০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

সিরিয়ার যুদ্ধ : কোন বাহিনীর কী ভূমিকা?

আলেপ্পোর কাছে খান সেইখুন শহরের বাইরে সিরিয় সেনাবাহিনীর একটি পরিত্যক্ত ট্যাঙ্কের পাশ দিয়ে একদল সশস্ত্র বিদ্রোহীকে ট্রাকে করে যেতে দেখা যাচ্ছে - ছবি : সংগৃহীত

সিরিয়ার বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশের সবচেয়ে বড় শহর এবং আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ও শহর দখল করেছে। এর ফলে দীর্ঘ দিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধ আবার বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই যুদ্ধে ভূমিকা রাখছে এমন কয়েকটি দেশ এবং গোষ্ঠী নিজেদের সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকার মাঝে বিদ্রোহীদের এই চমক লাগানো অভিযান আসে। এর ফলে ২০২০ সালের যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।

বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা সীমিত করতে রাশিয়া এবং সিরিয়ার বাহিনী ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। এর ফলে বিপুলসংখ্যক লোক হতাহত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে অভ্যুত্থানের চেষ্টার পর থেকে সিরিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়। সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইরানসহ পাঁচটি বিদেশী শক্তির সামরিক উপস্থিতি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীসহ আসাদ-বিরোধী গোষ্ঠীগুলো দেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। ইসরাইল গোলান মালভূমি নিয়ন্ত্রণ করে, যেটা তারা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে সিরিয়া থেকে দখল করে।

এখানে দেখা যাক সিরিয়ার গৃহ যুদ্ধে মূল ভূমিকা পালনকারী কারা

সিরিয়ার সরকারী বাহিনী, রাশিয়া এবং ইরান-সমর্থিত

রাশিয়া এবং ইরানের পাঠানো বাহিনীর বদৌলতে সিরিয়ার সরকারী বাহিনী দীর্ঘ দিন ধরে দেশের বিশাল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রেসিডেন্ট আসাদের সেনাবাহিনী দেশের বড় জনবহুল কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে রয়েছে রাজধানী দামেস্ক এবং দেশের মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ এবং পূর্বের শহরগুলো।

সিরিয়ান সরকার ২০১৬ সালে আলেপ্পো পুনরুদ্ধার করলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শহরটি হারানো তাদের জন্য বড় ধাক্কা।

যুদ্ধের পুরো সময় ইরানের সামরিক উপদেষ্টা এবং তাদের সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীগুলো আসাদের বাহিনীকে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী, যাদের ইরান সহায়তা দেয়, ইসরাইলের সাথে সাম্প্রতিক যুদ্ধে দুর্বল হয়েছে। ইরানের মনোযোগও ওই যুদ্ধের দিকেই আকৃষ্ট হয়।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) ইরান-সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়া বাহিনী সরকারি বাহিনীর পাল্টা হামলা সমর্থন করতে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী প্রেসিডেন্ট আসাদকে ভূমধ্যসাগর উপকূল থেকে সাহায্য করেছে। এখানেই প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে তাদের একমাত্র নৌঘাঁটি আছে। সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশের হেমেইমিমে রাশিয়ার বড় বিমান ঘাঁটি আছে। এখানে শত শত রুশ সৈন্য অবস্থান নিচ্ছে। তবে রাশিয়ার মনোযোগ চলে গেছে ইউক্রেনের যুদ্ধে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী, মূলত তুরস্ক-সমর্থিত

বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) সরকার-বিরোধী বাহিনীগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা দীর্ঘ দিন সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা হিসেবে কাজ করেছে। জাতিসঙ্ঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ এইচটিএসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে।

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা এইচটিএস নিয়ন্ত্রণ করে এবং দৈনন্দিন কাজ চালানোর জন্য তারা ২০১৭ সালে একটি 'পরিত্রাণের সরকার' গঠন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের নেতা আবু মোহাম্মেদ আল-জোলানি আল-কায়েদার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তিনি কট্টরপন্থী কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে এবং ধর্মীয় সহনশীলতা অনুসরণ করার অঙ্গিকার করে গোষ্ঠীর ভাবমূর্তি বদলানোর চেষ্টা করছেন।

অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে নুরেদ্দিন এল-যিঙ্কি। তারা এইচটিএস-এর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট ছিল।

সিরিয়া ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ) নামক একটি তুরস্ক-সমর্থিত গোষ্ঠী উত্তরের শহর তেল রিফাতসহ বেশ কিছু এলাকায় হামলা চালিয়েছে। এসব এলাকা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সের (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রণে ছিল।

সিরিয়ার সরকার-বিরোধী কর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির চীনা উগ্রবাদী এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা চেচেন যোদ্ধারা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে লড়াই-এ অংশ গ্রহণ করেছে।

সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি-নেতৃত্বাধীন জোট সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ) সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

এসডিএফ ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সাথে লড়াই করে পূর্ব সিরিয়ায় তাদের হাতে থাকা শেষ এলাকাগুলো দখল করে। উগ্রবাদী আইসিস-এর পুনরুত্থান যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ৯০০ মত আমেরিকান সৈন্য মোতায়েন আছে।

আলেপ্পোর কিছু এলাকা এসডিএফ এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে যদিও সেগুলো বিদ্রোহীরা ঘিরে রেখেছে। বিরোধী কর্মীরা বলেছে, বিদ্রোহীরা এসডিএফ যোদ্ধাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলে যেতে দিতে রাজি, কিন্তু কুর্দি-নেতৃত্বাধীন বাহিনী সেটা করবে কিনা, তা পরিষ্কার নয়।

তুরস্ক মনে করে, এসডিএফ-এর মূল কুর্দি গোষ্ঠী নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকের সাথে সম্পৃক্ত। তুরস্ক এবং তার মিত্ররা পিকেকেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে।
সূত্র : ভিওএ


আরো সংবাদ



premium cement
শিবচরে ট্রেনের ধাক্কায় নারী নিহত, ১১ মাসের শিশুর অঙ্গহানি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে কোনো ছাড় নয় : জামায়াতের আমির আলিফের খুনিরা যত ক্ষমতাশালী হোক তাদের বিচার হবেই : অ্যাটর্নি জেনারেল দিনাজপুরে সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রোপাগান্ডায় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে কেউ আর ষড়যন্ত্র করার সাহস পাবে না : খন্দকার মোশাররফ ‘কোনো ধরনের উস্কানিতে জনগণ পা দিবে না’ ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ, সমাবেশের প্রস্তাব রোহিতের অবসরের পর যে হবেন ভারতের টেস্ট অধিনায়ক ‘দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষায় জামায়াত ঐক্যবদ্ধ’ টেস্টের একাদশ ঘোষণা করল ইংল্যান্ড

সকল