‘সমগ্র বিশ্ব এক হলেও ইরানকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৫
ইরানের আইআরজিসির কমান্ডার-ইন-চিফ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে বলেছে, দেশটির সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে যে গাজার প্রতিরোধ যুদ্ধ এমনকি মার্কিন যুদ্ধকামী সরকারকেও পরিবর্তন করতে পারে। ডেমোক্র্যাটরা সর্বশক্তি দিয়ে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আগ্রাসনকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু বাস্তবে আমেরিকার জনগণ তাদের ভোট দেয়নি।
আজ শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে মাশহাদে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি মার্কিন নির্বাচন সম্পর্কে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেছেন।
তিনি দেশের কর্মকর্তা, সামরিক কমান্ডার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বর্তমান পরিস্থিতিতে সত্য-মিথ্যার এই যুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ইসলামী ফ্রন্ট বর্তমানে শত্রুর সবচেয়ে কাছে থেকে এবং বলা যায় শূন্য দূরত্ব থেকে যুদ্ধ করছে। শত্রু সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছে। এই সর্বাত্মক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইসলামী প্রতিরোধ শক্তি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লেবাননের হিজবুল্লাহর অগ্রগতি বিশ্লেষণ করে আইআরজিসি প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেছেন, ইসরাইল হিজবুল্লাহ কমান্ডারদেরকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য পেজার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এছাড়া তারা বহু বছর ধরে লেবাননে ইসলামী প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহর নেটওয়ার্ক আবিষ্কার ও তাদের সদস্যদের অবস্থান চিহ্নিত করে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। আপনি দেখেছেন কিভাবে হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহসহ অনেক আধ্যাত্মিক ও সামরিক কমান্ডারকে তারা শহীদ করেছে।
তিনি আরো বলেছেন, হিজবুল্লাহ শীর্ষ নেতাদেরকে হারানের ফলে অনেকে ভেবেছিল এতবড় ক্ষতির কারণে লেবাননের এই ইসলামী প্রতিরোধ সংগঠন হয়তো আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না এবং ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে, হিজবুল্লাহ কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং ইসরাইলকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে. যাদের পেছনে আমেরিকাসহ পুরো পাশ্চাত্য বিশ্বের সমর্থন রয়েছে।
আইআরজিসি প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি আরো বলেছেন, ইসরাইল যা করার সবই করেছে। লেবাননের শহরগুলোকে নজিরবিহীন অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করেছে। কিন্তু তারা দক্ষিণ লেবাননের কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও দখল করতে পারেনি। অনেক প্রতিরোধ যোদ্ধা এমন এক পরিস্থিতিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে, যখন তারা জানে না যে ইসরাইলি অব্যাহত বিমান হামলার কারণে তাদের পরিবারের ভাগ্যে কী ঘটেছে। কিন্তু হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা আশুরার চেতনাকে ধারণ করে সাহসিকতার সাথে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। ফলে ইসরাইলি সেনারা যুদ্ধে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে।
আইআরজিসি প্রধান বলেন, ‘অপারেশন ট্রু টু অভিযান আমরা যেকোনো সময়ে চালাতে পারতাম। কিন্তু বিলম্বে এ অভিযান চালানো হলেও তা উপযুক্ত সময়ে আমরা চালিয়েছি। আমরা ইসরাইলের আত্মবিশ্বাস গুঁড়িয়ে দিয়েছি এবং ইসরাইলের নিজেদের যোগ্যতা সম্পর্কেও তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছি।
ইসরাইলের ধ্বংসের সময় খুব কাছাকাছি চলে এসেছে উল্লেখ করে সালামি বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আমরা সামান্য শক্তি ব্যবহার করে এটা দেখিয়ে দিয়েছি, যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিরোধ শক্তির পাশে থাকব। যাইহোক, ইসরাইলের দখলে থাকা এসব ভূমি মুসলমানদের, যদিও বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলো দখলদার এই শক্তিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’
সালামি বলেন, ‘ইসরাইলের অর্থনীতির ৯৮ শতাংশ নির্ভর করে সমুদ্র বাণিজ্যের উপর। এখন চিন্তা করুন যদি হিজবুল্লাহর আঘাতে ইসরাইলের সমুদ্র বন্দরগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং ভূমধ্যসাগর অনিরাপদ হয়ে পড়ে, তাহলে তাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। শুধু এই একটি মাত্র দুর্বলতা ইসরাইলকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। আপনারা জেনে রাখুন যে ইসরাইলকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমেরিকার সাহায্য সবসময়ই বিলম্বে আসবে এবং তা অপর্যাপ্ত। ইতিহাস এটাই বলে। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মোকাবেলায় ইসরাইলি সেনারা আজ ক্লান্ত, তাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই তাদের সবকিছু পরিচালনা করছে। অন্যদিকে, ইসলামী ইরান অপরাজেয় এবং সমগ্র বিশ্ব এক হলেও ইরানকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।
সূত্র : পার্সটুডে