতো লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। তাদের অধিকাংশেরই বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধবিরতির সুবাদে এখন বাড়ি ফিরছে তারা। বিভিন্ন শরণার্থী শিবির থেকে নিজ এলাকায় পৌঁছাতে তাদের হাঁটতে হচ্ছে ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময়। তবে এখানে পৌঁছে মুখোমুখি হতে হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত সব অভিজ্ঞতার।

অনেক কষ্টে নিজ এলাকায় মোহাম্মাদ আল দাবাজি। আইটিভি নিউজের প্রতিনিধি তার সাথে কথা বলেছেন। তিনি জানান, ‘ইসরাইলিদের এমন ধ্বংসযজ্ঞ দেখে খুব খারাপ লাগছে। এখন কিছুই চিনতে পারছি না। কোনটি পথ, তাও নির্ণয় করা যাচ্ছে না।’ তিনি আরো জানান, ‘এটি আমাদের মার্কেট স্ট্রিট। আমাদের কত পরিচিত জায়গা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, একলা এলে এই জায়গাটি চিনতেই পারতাম না।’

মোহাম্মাদের স্ত্রী বলছেন, ‘রাস্তাঘাট সব বদলে গেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমি একাকী থাকলে বলতেই পারতাম না এটি কোন এলাকা। মোটকথা, ইসরাইলি আগ্রাসনের এমন বিভৎস রূপ দেখে আমি পুরোপুরি হতবাক।’

মোহাম্মাদ জানান, ‘আমি জানছি যে আমাদের বাড়ি এখানেই কোথাও হবে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না যে বাড়িটি কোথায়।’ এরপর একটি ধ্বংসস্তুপের দিকে ইশারা করে বললেন, ‘ধারণা করছি যে এটি আমাদের বাড়ি। তবে নিশ্চিত হতে পারছি না।’

আইটিভি নিউজ জানিয়েছে, মোহাম্মাদের এক প্রতিবেশী তাকে বাড়ির অবস্থান নির্ণয় করতে সাহায্য করছে। তিনি বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখার পর বললেন, আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও বাড়ি মেরামত করে আবারো জীবন শুরু করার চিন্তা করছি। তবে এটি আমাদের জীবনে অনেক বড় এক ধাক্কা হয়ে থাকবে।

উল্লেখ্য, ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে ইসরাইল ও হামাস। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার থেকে উত্তর গাজায় ফিরছে স্থানীয়রা।

আইটিভি নিউজ থেকে অনুবাদ : আবু সাঈদ 


আরো সংবাদ



premium cement