হামাস নেতা হানিয়েকে তেহরানে হত্যার কথা স্বীকার করল ইসরায়েল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৫
প্রথমবারের মতো হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করলেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। জুলাইয়ে ইরানের রাজধানী তেহরানে তাকে হত্যা করা হয়।
ইসরাইল কাটজ এক ভাষণে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীদের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে এ মন্তব্য করেছেন। হাউছিরা ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
হানিয়ে তখন ইরানের রাজধানীতে একটি ভবনে হামলায় নিহত হয়েছিলেন। হামলাটি ইসরাইলই করেছিল বলে ওই সময় ব্যাপকভাবে ধারণা করা হতো।
অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।
তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে তিনি কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি।
সিনিয়র এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে আলোচনা ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এখনো বাকি আছে।
ওদিকে, কাটজ তার ভাষণে আরো বলেছেন যে ইসরাইল হাউছিদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর আক্রমণ’ করবে এবং এর নেতৃত্বের ‘শিরোচ্ছেদ’ করবে।
চলতি বছর নিহত হিজবুল্লাহ ও হামাস নেতাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেমনটি আমরা হানিয়ে, (ইয়াহিয়া) সিনওয়ার এবং (হাসান) নাসরাল্লাহকে করেছিলাম তেহরান, গাজা ও লেবাননে। সেটিই আমরা করব হোডেইডা এবং সানায়।’
হানিয়েকে হামাসের সর্বময় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতিবিষয়ক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।
তার হত্যাকাণ্ডের পর হামাস ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে নতুন নেতা হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার অন্যতম রূপকার।
গত অক্টোবরে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে তিনিও নিহত হন। এরপর থেকে হামাস এখনো নতুন নেতা বেছে নেয়ার প্রক্রিয়ায় আছে।
অন্যদিকে, হাসান নাসরাল্লাহ ছিলেন লেবাননে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর নেতা। সেপ্টেম্বরে বৈরুতে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে তিনি নিহত হন। ইসরাইলের সাথে সীমান্তে প্রতিনিয়তই লড়াই করছিল হিজবুল্লাহ।
লেবাননের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল হাউছিদের নিয়ন্ত্রণে। ইসরাইজ গাজায় সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে তারা লোহিত সাগরে ইসরাইলি ও আন্তর্জাতিক জাহাজগুলোতে হামলা শুরু করেছিল। তারা গাজা যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা ভূপাতিত করতে পারেনি এবং এটি তেল আবিবের একটি পার্কে আঘাত করেছে।
হাউছিদের এক মুখপাত্র বলেছেন, হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে তারা একটি সামরিক স্থাপনায় আক্রমণ করেছে।
গত সপ্তাহে ইসরাইল হাউছিদের সামরিক স্থাপনায় হামলা করেছিলে। ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বন্দর ও জ্বালানি অবকাঠামোতে আক্রমণ করে তারা।
আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হুথিদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছে।
হামাস গত বছর অক্টোবরে ইসরাইলে হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরাইলিকে হত্যা এবং ২৫১ জন পণবন্দী করে নিয়ে যায়।
জবাবে হামাসকে ধ্বংস করতে সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই অভিযানে গাজায় ৪৫ হাজার ৩১৭ মানুষ নিহত হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৫৮ জনও আছেন। আল-মাওয়াসি এলাকায় তিনটি পৃথক হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছে।
এটি ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ইসরাইল বলছে, তারা একজন হামাস যোদ্ধাকে টার্গেট করেছিল।
সোমবার ইসরাইল জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে তাদের তিন সৈন্য নিহত হয়েছে।
ত্রাণ ও অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করেছে।
রোববার অক্সফাম জানিয়েছে, গত আড়াই মাসে গাজার উত্তরাঞ্চলে ১২ ট্রাক খাদ্য ও পানি বিতরণ করেছে তারা।
তারা ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত বিলম্ব ও পদ্ধতিগত বাধা’ তৈরির অভিযোগ এনেছে।
অক্সফাম বলেছে, একটি স্কুলে খাদ্য ও পানি বিতরণ করা হয়েছিল, যেখানে লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে।
ইসরাইল কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই রিপোর্টে গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলের ব্যাপক মানবিক প্রচেষ্টাকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ও ভুলভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছে।
ইসরাইল বলেছে খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্য উপকরণ বেইত হানৌন, বেইত লাহিয়া ও জাবালিয়াসহ গাজার উত্তরাঞ্চলে দেয়া হয়েছে।
এসব এলাকায় কয়েক মাস ধরে সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইসরাইল। তাদের দাবি, হামাস সেখানে পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল।
এর আগে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের যথেষ্ট পরিমাণ পানি পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে ‘গণহত্যার মতো কার্যক্রম’ চালানোর অভিযোগ এনেছিল।
তবে এসব রিপোর্ট ‘পুরোপুরি অসত্য ও মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি’ করা উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছিল ইসরাইল।
সূত্র : বিবিসি