ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে স্বস্তির প্রহর গুনছেন ফিলিস্তিনিরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৫৪, আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৬
ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৪৬০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার প্রতিটি পরিবার। তবে ইসরাইলের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতি ও ‘জিম্মি’ মুক্তির চুক্তি অনুমোদন পাওয়ায় স্বস্তির আশায় প্রহর গুনছেন ফিলিস্তিনিরা। রোববার সকাল থেকেই তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। ভোগ করবে স্বাধীনতার স্বাদ।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সামাজিকমাধ্যম এক্সের এক পোস্টে ঘোষণা করেছেন, স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৮টা ৩০ মিনিট (গ্রিনিচ সময় ৬টা ৩০ মিনিট) থেকে গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি শনিবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘পক্ষগুলোর মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে... গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি রোববার সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হবে। আমরা আমাদের ভাইদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার এবং সরকারি সূত্র থেকে নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছি।’
আল-জাজিরা জানিয়েছে, শনিবার সকালের দিকে ইসরাইলি সরকার ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠকের পর চুক্তিটি অনুমোদন করেছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
আল-জাজিরা আরো জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর ৪৬০ দিনেরও বেশি সময় পর এই চুক্তিটি অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে ইসরাইলি বাহিনী ৪৬ হাজার ৭৮৮ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং ১ লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জনকে আহত করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে বন্দী ৩৩ ইসরাইলিকে মুক্তি দেয়া হবে। বিনিময়ে ইসরাইল কর্তৃক বন্দী শত শত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হবে।
জর্ডান থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক হামদাহ সালহুত বলেছেন, ‘সকলের নজর এই মুহূর্তে গাজার দিকে। এই শেষ মুহূর্তে ইসরাইলি সেনাবাহিনী কী করতে চলেছে তা দেখার জন্য। কারণ ঐতিহাসিকভাবে, যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আগে ইসরাইলি সেনাবাহিনী তার সমস্ত শক্তি দিয়ে গাজা উপত্যকায় আক্রমণ করে।’
তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে সেখানে ‘অনেক ভয় ও উদ্বেগ থাকবে।’
এদিকে, বুধবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা আসার পরও ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ইসরাইলি আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত গাজার প্রতিটি পরিবার
ইসরাইলের দীর্ঘ আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার প্রতিটি পরিবার। প্রতিটি পরিবারে রয়েছে স্বজন হারানোর দুঃখ কিংবা সদস্য আহত হওয়ার বেদনা। কাউকে তাড়িয়ে ফিরছে শেষ আশ্রয় হারানোর কষ্ট। এরও মাঝে একটু স্বস্তির সংবাদ মিলেছে তাদের।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মোহাম্মাদ শেখ আবেদ। গাজার দক্ষিণে রাফা শহরে তার বাড়ি। আশ্রয় হারিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন খান ইউনিসে। আনন্দে উদ্বেলিত কণ্ঠে তিনি বলেন, হয়তো আজকেই যুদ্ধের শেষ দিন। আশা করি, কালই আমরা বাড়ি ফিরতে পারব।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে আরো বলেন, আশা করছি, যুদ্ধবিরতির পর আর কোনো সহিংসতা দেখতে হবে না। আমরা সবাই ক্লান্ত। খাওয়ার মতো অন্ন নেই, স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার মতো ঘর নেই। অসুস্থ ও আহতদের জন্য নেই চিকিৎসার ব্যবস্থা। আর কত! আর কতদিন এভাবে থাকা যায়। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আজকেই যেন এই ধ্বংসযজ্ঞ ও বিভীষিকার শেষ দিন হয়।
আরেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি তারেক জুমলট। তিনি হলেন জাবালিয়ার বাসিন্দা। ইসরাইলি হামলায় ছাড়তে হয় দীর্ঘদিনের স্মৃতিবিজড়িত মাতৃভূতি। আশ্রয় নিতে হয় খান ইউনিসে। তার থেকেও প্রকাশ পেলো আবিদের মতো উচ্ছ্বাস। উদ্বেলিত কণ্ঠে তিনি বলেন, আশা করছি, এবারের চুক্তিটি বাস্তবিক অর্থেই বাস্তবায়িত হবে। আমরা ফিরে যেতে পারব স্মৃতির উঠোনে- নিজ নিজ বাড়িতে।
তিনি আরো বলেন, আশা করছি, এখন পরিবারের সবার সাথে দেখা হবে। আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালোবাসা বিনিময় হবে। আশা করি, এখন আর কোনো গোলার আওয়াজ শুনতে হবে না। আমরা নিরাপদেই থাকতে পারব।
রাফা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে খান ইউনিসে অবস্থান করছেন বেলাল আল নাওহাওয়ানি। তিনি বলেন, আমরা একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এমন কোনো পরিবার নেই, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ইসরাইলি আগ্রাসনে কেউ স্বজন হারিয়েছে। কেউ আহত হয়েছে বোমার আঘাতে। সবাই ক্লান্ত। যথেষ্ট হয়েছে। গাজার মানুষ যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছে।
গাজায় বিতরণের জন্য ১৩০০ ট্রাক ত্রাণ প্রস্তুত ইউনিসেফের
গাজায় বিতরণের জন্য ইউনিসেফের ১ হাজার ৩০০ ট্রাক ত্রাণ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটির মুখপাত্র রোজালিয়া বোলেন। তিনি বলেন, ত্রাণ সরবরাহের কাজ ইতোমধ্যে শুরুও হয়ে গেছে।
গাজার আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবির থেকে বোলেন আল জাজিরাকে বলেন, আমাদের ১ হাজার ৩০০ ট্রাক পণ্য আনার ব্যবস্থা আছে। এরপর আরো ৭০০ ট্রাক পণ্য অল্প সময়েই নিয়ে আসা যাবে।
তিনি আরো বলেন, এসব কেবল আমরা একা ব্যবস্থা করিনি। বরং এক্ষেত্রে অন্যান্য মানবিক কর্মীরাও আমাদের সরবরাহ করেছে।
ইউনিসেফ মুখপাত্র বলেন, যখনই তিনি কারেম আবু সালেম ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেন, তখনই ‘প্রচুর ত্রাণ প্যালেট সেখানে জমা থাকে।’
তিনি বলেন, অনেক পরিবার উত্তর গাজা থেকে আল-মাওয়াসিতে এসেছে। তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চায়। এর জন্য মানবিক অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুকে জনসংখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।
সূত্র : আল-জাজিরা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা