১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

নেতানিয়াহুর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

নেতানিয়াহুর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে যা জানা যাচ্ছে - ছবি : সংগৃহীত

লেবাননে ইসরাইলের স্থল অভিযানের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষের পথে এবং একই সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ জড়ানোও দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করলো। বৃহস্পতিবার বৈরুতের বিমান হামলার পর যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জোরালো হচ্ছে। দক্ষিণ লেবাননে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর দ্বিতীয় দিনের মতো হামলা করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী।

সঙ্ঘাত অবসানের আহ্বান সত্ত্বেও নতুন করে হামলা শুরু হয়েছে জাবালিয়ায়। ইসরাইলের সহযোগীরা দেশটিকে গত সপ্তাহের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রেও ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছে।

যদিও সব চাপ উপেক্ষা করে ইসরাইল তার নিজের পথেই চলছে এবং এর কারণ হলো তিনটি- ৭ অক্টোবর, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্র।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে দামেস্ক থেকে রাতের একটি ফ্লাইটে বাগদাদে এসেছিলেন ইরানের জেনারেল কাশেম সোলাইমানি। তিনি ইরানের এলিট বাহিনী কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন। এটি মূলত ইরানের রিভল্যিউশনারী গার্ডের গোপন ইউনিট।

এই গ্রুপটির নামের অর্থ জেরুসালেম এবং তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ইসরাইল। ইরাকে, লেবাননে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও অন্যত্র অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, অর্থ ও সরাসরি ছায়া বাহিনী হিসেবে কাজ করে তারা। ওই সময় সোলাইমানি ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনীর পর ইরানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান মানুষ।

সোলাইমানির গাড়ি বহর বিমানবন্দর ছাড়া মাত্রই ড্রোন থেকে ছোড়া মিসাইলে তিনি নিহত হন।

যদিও ইসরাইল তার প্রতিপক্ষের অবস্থান চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে, তারপরেও ড্রোনটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। ওই হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নন।

পরে এক বক্তৃতায় সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি কখনোই ভুলবেন না যে নেতানিয়াহু তাদের হতাশ করেছিলেন। আরেকটি ইন্টারভিউতে তিনি বলেছেন যে- ওই ঘটনায় তিনি ইসরাইলের আরো সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করেছিলেন এবং অভিযোগ করেছিলেন যে- নেতানিয়াহু চাইছিলেন যে- ‘আমেরিকা তার শেষ সৈন্য পর্যন্ত ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করুক’।

নেতানিয়াহু ওই হত্যাকাণ্ডের প্রশংসা করেছিলেন। তবে ওই সময় এটা মনে করা হতো যে- তার উদ্বেগ ছিল এই যে- ইসরাইল সরাসরি জড়িত হলে এটা সরাসরি ইরান কিংবা লেবানন ও ফিলিস্তিন থেকে ইসরাইলে বড় ধরনের হামলার কারণ হতে পারে।

ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে ছায়া যুদ্ধে জড়িত ছিল কিন্তু উভয়পক্ষই সতর্ক ছিল যাতে তাদের লড়াই একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে। বড় সঙ্ঘাতে জড়িত পড়ার উস্কানি হতে পারে-এমন ভয় থেকেই এটা হতো।

চার বছর পর চলতি বছর এপ্রিলে সেই একই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দামেস্কে ইরানের কূটনৈতিক কম্পাউণ্ডে বোমা হামলার নির্দেশ দিলেন, যেখানে নিহতদের মধ্যে দু’জন ইরানি জেনারেলও ছিলেন।

এরপর জুলাইয়ে বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকর হত্যার অনুমোদন দেন তিনি। কিন্তু বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাতে হতভম্ব হয়েছিলেন বলে বব উডওয়ার্ডের নতুন এক বইয়ে দাবি করা হয়েছে। এখানে হতভম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে- ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী সঙ্ঘাত বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন যা হোয়াইট হাউজ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছিল।

‘ইসরাইল সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী যে ধারণা তৈরি হচ্ছে তা হলো ‘তুমি একটা দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র, একজন দুর্বৃত্ত খেলোয়াড়’। একই প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট চিহ্নিত করলেন ‘অত্যন্ত সতর্ক’ হিসেবে আর তার উত্তরসূরি চিহ্নিত করলেন আগ্রাসী হিসেবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন এবং একটি রাজনৈতিক, সামরিক ও গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিপর্যয়কর দিন। এ দুটি বিষয়ই ইসরাইলকে চলমান যুদ্ধে জড়িত হতে সহায়তা করে।

ইসরাইলে হামাসের হামলার মাত্রা ও ব্যাপকতা ইসরাইলি সমাজ ও এর নিরাপত্তাবোধের ওপর প্রভাব ফেলেছে, যে কারণে এবারের যুদ্ধ সাম্প্রতিক সব সঙ্ঘাতের চেয়ে আলাদা।

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিচ্ছে ইসরাইলকে। আবার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ও গাজার দুর্ভোগ তাদের জন্য অস্বস্তির ও রাজনৈতিকভাবেও ক্ষতিকর।

এপ্রিলে ইসরাইলে ইরানের হামলার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানও সক্রিয় ছিল। এটি একটি পরিষ্কার প্রমাণ যে- ইসরাইলের নিরাপত্তা বিষয়ে তার সবচেয়ে বড় সহযোগী কতটা ভূমিকা রাখে।

এই গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব অনুমোদন ছাড়াই ইসরাইল হিজবুল্লাহর সাথে সঙ্ঘাতে জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

ইসরাইলের দীর্ঘসময়ের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিশ বছরের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছেন যে- উপেক্ষা না করলেও, কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সামলানো যায়।

নেতানিয়াহু জানেন যে- যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে তাদের বর্তমান নির্বাচনের বছরে তাকে তার পথ থেকে সরাতে চাপ দিবে না। (এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে- তিনি আমেরিকার শত্রুর বিরুদ্ধেও লড়ছেন)।

ভিন্ন হিসেব
এটা মনে করা ঠিক হবে ন যে- নেতানিয়াহু ইসরাইলের রাজনৈতিক মূলধারার বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। সেজন্য হিজবুল্লাহর ওপর শক্ত আঘাত হানার চাপ বাড়তে পারে, এমনকি ইরানের বিরুদ্ধেও।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স যখন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছিল তখন ইসরাইলের বিরোধ ও প্রধান বাম ও ডান ধারা থেকে ২১ দিনের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরোধিতা সমালোচনা আসলো।

ইসরাইল যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এর কারণ শুধু এটা নয় যে- তারা আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলায় সক্ষম বরং ৭ অক্টোবরের পর নিজের হুমকিগুলোর প্রতি সহনশীলতার নীতি পাল্টে গেছে।

হিজবুল্লাহ দীর্ঘকাল ধরেই ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের গালিলীতে আগ্রাসন করতে চাইছে। এখন ইসরাইলের মানুষের ঘরে বন্দুকধারীর হামলার অভিজ্ঞতা হলো। সে কারণে তারা মনে করলো এই হুমকি উপড়ে ফেলতে হবে।

ঝুঁকি বিষয়ে ইসরাইলের ধারণাও পাল্টে গেছে। ওই অঞ্চলের দীর্ঘ দিনের সামরিক সীমারেখা হারিয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে এমন অনেক কিছু ঘটেছে যা সর্বাত্মক সঙ্ঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে তেহরান, বৈরুতে, তেল আবিব ও জেরুসালেম বৃষ্টির মতো বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।

ইসরাইল হামাস প্রধানকে হত্যা করেছে, যখন তিনি তেহরানে ইরানের অতিথি ছিলেন। তারা হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ পুরো নেতৃত্বকে ধ্বংস করেছে। সিরিয়ায় কূটনৈতিক ভবনে দু’জন ইরানি কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে।

হিজবুল্লাহ নয় হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও ড্রোন ছুড়েছে ইসরাইলের শহরগুলো লক্ষ্য করে। তেল আবিবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হাউসিরাও বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে।

ইরানও গত ছয় মাসে দুবার হামলা করেছে যাতে পাঁচ শ’র বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ইসরাইল লেবাননে আগ্রাসন চালিয়েছে। এবং এর কোনো একটিই হয়তো ওই অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে গেছে এবং সত্যি হলো ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীও এসব বিষয়ে কোনো ঝুঁকি না নিয়েই তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
চেষ্টা’র উদ্যোগে ফেনীতে বন্যাপরবর্তী গৃহস্থালী সামগ্রী বিতরণ অপরাধ করে শাস্তি এড়ানোর সুযোগ নেই : আইজিপি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান : শামসুজ্জামান দুদু মঠবাড়িয়ায় দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার ৪ ফরিদপুরে মদ পান করে ২ কলেজছাত্রীর মৃত্যু ৫০ বছরের মধ্যে সাহারা মরুভূমিতে প্রথম বন্যার বিরল দৃশ্য কুয়াকাটায় মাছের ঘেরে বিষ প্রয়োগে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টসের ক্রয়াদেশ সরে যাচ্ছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গাজায় প্রতিরোধ গড়ছে, পাশাপাশি ইসরাইলেও রকেট ছুড়ছে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নানা দল চীনের সাথে পাল্লা দিতে ভারতের নতুন কৌশল বিভাজনের রেখা দিয়ে সম্প্রীতির জাগ্রত চেতনাকে বিভক্ত করা যাবে না : রিজভী

সকল