ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৪০, আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৭
আইরিশ পার্লামেন্টে ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠীর শাসনকে অপরাধমূলক শাসন হিসেবে অভিহিত করার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়ার পর এই দেশটি দেখিয়েছে যে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিপরীতে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ব্যবস্থা নিতে চাইছে এবং স্বাধীনভাবে ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে চাইছে।
আইরিশ আইনপ্রণেতারা দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন যেখানে ইসরাইলের শাসন নীতিকে একটি অপরাধমূলক শাসন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আইরিশ পার্লামেন্ট এমন সময় এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যখন বিশ্বের চোখের সামনে এখন গাজায় গণহত্যা চলছে।
পার্সটুডের মতে, পালনে বাধ্যবাধকতা নেই এমন ধরনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে আইরিশ সরকারকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক ভ্রমণ এবং কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলা হয়েছে।
এই পরিকল্পনা অনুমোদনের মাধ্যমে আইরিশ আইনপ্রণেতারাও দাবি করেছেন যে এই দেশের সরকার অবিলম্বে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সাথে সামরিক সরঞ্জাম এবং অস্ত্রের ক্ষেত্রে সকল লেনদেন স্থগিত করবে। এছাড়া তেল আবিবে অস্ত্র বহনকারী বিমানের জন্য আকাশসীমা এবং আয়ারল্যান্ডের বিমানবন্দরের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা উচিত বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টের এই পরিকল্পনার অনুমোদন নেয়া হয়েছে যখন আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন এর আগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগের মামলায় যেকোনো সহযোগিতা দেয়ার বিষয়ে ডাবলিনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন।
কিছুদিন আগেই আইরিশ সরকার ঘোষণা করেছে যে তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। আয়ারল্যান্ডের এই পদক্ষেপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাঠামোর বাইরে সংঘটিত হয় যখন এই ইউনিয়নের ইসরাইলি সমর্থকরা এই ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ড এবং স্পেনের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়। এই দু’টি দেশ স্লোভেনিয়া এবং লুক্সেমবার্গের সাথে একত্রে এই মহাদেশে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনকারী আন্দোলন গড়ে তোলে এবং ইউরোপে ইসরাইলি পণ্য বিশেষ করে খাদ্য ও শিল্প পণ্য রফতানি রোধ করার চেষ্টা করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরাইলের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার যার বাণিজ্যের পরিমাণ গত বছর প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে এই বছরের শুরু থেকে আয়ারল্যান্ড, স্পেন এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইসরাইলের মধ্যে অংশীদারিত্ব চুক্তি স্থগিত করার জন্য অনুরোধ করেছে। এটিকে সমর্থন করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে পররাষ্ট্র নীতির দায়িত্বে থাকা জোসেফ বোরেল। কিন্তু ইসরাইলকে সমর্থনকারী দেশগুলো বিশেষ করে অস্ট্রিয়া এবং জার্মানি এই পদক্ষেপে বাধা সৃষ্টি করে।
আয়ারল্যান্ড এবং স্পেন জোর দিয়েছিল যে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এটি করা উচিত যা গত জুলাই জারি করা হয়েছিল এবং পশ্চিমতীরে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। গত কয়েক মাস আগে এই ক্ষেত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিপরীতে গিয়ে একটি ব্যবস্থা নিতে এবং স্বাধীনভাবে ইসরাইলকে বয়কট করতে চাইছে।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করছেন এবং বিশ্বাস করেন যে ইউরোপীয় দেশগুলো এই শাস্তি বাস্তবায়নে সহায়তা করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়ারল্যান্ড সম্ভবত পশ্চিমতীরে ইহুদিবাদী বসতিগুলোতে উৎপাদিত অন্যান্য পণ্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দেশের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাবে না বা নির্দিষ্ট কোনো শাস্তি আরোপ করবে। কারণ ইউনিয়ন চায় না যে নিজেদের মধ্যে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি হোক। অনেকগুলো বিকল্পের মধ্যে একটি হলো গ্রীন লাইনের বাইরে থাকা পশ্চিমতীরে জায়নবাদী বসতিগুলোতে উৎপাদিত খাদ্য এবং পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা যা আয়ারল্যান্ডের অনুমান অনুসারে এই পণ্যগুলোর মূল্য প্রতি বছর এক মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে আল-আকসা তুফান অভিযানের পর গাজায় ইহুদিবাদী শাসকদের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলকে বর্জনের সমর্থনকারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এই অভিযান এবং পরবর্তী গাজা যুদ্ধের ফলে ইসরাইল বয়কট আন্দোলন এবং ফিলিস্তিনিপন্থী সংগঠনগুলোর দীর্ঘমেয়াদি কিছু লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এখন গাজা যুদ্ধের ১৪তম মাসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি এমনকি ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসরাইল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার বিষয়ে ইহুদিবাদী নেতাদের দুঃস্বপ্ন সত্যে পরিণত হয়েছে।
সূত্র : পার্সটুডে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা