হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১০
ইসরাইল ও হামাস বুধবার গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের ১৫ মাসের ধ্বংসাত্মক আক্রমণের অবসান ঘটবে।
গাজায় ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৭০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বুধবার দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল-থানি এই চুক্তির ঘোষণা দেন। চুক্তিটি ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
এই চুক্তিতে বন্দীদের বিনিময়, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের উত্তরে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা এবং দক্ষিণ গাজার রাফাহ ক্রসিং দিয়ে আহত ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকদের মিসরে পারাপার করার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই থেকে পাওয়া চুক্তির সম্পূর্ণ বিবরণ এখানে দেয়া হলো
১. দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রস্তুতি
পক্ষগুলো ও মধ্যস্থতাকারীদের লক্ষ্য হল বন্দী ও পণবন্দীদের বিনিময়-সংক্রান্ত ২০২৪ সালের ২৭ মে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি চূড়ান্ত ঐকমত্য অর্জন করা এবং শান্তিতে ফিরে আসা যা পক্ষগুলোর মধ্যে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জন করতে সাহায্য করবে।
প্রথম পর্যায়ের সকল প্রক্রিয়া দ্বিতীয় পর্যায়ে অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নের শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা চলমান থাকে এবং এই চুক্তির জামিনদাররা একটি চুক্তিতে পৌঁছানো পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত রাখবেন।
২. ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার
গাজা উপত্যকার সীমান্তবর্তী ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে পূর্ব দিকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াদি গাজা (নেটজারিম অক্ষ ও কুয়েত চৌরাস্তা)।
সীমান্তের দক্ষিণ ও পশ্চিমে এবং চুক্তির উভয় পক্ষের সম্মত মানচিত্রের ভিত্তিতে ইসরাইলি বাহিনীকে (৭০০) মিটার পরিধির মধ্যে মোতায়েন করা হবে। তবে পাঁচটি স্থানীয় জায়গায় তা ব্যতিক্রম থাকবে, যা ইসরাইলি পক্ষ থেকে নির্ধারিত (৪০০) মিটারের বেশি অতিরিক্ত হবে না।
৩. বন্দী বিনিময়
ক. ১১০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে ৩৩ জনের তালিকা থেকে নয়জন অসুস্থ ও আহতকে মুক্তি দেয়া হবে।
খ. ইসরাইল ৮ অক্টোবর ২০২৩ থেকে এক হাজার গাজার বন্দীকে মুক্তি দেবে যারা ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর সাথে জড়িত ছিলেন না।
গ. ৩৩ জনের তালিকা থেকে বয়স্কদের (৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের) মুক্তি দেয়া হবে বিনিময় হার ১:৩ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১:২৭ অন্যান্য সাজা অনুসারে।
ঘ. এব্রা মাঙ্গেস্তো ও হেশাম এল-সাইদ ১:৩০ বিনিময় হার অনুসারে মুক্তি পাবেন। সেই সাথে ৪৭ জন শালিত বন্দীকেও মুক্তি দেয়া হবে।
ঙ. উভয়পক্ষের মধ্যে সম্মত তালিকার ভিত্তিতে বিদেশে বা গাজায় বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে।
৪. ফিলাডেলফি করিডোর
ক. সংযুক্ত মানচিত্র ও উভয়পক্ষের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে ইসরাইল প্রথম পর্যায়ে করিডোর এলাকায় ধীরে ধীরে সৈন্য হ্রাস করবে।
খ. প্রথম পর্যায়ের শেষ বন্দী মুক্তির পর, ৪২তম দিনে ইসরাইলি বাহিনী তাদের প্রত্যাহার শুরু করে ৫০তম দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন করবে।
৫. রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং
ক. সকল নারী (বেসামরিক ও সৈন্য) মুক্তির পর রাফাহ ক্রসিং বেসামরিক নাগরিকদের স্থানান্তর এবং আহতদের জন্য প্রস্তুত থাকবে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সাথে সাথেই ইসরাইল ক্রসিংয়ের প্রস্তুতির জন্য কাজ করবে।
খ. সংযুক্ত মানচিত্র অনুসারে রাফাহ ক্রসিংয়ের চারপাশে ইসরাইলি বাহিনী পুনরায় মোতায়েন করা হবে।
গ. প্রতিদিন ৫০ জন আহত সামরিক ব্যক্তিকে (৩) জন ব্যক্তির সাথে পারাপারের অনুমতি দেয়া হবে। প্রতিটি পারাপারের জন্য ইসরাইল ও মিসরের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
ঘ. মিসরের সাথে আগস্ট ২০২৪ সালের আলোচনার ভিত্তিতে ক্রসিংটি পরিচালিত হবে।
৬. অসুস্থ ও আহত বেসামরিক নাগরিকদের বের করে আনা
২৭ মে ২০২৪ সালের চুক্তির ১২ ধারা অনুসারে, সকল অসুস্থ ও আহত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে পার হতে দেয়া হবে।
৭. নিরস্ত্র অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তন (নেটজারিম করিডোর)
ক. ২৭ মে ২০২৪ সালের চুক্তির ধারা ৩-ক এবং ৩-খ এর উপর ভিত্তি করে নিরস্ত্র অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তনে সম্মত হয়েছে।
খ. ৭ম দিনে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত পথচারীদের অস্ত্র বহন না করে এবং রশিদ স্ট্রিট দিয়ে অনুসন্ধান ছাড়াই উত্তর দিকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। ২২তম দিনে তাদের সালাহুদ্দিন স্ট্রিট থেকেও অনুসন্ধান ছাড়াই উত্তর দিকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে।
গ. ৭ম দিনে যানবাহন ও পথচারী ছাড়া অন্য যেকোনো যানবাহনকে অনুসন্ধানের পর নেটজারিম করিডোরের উত্তরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। যানবাহন অনুসন্ধান একটি বেসরকারি কোম্পানি করবে। একটি সম্মত প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে মধ্যস্থতাকারীরা ইসরাইলি পক্ষের সাথে একমত হয়ে এই বেসরকারি কোম্পানি নির্ধারণ করবে।
৮. মানবিক সহায়তা প্রোটোকল
ক. চুক্তির অধীনে মানবিক সহায়তা প্রক্রিয়াগুলো মধ্যস্থতাকারীদের তত্ত্বাবধানে সম্মত মানবিক প্রোটোকলের অধীনে সম্পন্ন করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা