১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সিরিয়া নিয়ে আশা ও শঙ্কা ইসরাইলের

বিধ্বস্ত সিরিয়ার একটি দৃশ্য - ছবি : ডয়চে ভেলে

বাশার আল আসাদের শাসনের অবসানের পর ইসরাইল এখন সিরিয়ার পরবর্তী পরিস্থিতিতে মনোনিবেশ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার যে পরিবর্তনই হোক, তাতে ইসরাইলের সামনে সুযোগ এবং ঝুঁকি দু’টিই রয়েছে।

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের শাসনের অবসানকে স্বাগত জানিয়েও শতাধিক জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তাদের সৈন্যরা সিরিয়ার দিকে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমগুলো ধারণা করছে।

গত সপ্তাহে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান সিরিয়ায় ঢুকে শতাধিক জায়গায় আক্রমণ করেছে বলে পর্যবেক্ষক গ্রুপগুলো জানিয়েছে।

মূলত সিরিয়ার সামরিক পরিকাঠামোর উপরই আক্রমণ করেছে ইসরাইল। হামলার লক্ষ্য ছিল বিমানঘাঁটি, রকেট নিয়ে গবেষণা কেন্দ্রগুলো এবং ‘যে সব জায়গায় রাসায়নিক অস্ত্র মজুত’ রাখা হতো।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের একাধিক জায়গায়ও হামলা করেছে ইসরাইলের যুদ্ধবিমান।

ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার জেরুসালেমে বলেছেন, ‘আমরা কৌশলগত অস্ত্র ব্যবস্থার উপর আঘাত হানতে চেয়েছি। সিরিয়ায় যে রাসায়নিক অস্ত্র, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট আছে, তা ধ্বংস করতে চেয়েছি। আমরা চাই, এই সব অস্ত্র যেন ‘কট্টরপন্থীদের’ হাতে না পড়ে।’

এরপর ইসরাইলের সৈনারা ইসরাইল ও সিরিয়ার মধ্যকার বাফার জোনে প্রবেশ করেছে। ওই জায়গায় জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রহরার কাজে নিযুক্ত।

তবে প্রতিবেদন বলছে, ইসরাইলের সৈন্যরা দামেস্ক থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের ওই বাফার জোন অতিক্রম করে গেছে। সেটা সত্যি হলে, ১৯৭৪ সালের পর ইসরাইলের সৈন্যরা সিরিয়ার এতটা ভেতরে ঢুকতে পেরেছে।

মঙ্গলবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলী বাহিনী দক্ষিণপশ্চিম দামেস্ক থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে আছে। তবে ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র এটা অস্বীকার করেছেন।

ইসরাইলের সৈন্যরা সিরিয়ায়
১৯৬৭ সালে ইসরাইল গোলান মালভূমি দখল করে এবং ১৯৮১ সালে তারা এই অঞ্চল নিজেদের সাথে যুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশই গোলান মালভূমিকে সিরিয়ার অংশ বলে মনে করে। তারা মনে করে, ইসরাইল বেআইনিভাবে তা দখল করে রেখেছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর ব্যাখ্যা, ‘আসাদের প্রতি অনুগত সিরিয়ার সৈন্যবাহিনী এই এলাকা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল। তাই ইসরাইল এই কাজ করতে বাধ্য হয়।’

নেতানিয়াহুর দাবি, ‘ইসরাইলের সৈন্যরা সাময়িকভাবে সেখানে আছে। নতুন কোনো ব্যবস্থা হলে তারা সরে আসবে।‘

জেরুসালেমে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা সিরিয়ার নতুন শাসকদের সাথে শান্তিপূর্ণ ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক চাই। কিন্তু ইসরাইলকে রক্ষা করার জন্য দেশের সীমান্ত রক্ষা করার জন্য আমরা যা দরকার সেটাই করব।’

তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, গোলান চিরকাল ইসরাইলের অংশ হয়ে থাকবে।

ইসরাইলের সমালোচনা
ইসরাইল সিরিয়ার ভেতরে ঢুকে পড়ায় সমালোচনা ক্রমশ বাড়ছে। জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা ১৯৭৪ সালের চুক্তি লঙ্ঘন করছে।

ইসরাইলের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরাইলের এই সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই সাময়িক।

জর্ডনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই ঘটনার নিন্দা করেছেন।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইসরাইল এভাবে সিরিয়ায় নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব, অখণ্ডতার উপর আঘাত করছে।’

তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিয়া বিশেষজ্ঞ ও ভাইস রেক্টর ইয়াল জিসের বলেছেন, ‘ইসরাইল যদি সাময়িকভাবে সিরিয়ায় ঢোকে, তাহলে তাদের উদ্দেশ্য কী? তারা সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র কেন ধ্বংস করতে চাইছে, সেটা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু ইসরাইলের সৈন্যরা সিরিয়ায় ঢুকছে। সিরিয়ার মনোভাব তো এখন ইসরাইলের বিরোধী নয়, তারা তো ইসরাইলের বিরুদ্ধে কিছু করেনি, কেউ ইসরাইলের নামও মুখে আনেনি। তাহলে তারা কেন সৈন্য পাঠাবে?’

এরপর কী
ইসরাইলের সাংবাদিক নাদাফ ইয়েল লিখেছেন, ‘যে গতিতে সিরিয়ায় পুরো ঘটনা ঘটেছে, তাতে ইসরাইলের গোয়েন্দারাও অবাক হয়ে গেছেন।’

তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিয়া বিশেষজ্ঞ জিসের বলেন, ‘এই ঘটনা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। বিশেষ করে বাশার আল আসাদ, ইরানের শীর্ষনেতা, রাশিয়া এবং হিজবুল্লাকেও।’

তার মতে, ‘ইসরাইলের কাছে ‘ইতিবাচক’ দিক হলো, আসাদ ছিলেন ইরান ও হিজবুল্লার মধ্যে প্রধান সংযোগকারী। এখন ইরানের কাছে সিরিয়ার ব্যাক আপ থাকল না। এটা একটা নতুন ঘটনা।’

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement