১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে’ জাতিসঙ্ঘ পরমাণু প্রধান ইরানে

‘কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে’ জাতিসঙ্ঘ পরমাণু প্রধান ইরানে - ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসি ইরানের শীর্ষ কূটনীতিকের সাথে পরমাণুবিষয়ক জরুরি আলোচনার জন্য দেখা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার এই সাক্ষাত হলো।

হোয়াইট হাউসে তার প্রথম মেয়াদের সময়ে ট্রাম্প একটি নীতির প্রবক্তা ছিলেন যা 'সর্বোচ্চ চাপ' হিসেবে অভিহিত যাতে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ইরানের উপর ঢালাও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এটি ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তির অধীনে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

বুধবার রাতে গ্রসি তেহরানে গিয়ে পৌঁছান। আশা করা হচ্ছে তিনি সেখানে, 'সে দেশের পারমাণবিক ও রাজনৈতিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবেন' বলে জানিয়েছে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাথে তার বৈঠককে গ্রসি এক্সে দেয়া একটি পোস্টে অপরিহার্য বলে বর্ণনা করেন। ২০১৫ সালে যে চুক্তি হয় তার প্রধান আলোচক ছিলেন আরাঘচি।

তার তরফে আরাঘচি বলেন, বৈঠকটি ছিল 'গুরুত্বপূর্ণ ও সহজবোধ্য' এবং পারমাণবিক বিস্তার রোধ চুক্তির প্রতি নতুন করে ইরানের প্রতিশ্রুতির কথা বলেন।

তিনি তার পোস্টে বলেন, 'আমরা সাহস ও সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যেতে সম্মত হই। ইরান কখনই তার শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে আলোচনা টেবিল থেকে সরে যায়নি।'

আরাঘচি বলেন, ইরান 'জাতীয় স্বার্থে' এবং 'অপরিহার্য অধিকারের' উপর ভিত্তি করে 'আলোচনায় ইচ্ছুক।' তবে 'কোনো রকম চাপ বা হুমকির মুখে আপস করতে প্রস্তত' নয়।

গ্রসি ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামির সাথেও দেখা করেছেন বলে তাসনিম বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।

পরে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গ্রসি এ বছর এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইরান সফরে গেলেন। তবে ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হবার পর এটি ছিল তার প্রথম ইরান সফর।

২০১৮ সালের ট্রাম্প একতরফাভাবে ২০১৫ সালের চুক্তি পরিহার করেন। ২০১৫ সালের চুক্তিটি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির উপরে দেয়া বিধি নিষেধের বিনিময়ে ইরানকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। ইরানের পরমাণু কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল অস্ত্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, তবে ইরান এ বিষয়টিকে সব সময়ে অস্বীকার করেছে।

সমাধানের সন্ধানে

পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পরবর্তী বছরে ইরান ক্রমশই তার সেই চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে আসে, যা তাকে ৩.৬৫% -এর ওপরে ইউরেনিয়াম বিশুদ্ধিকরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বলছে ইরান উল্লেখযোগ্যভাবে তার ইউরেনিয়াম বিশুদ্ধিকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৬০%-এ নিয়ে গেছে । আর এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সতর্কবার্তা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ তা ৯০%-এর কাছাকাছি, যা কিনা পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিন্তক গোষ্ঠী ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলী ভায়েজ বলেন, তেহরান ও পশ্চিমি রাজধানীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মতবিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরো খারাপে যাতে না যায় সে জন্য যতটুকু গ্রসি পারেন ততটুকুই তিনি করবেন।

ইরান এই অচলাবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্টকে দোষারোপ করেছে।

বুধবার ইরানের সরকারি মুখপাত্র ফাতেমেহ মহাজেরানি বলেন, 'এই চুক্তি থেকে যে বেরিয়ে আসে সে ইরান নয়, আমেরিকা। এক সময়ে মি. ট্রাম্প সর্বাধিক চাপ প্রয়োগের পথে গিয়েছিলেন এবং দেখলেন যে এই পথ কার্যকর হয়নি।'

গ্রসির এই সফরের মাত্র দিন কয়েক আগে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেন, 'ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে আঘাত হানার জন্য আগেকার যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরো বেশি উন্মুক্ত' হয়ে গেছে ইরান।


ধর্মীয় নির্দেশ

গ্রসি বলেন, যদিও ইরানের কাছে এখন পরমাণু অস্ত্র নেই, তাদের কাছে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে, যা পরিশেষে এই বোমা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।

জুলাই মাসের নির্বাচনে জয়ী ইরানের প্রেসিডেন্ট, যিনি পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের প্ল্যাটফর্মে জয়লাভ করেন, বলেছেন যে তিনি ২০১৫ সালের চুক্তি পুনরায় চালু করতে চান।

তবে পরমাণু চুক্তিকে বাঁচিয়ে রাখার সব ধরণের প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান বার বার ইরানের কাছ থেকে আরো সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের উপর নজরদারি করার যন্ত্রটি ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্ধ করে দিয়েছে এবং কার্যত আইএইএয়ের পরিদর্শকদের সেখানে যেতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সূচনা ১৯৫০ দশকের শেষ দিকে যখন পাশ্চাত্য-সমর্থিত ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলাভির সাথে যুক্তরাষ্ট্র একটি বেসামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে।

১৯৭০ সালে তারা পারমানবিক চুক্তি অনুসমর্থন করে যা স্বাক্ষরদানকারী রাষ্ট্রগুলোকে তাদের পারমাণবিক সামগ্রীর ঘোষণা দিতে হয়, আইএইএ’র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হয়।

কিন্তু ইরান যখন ইসরাইলের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ চালানোর কথা বলছে, তখন তাদের কয়েকজন এমপি সরকারকে তার পারমাণবিক নীতি পূনর্মূল্যায়ন করে আণবিক বোমা তৈরির আহ্বান জানাচ্ছেন।

ইরানের চূড়ান্ত কর্তৃত্বধারী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেইয়ের প্রতি তারা পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তার দীর্ঘ দিনের ফাতোয়া পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র : ভিওএ


আরো সংবাদ



premium cement