যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে লেবাননে ইসরাইলি হামলা, নিহত ৯
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩
যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক সপ্তাহ না যেতেই আবারো লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের দু’টি গ্রামে চালানো এই হামলায় কমপক্ষে নয়জন নিহত হয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অভিযোগ করেছে, যদিও চুক্তি লঙ্ঘন করে হিজবুল্লাহই প্রথম ইসরাইলি সেনা চৌকি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
তারা জানায়, ওই হামলার জবাব হিসেবে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির কিছু অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে।
আইডিএফ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর রাখতেই এটি করতে হয়েছে।
হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্য ইসরাইলের এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছে যে, আবারো লেবাননে হামলা চালানোর মাধ্যমেই ইসরাইলই প্রথম যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
ওই হামলায় যে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটির জবাবে ‘প্রতিরক্ষামূলক সতর্কতা’ হিসেবেই ইসরাইলি একটি সেনা চৌকি লক্ষ্য করে মর্টার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হিজবুল্লাহ।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, ইসরাইলের মাউন্ট ডোভ এলাকায় চালানো হিজবুল্লাহর ওই হামলায় যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
হিজবুল্লাহর হামলাকে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এ হামলার ঘটনার পর এক প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইল ‘শক্তভাবে’ এই হামলার জবাব দিবে।
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সম্প্রতি তারা সরাসরি যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে।
এ অবস্থার অবসানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় গত ২৭ নভেম্বর দু’পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
যদিও গত সপ্তাহে যখন যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, হিজবুল্লাহ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে সেটার জবাবে পাল্টা হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না তার দেশ।
এরপর সোমবার পাল্টা-পাল্টি হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে আবারো সংঘাতমত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
চুক্তিতে কী বলা হয়েছিল?
গত ২৭ নভেম্বর যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, সেটির মাধ্যমে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যকার সংঘাতের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে আশা করা হয়েছিল।
চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে, লেবাননে বেসামরিক, সামরিক বা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ইসরাইল আক্রমণাত্মক কোনো সামরিক অভিযান চালাবে না।
এর বিপরীতে হিজবুল্লাহও ইসরাইলে কোনো হামলা চালাতে পারবে না। এমনকি লেবাননের অন্য কোনো সশস্ত্রগোষ্ঠীও যদি ইসরাইলে হামলা চালাতে চায়, সেখানেও বাধা সৃষ্টি করবে হিজবুল্লাহ।
চুক্তিতে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে নিজেদের সশস্ত্র উপস্থিতি তুলে নিতে হিজবুল্লাহকে ৬০ দিন সময় দেয়া হয়েছে।
একই সময়ের মধ্যে ইসরাইলও লেবানন থেকে তাদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল।
চুক্তি কার্যকরের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স বিদ্যমান ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় যোগ দেবে বলে শুরু থেকেই জানা যাচ্ছিলো।
এ ব্যবস্থায় বর্তমানে লেবাননের সামরিক বাহিনী, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এবং লেবাননে জাতিসঙ্ঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউনিফিল) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ উঠলে পক্ষগুলো সেটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাঠাবে।
লেবাননের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা থাকবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ফরাসি বাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং যোগাযোগের মাধ্যমে লেবাননের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করবে।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং অন্য দেশগুলো লেবাননের সামরিক বাহিনীকে একটি সামরিক কারিগরি কমিটি বা এমটিসির মাধ্যমে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা করবে।
হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করার সময় নিজের ভাষণে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রধানত তিনটি কারণ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন।
সেগুলোর একটি ছিল ইরানের হুমকির প্রতি মনোযোগ দেয়া। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও তিনি তার ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন যে, ইসরাইল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধান অংশ এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধ্বংস করেছে।
হিজবুল্লাহকে সবসময় ইরানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান ঢাল হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের একটি বড় অংশ ধ্বংস হওয়ার ফলে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সামরিক ভারসাম্য ইসরাইলের পক্ষে চলে গেছে।
দ্বিতীয় কারণটি হলো ইসরাইলি সেনাদের ক্লান্তি। এই শব্দটি সরাসরি উচ্চারণ না করলেও তিনি বলেন যে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর একটি বিরতি নেয়া এবং পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করাটা প্রয়োজন।
ইসরাইলি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী দুই দিকে দু’টি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না।
তবে এখন লেবাননে যদি সংঘাত শেষ হয়, তাহলে গাজায় আরো বেশি ইসরাইলি বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে যুদ্ধের কোনো সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।
আর তৃতীয় কারণ ছিল হামাসকে বিচ্ছিন্ন করা। হিজবুল্লাহকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয়ার অর্থ হলো হামাসের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া। হামাস বরাবরই মনে করেছে যে ইরানের ‘এক্সিস অব রেজিসট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষ’-এর বাকি সদস্যরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়বে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেন যে, ইসরাইল তার বন্দী নাগরিকদের মুক্ত করার জন্যই যুদ্ধ করছে। যদিও তার এই দাবি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
গাজায় এখনো আটক থাকা ইসরাইলি বন্দীদের পরিবার ও আত্মীয়রা এখনো নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করে চলেছেন।
তারা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের প্রধানমন্ত্রী গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করেছেন এবং বন্দীদের মুক্তি নিয়ে চুক্তি করার ক্ষেত্রে অবহেলা করেছেন।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা