১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ইসরাইল প্রতিক্রিয়া জানালে ইরান কী করতে পারে?

ইসরাইল প্রতিক্রিয়া জানালে ইরান কী করতে পারে? - ছবি : সংগৃহীত

গত সপ্তাহে ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরাইলের প্রায় অনিবার্য প্রতিশোধের ঘড়ি বাজছে। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা আর তার আগে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এই হামলা চালিয়েছে। তারা দু’জনই ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বুধবার দৃঢ়তার সাথে জানান যে- যখন ইসরাইল এর প্রতিশোধ নেবে তখন তা হবে ‘সুনির্দিষ্ট এবং প্রাণঘাতী’ এবং ইরান এর জন্য প্রস্তুতও থাকবে না।

ইরান উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোকে সতর্ক করেছে যেন তাদের আকাশসীমা কোনো ধরনের হামলার জন্য ব্যবহার না হয়।

এদের মধ্যে কয়েকটি দেশের সাথে ইসরাইলের পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।

দেশটি আরো বলেছে, যেই দেশই ইরানে আক্রমণ চালাতে ইসরাইলকে সহায়তা করবে, সেটি ইরানের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচিত হবে।

এগুলো এখন বিবেচনায় নেয়ার কিছু কারণ হচ্ছে, ইসরাইলের পরিকল্পিত আক্রমণ কী রূপ নেবে তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের আলোচনা।

প্রকাশ্যেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর যেকোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

চার সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে তেলের স্থাপনায় হামলা চালিয়ে পাম্পে দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে হোয়াইট হাউস যেমন সাধুবাদ জানাবে না, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যকে আরেকটি যুদ্ধের দিকেও টেনে নিতে চাইবে না।

তাহলে এরপর কী হবে?
ইসরাইলের মিত্ররা গত এপ্রিলে অচলাবস্থার সময় যে সংযমের আহ্বান জানিয়েছিল তা এবার আরো নিস্তেজ হয়ে গেছে।

এদিকে লেবানন, গাজা, ইয়েমেন ও সিরিয়ায়- একযোগে ইসরাইলের সব শত্রুদের মোকাবেলা করার দৃঢ় সংকল্পের কারণে নেতানিয়াহু সরকার পিছিয়ে আসার মানসিকতায় নেই বলে মনে হচ্ছে।

মার্কিন স্যাটেলাইটের গোয়েন্দা তথ্য এবং ইরানের মাটিতে মোসাদের (ইসরাইলের বিদেশী গুপ্তচর সংস্থা) মানব এজেন্টদের সহায়তায় ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কাছে বেছে নেয়ার জন্য বেশ কিছু লক্ষ্য রয়েছে। এগুলোকে মোটামুটিভাবে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-

প্রচলিত সামরিক কায়দায়- প্রাথমিক এবং সুস্পষ্ট লক্ষ্য হবে ঘাঁটি, যেখান থেকে ইরান সেই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উৎক্ষেপণ করেছে। এর অর্থ হলো লঞ্চ প্যাড, কমান্ড-এন্ড-কন্ট্রোল সেন্টার, রিফুয়েলিং ট্যাঙ্ক এবং স্টোরেজ বাঙ্কার। আরো এক ধাপ এগিয়ে আইআরজিসির ঘাঁটিগুলোর পাশাপাশি বিমান প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারিগুলোতে আঘাত করতে পারে। এমনকি এটি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সাথে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার চেষ্টা করতে পারে।

অর্থনৈতিক, এতে ইরানের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ অন্তর্ভুক্ত হবে- এর পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সম্ভবত এর পরিবহন সংক্রান্ত স্বার্থ। তবে এটি অজনপ্রিয় একটি পদক্ষেপ হবে। কারণ এটি সামরিক বাহিনীর উপর আক্রমণের তুলনায় সাধারণ মানুষের জীবনকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

পারমাণবিক, ইসরাইলের জন্য বড় একটি ক্ষেত্রে এটি। জাতিসঙ্ঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ’র মাধ্যমে এটি একটি জানা বিষয় যে- বেসামরিক পারমাণবিক শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ২০ শতাংশের চেয়েও বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে ইরান। ইসরাইল এবং অন্যরা সন্দেহ করে যে- ইরান ‘ব্রেকআউট পয়েন্টে’ পৌঁছানোর চেষ্টা করছে যেখানে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশটি একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম হবে। ইসরাইলের সম্ভাব্য টার্গেট তালিকার মধ্যে রয়েছে পারচিন, ইরানের সামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির কেন্দ্রস্থল, তেহরানের গবেষণা চুল্লি, বনাব ও রামসার। এছাড়াও আছে বুশেহর, নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফেরদোর প্রধান স্থাপনা।

তাদের হিসাব-নিকাশের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে ইরানের প্রতিক্রিয়া অনুমান করার চেষ্টা এবং তা কিভাবে প্রশমিত করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করা।

মঙ্গলবার ইসরাইলি সামরিক লক্ষ্যবস্তু বলে দাবি করা স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর ইরান মনে করছে এখন হিসেব সমান হয়েছে।

তবে ইসরাইল প্রতিশোধ নিলে পাল্টা আঘাত হানবে বলে সতর্ক করেছে ইরান।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘এটি আমাদের সক্ষমতার একটি আভাস মাত্র।’

এই বার্তাটিকে আরো শক্তিশালী করতে আইআরজিসি বলেছে, ‘যদি ইসরাইলি শাসক ইরানের কার্যক্রমে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে এটি নিষ্ঠুর আক্রমণের সম্মুখীন হবে।’

ইরান সামরিকভাবে ইসরাইলকে পরাজিত করতে পারবে না।

এর বিমান বাহিনী পুরনো এবং জরাজীর্ণ, এর আকাশ প্রতিরক্ষা ছিদ্রযুক্ত এবং একে বছরের পর বছর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সাথে লড়াই করতে হয়েছে।

কিন্তু এখরো ইরানের হাতে প্রচুর পরিমাণে ব্যালিস্টিক এবং অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি বিস্ফোরক ভর্তি ড্রোন ও মধ্যপ্রাচ্যের চারপাশে বহু মিত্র স্থানীয় মিলিশিয়া রয়েছে।

তাদের পরবর্তী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটির পরিবর্তে বেসামরিক এলাকাগুলো লক্ষ্য করতে পারে।

২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল স্থাপনার ওপর সালে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ার হামলা দেখিয়েছিল যে- এর প্রতিবেশীরা আক্রমণের কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পারস্য উপসাগরে ইরানের আইআরজিসি নৌবাহিনীর ছোট এবং দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সক্ষম বড় নৌবহর প্রস্তুত রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌ-বহরের যুদ্ধজাহাজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সংঘবদ্ধ আক্রমণে ব্যর্থ করতে সক্ষম।

নির্দেশ দেয়া হলে এগুলো হরমুজ প্রণালীতে মাইন স্থাপন করে বিশ্ব তেলের দৈনিক রফতানির প্রায় ২০ শতাংশ প্রবাহ ব্যাহত করতে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে।

এর পাশাপাশি, উপসাগরের আরব দিকের কুয়েত থেকে ওমান পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোও রয়েছে।

ইরান সতর্ক করে দিয়েছে যে- যদি তাদের ওপর হামলা করা হয় তাহলে তারা কেবল ইসরাইলের ওপরই আঘাত হানবে না বরং আক্রমণেকে সমর্থন করা যেকোনো দেশকে তাদেরও লক্ষ্যবস্তু বানাবে।

এগুলোই কিছু সম্ভাব্য পরিস্থিতি যা এখন তেল আবিব এবং ওয়াশিংটনের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকারীরা বিবেচনা করছেন।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement