আরো অগ্রসর হচ্ছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা, রাশিয়ার বিমান হামলা অব্যাহত
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস, এসওএইচআর বলছে, সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখলের পর আরো অগ্রসর হয়েছে এবং এর মধ্যেই রোববার তাদের লক্ষ্য করে অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
আলেপ্পোর একটি হাসপাতালে বিমান হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে।
এছাড়া ইদলিবের উত্তর-পশ্চিমে এক হামলায় আরো আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে এসওএইচআর।
ইদলিবের গ্রামীণ এলাকা ছাড়াও হামার যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীরা নিয়েছে সেখানেও যুদ্ধবিমান হামলা করেছে।
পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে বলছে বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর এবারই প্রথম সিরিয়ার সরকার আলেপ্পোর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাল।
বিদ্রোহীদের এই বিস্ময়কর নতুন অভিযান শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটাই সেখানে বড় ধরনের লড়াই।
বিদ্রোহীদের অভিযানের নেতৃত্বে আছে হায়াত তাহরির আল-শাম এবং তাদের সাথে যোগসূত্র আছে এইচটিএস তুরস্ক-সমর্থিত এমন কয়েকটি উপদল।
এখনো পর্যন্ত ২০ জন বেসামরিক নাগরিকসহ তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে এসওএইচআর।
আবার, ২০১৬ সালের পর এবারই প্রথম রুশ যুদ্ধবিমান আলেপ্পোতে হামলা চালাল। আলেপ্পো সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল, তখন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে রাশিয়ার বিমান বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
এসওএইচআর জানিয়েছে, রোববার ইদলিবের একটি শরণার্থী শিবিরে রাশিয়া বিমান হামলা চালিয়েছে।
উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় এই শহরে এইচটিএস এখন নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আছে।
এছাড়া আলেপ্পো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালেও হামলা হয়েছে। শহরের অন্য অংশগুলোকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
বিরোধী যোদ্ধারা সেখানকার সবগুলো শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। শুধু কিছু এলাকা বাকি আছে, যেগুলো কুর্দি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে।
পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য শহর থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
এদিকে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো থেকে এখন দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম শহর হামার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকারি বাহিনী সৈন্য, রকেট লঞ্চার ও ভারী সামরিক সরঞ্জামাদিসহ অবস্থান জোরদার করেছে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘রাশিয়া ও সিরিয়ার যৌথ যুদ্ধবিমান বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট হামলা করছে এবং কয়েক ডজন আহত ও নিহত হয়েছে।’
তারা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ থেকে কিছু শহর পুনর্দখল ও বিদ্রোহীদের বাধা দেয়ার দাবি করেছে।
সিরিয়ায় জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত জেইর ও পেডারসন সতর্ক করে বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে।
তিনি সিরিয়ায় ‘সংঘাত ব্যবস্থাপনার’ পরিবর্তে ‘সংঘাত সমাধানের’ জন্য বারবার সতর্ক করে আসছিলেন।
সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা’ উল্লেখ করে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার প্রেসিডেন্ট আসাদ ‘সব সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের মোকাবেলা করে সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও ভূখণ্ডগত সংহতি রক্ষার অঙ্গীকার করেন’।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘সন্ত্রাসীদের আক্রমণ যতই জোরাল হোক না কেন আমাদের সহযোগী ও বন্ধুদের সহায়তায় তাদের পরাজিত ও নিশ্চিহ্ন করা কোনো ব্যাপারই নয়। সেই সক্ষমতা আমাদের দেশের আছে।’
প্রেসিডেন্ট আসাদের দীর্ঘদিনের মিত্র ইরানের একজন সিনিয়র কূটনীতিক সিরিয়ার সরকার ও সামরিক বাহিনীর প্রতি দৃঢ় সমর্থনের কথা উল্লেখ করেছেন।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগাছি অভিযানের বিষয়ে আলোচনার জন্য দামেস্ক সফরের আগে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন।
২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। আসাদ সরকার তখন গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক অভিযান শুরু করলে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়।
তবে ২০২০ সালের যুদ্ধবিরতির পর থেকে সংঘাত প্রায় বন্ধই ছিল। যদিও বিরোধী বাহিনীগুলো দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব শহর এবং ওই প্রদেশের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল।
আলেপ্পো শহর থেকে ইদলিবের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। ২০১৬ সালে সরকারি বাহিনীর হাতে পতনের আগ পর্যন্ত এটি ছিল বিদ্রোহীদের একটি শক্ত ঘাঁটি।
এবার হায়াত তাহরির আল-শামস (এইচটিএস) এবং এর কয়েকটি সহযোগী গ্রুপ আলেপ্পো আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটি তুরস্ক-সমর্থিত একটি গোষ্ঠী।
এইচটিএসকে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেয়া সবচেয়ে কার্যকরী বলে মনে করা হয়। তারা এর মধ্যেই ইদলিব নিয়ন্ত্রণ করছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা