রসায়নবিদ থেকে হিজবুল্লাহর মহাসচিব, কে এই শেখ নাঈম কাসেম
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৫
লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম সন্ত্রাসবাদবিরোধী সংগ্রামের অগ্রনায়ক জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এবং আবু মাহদি আল-মুহান্দিসের শাহাদতের পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে এক ভাষণে বলেছেন, প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে এবং যেকোনো প্রতিরোধের নেতৃত্বই ঠিক করে কখন, কিভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে, প্রতিরোধের পদ্ধতি কেমন হবে এবং যেসব অস্ত্র রয়েছে সেগুলো কিভাবে ব্যবহার করা হবে।
লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব বলেছেন, কেউ কেউ বলছে যে প্রতিরোধ সংগ্রাম পিছু হটেছে। কিন্তু প্রতিরোধ একটি শক্তিশালী বিশ্বাস, এটি শক্তিশালী হচ্ছে এবং শিকড় আরো গভীরে প্রোথিত হচ্ছে। শেখ নাঈম কাসেমের বক্তব্য বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাই আল ইয়াউম পত্রিকা লিখেছে, নাঈম কাসেমের বক্তৃতায় ইসরাইল মর্মাহত। তার বক্তব্যে স্পষ্ট হিজবুল্লাহ পিছপা হবে না।
কিন্তু কে এই নাঈম কাসেম যিনি সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের পর লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব হয়েছেন?
নাঈম বিন মুহাম্মদ নাঈম কাসেম ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে লেবাননের দক্ষিণে নাবাতিয়া প্রদেশের কাফার ফিলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিবাহিত এবং ছয় সন্তানের জনক (চার পুত্র এবং দুই কন্যা)। কিশোর বয়স থেকেই ইসলাম ধর্মের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল। নিয়মিত ইসলামী বই অধ্যয়ন করতেন। তার বয়স যখন ১৮ বছর, তিনি অন্যদের জন্য ধর্মীয় ক্লাসের আয়োজন করেন এবং মসজিদে প্রতি সপ্তাহে শিশু ও কিশোরদেরকে ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা দিতেন।
কেবল ইসলামি জ্ঞান ও শিক্ষার প্রতিই শেখ নাঈম কাসেমের আগ্রহ ছিল এমন নয়, রসায়ন শাস্ত্রের প্রতিও তিনি আগ্রহী ছিলেন। নাঈম কাসেম লেবানিজ ইউনিভার্সিটি থেকে ফরাসি ভাষায় রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৭৭ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ছয় বছর সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি নাঈম কাসেম লেবাননের ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্রেও ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন।
১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে নাঈম কাসেম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসলামী চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটাতে ‘লেবানন মুসলিম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ নামক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন।
১৯৭৪ সালে ইমাম মুসা সাদরের মাধ্যমে আমাল আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর তিনি এই আন্দোলনের সামরিক শাখা ‘নিপীড়িতদের আন্দোলন’-এ যোগ দেন এবং দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হন।
১৯৮২ সালে ইসলামী কমিটিগুলোর বৈঠকের পর লেবাননে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যারা এটি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন তাদের একজন হলেন নাঈম কাসেম।
নাঈম কাসেম ১৯৯১ সালে হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলের পদে নির্বাচিত হন এবং সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের আগ পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ বৈরুতের দাহিয়া এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন।
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর নিহত হওয়ার প্রায় এক মাস পর ২৯ অক্টোবর লেবাননের হিজবুল্লাহ নাঈম কাসেমকে সংগঠনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত করে।
শেখ নাঈম কাসেম আমাল আন্দোলন ও হিজবুল্লাহ- এই দুই সংগঠনের সাথেই কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি লেবাননের আমাল আন্দোলন এবং হিজবুল্লাহ- এই দুই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের একজন। সাংগঠনিক দিক থেকে বিবেচনা করলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। হিজবুল্লাহর কাঠামোগত এবং সামরিক শক্তিকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে তার এই বৈশিষ্ট্য ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। লেবাননের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে হিজবুল্লাহর সম্পর্ক উন্নয়নেও নাঈম কাসেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
শেখ নাঈম কাসেম লেখালেখিতে পারদর্শী। এ পর্যন্ত বহু বই লিখেছেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খামেনী রহ. সম্পর্কে যেমন বই লিখেছেন, তেমনি ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেয়ী নিয়েও বই লিখেছেন। লেবাননের হিজবুল্লাহর নীতি-আদর্শ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তার লেখা বই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং প্রকাশিত হয়েছে। ইমাম হুসাইন রা:-এর ছেলে ইমাম জয়নুল আবেদিনের রিসালাতুল হুকুক বইয়ের ব্যাখ্যা নিয়ে তিনি বই রচনা করেছেন।
তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে লিখা হয়েছে, শেখ নাঈম কাসেম বেলায়াতে ফকিহ সংক্রান্ত রাজনৈতিক-ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাস করেন এবং আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস রাখেন।
শেখ নাঈম কাসেম বলেছেন, শহীদ হাসান নাসরুল্লাহর পথ পুরোপুরি অনুসরণ করে যাবেন। কাজেই দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতি থেকে এক চুলও সরে যায়নি হিজবুল্লাহ এবং ভবিষ্যতেও তারা এই নীতিতে অটল থাকবে। শেখ নাঈম কাসেমের ব্যক্তিত্ব এবং ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেবাননের হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব পদে থাকার অভিজ্ঞতা সংগঠন পরিচালনার কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। একইসাথে চারটি যুদ্ধ অর্থাৎ ১৯৯৩, ১৯৯৬, ২০০০ এবং ২০০৬ সালের যুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কারণে শেখ নাঈম কাসেম সহজেই যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। এর ফলে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর পথ দক্ষতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন শেখ নাঈম কাসেম।
সূত্র : পার্সটুডে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা