০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড সামরিক সাহায্য

ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার একটা বড় অংশ হচ্ছে ২,০০০ পাউন্ডের বাঙ্কার বাস্টার বোমা, যেমনটা গাজা এবং বৈরুতে (ছবিতে) ব্যবহার করা হয়েছে - ছবি : সংগৃহীত

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের জন্য সামরিক সহায়তা বাবদ কমপক্ষে ১,৭৯০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। ইসরাইলে হামাসের হামলার বর্ষপূর্তিতে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের কস্ট অফ ওয়ার প্রজেক্টের একটি প্রতিবেদন এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। গাজায় যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত বছর ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান জোরদার করতে অতিরিক্ত ৪৮৬ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে বলে গবেষকরা প্রথম এই তথ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন।

এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ইয়েমেনের হাউছিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর নেতৃত্বাধীন অভিযানের ব্যয়ভার। হাউছিরা ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হামাসের সাথে সংহতি প্রকাশ করে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর হামলা চালিয়েছে।

এ প্রতিবদনটি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে লেবাননে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ সদস্যদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আক্রমণ আভিযান চালানোর আগে করা হয়েছে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের আনুমানিক ব্যয়ের প্রাথমিক হিসাব প্রতিফিলিত হয়েছে।

বাইডেন প্রশাসন গাজা ও লেবাননে তার সংঘাতে ইসরাইলকে সমর্থন করে এবং ঐ অঞ্চলে ইরানের সশস্ত্র মিত্রগোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

আর্থিক ব্যায়ের উপড়ে আছে প্রাণহানির হিসাব
হামাস এক বছর আগে ইসরাইলে হামলা চালায়। এ সময় হামাস প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে বলে ইসরাইল দাবি করেছে। এছাড়া তারা অনেককে পণবন্দী হিসেবে গাজায় নিয়ে যায়। অপর দিকে ইসরাইলের পাল্টা হামলায় গাজায় প্রায় ৪২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ঐ অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ইসরাইল লেবাননে ব্যাপক হারে হামলা বাড়ানোর পর থেকে হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ১৪০০ জন নিহত হয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এফ কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্টের অধ্যাপক লিন্ডা জে বিলমেস এবং তার সহকর্মী গবেষক উইলিয়াম ডি হার্টুং এবং স্টিফেন সেমলার এই যুদ্ধের এই আর্থিক ব্যয়ের হিসাব করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের কিছু অর্থ ব্যয় কোথায় হয় তা দেখে নিন

ইসরাইলের জন্য রেকর্ডমাত্রায় সামরিক সহায়তা

ইসরাইল ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সহায়তা পেয়ে আসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫৯ সাল থেকে ইসরাইলকে দেয়া অর্থের পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি যোগ করে হবে ২৫,১২০ কোটি ডলার।

কিন্তু তার পরও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলে পাঠানো সামরিক সহায়তা ছিল এক বছরে সবচেয়ে বেশি, মুদ্রাস্ফীতি-সমন্বিত ১,৭৯০ কোটি ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত ১৯৭৯ সালের শান্তি চুক্তির সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরাইল ও মিসরকে শত শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার করে এবং ওবামা প্রশাসন এক চুক্তিতে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ইসরাইলকে বার্ষিক ৩৮০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার মধ্যে রয়েছে সামরিক অর্থায়ন, অস্ত্র বিক্রি, যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ৪৪০ কোটি ডলারের সামগ্রী এবং ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জামাদি।

এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্রশস্ত্রের বেশির ভাগ ছিল গোলাবারুদ, আর্টিলারি শেল থেকে শুরু করে ২ হাজার পাউন্ড বাঙ্কার-বাস্টার এবং প্রেসিশন-গাইডেড বোমা।

এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ইসরাইলের আয়রন ডোম ও ডেভিড'স স্লিং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে রাইফেল ও যুদ্ধ বিমানের তেল কেনার জন্য ব্যয় হয়েছে ৪০০ কোটি ডলার।

গবেষকরা বলছেন, ইউক্রেনকে যে সামরিক সহায়তা দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের তা নথিভুক্ত করে থাকে প্রকাশ্যে। কিন্তু অপরদিকে গত ৭ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে কী পাঠিয়েছে তার সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়া অসম্ভব। সে কারণে বছরের ১,৭৯০ কোটি ডলার একটি আংশিক চিত্রমাত্র।

তারা বাইডেন প্রশাসনের 'আমলাতান্ত্রিক কৌশলের মাধ্যমে পুরোপুরি সহায়তার পরিমাণ এবং কী ধরণের সিস্টেম তা গোপন করার চেষ্টার' কথা উল্লেখ করেন।

যে যুদ্ধ বেসামরিক মানুষের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটিয়েছে, সে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্রকে আর্থিক সহায়তা দেয়া এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারনার সময় আমেরিকানদের বিভক্ত করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এবং বাইডেন শুক্রবার বলেছেন, 'কোনো প্রশাসন ইসরাইলকে আমার চেয়ে বেশি সহায়তা দেয়নি।'

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন ঐ অঞ্চলে সামরিক শক্তি জোরদার করেছে, যার লক্ষ্য ইসরাইলি ও আমেরিকান বাহিনীর উপর যেকোনো হামলা প্রতিরোধ ও তার পাল্টা জবাব দেয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অতিরিক্ত অভিযান পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ৪৮৬ কোটি ডলার ব্যয় করা হয়েছে। তবে মিসর এবং ঐ অঞ্চলের অন্যান্য অংশীদারের সামরিক সহায়তা জোরদারে অর্থব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।

হামাস যেদিন গাজার চারপাশে ইসরায়েলি বেষ্টনী ভেঙে হামলা চালিয়েছিল, সেদিন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা উপস্থিতি ছিল ৩৪ হাজার।

ইরানে এক হামলায় হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ে নিহত হন, যার জন্য ইসরাইলকে দোষারোপ করা হয়। ওই হামলার জবাবে পাল্টা আক্রমণ নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে আগস্ট মাসে ঐ অঞ্চলে দুটি বিমানবাহী রণতরী ছিল এবং তখন সেনা সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারে উন্নীত হয়।

এখন মোট সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার।

ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর এবং ইডেন উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপ, এম্ফিবিয়াস রেডি গ্রুপ, ফাইটার স্কোয়াড্রন এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাটারি মোতায়েন করা বেশ কয়েকটি জাহাজ ও বিমানের সংখ্যা গোটা বছরজুড়ে ওঠা-নামা করেছে।

পেন্টাগন জানিয়েছে, খুব শিগগিরই তারা আরেকটি বিমানবাহী রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপকে ইউরোপ অভিমুখে পাঠাচ্ছে এবং একই সময়ে যদি দুটি রণতরী ওই অঞ্চলে থাকে তাহলে সেনা সংখ্যা আবারো বাড়তে পারে।
সূত্র : ভিওএ

 


আরো সংবাদ



premium cement
কুমিল্লা সীমান্তে যুবককে গুলি করে লাশ নিয়ে গেল বিএসএফ দেশে কোনো ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই : সেলিম উদ্দিন গাজা যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীতে হামাসের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরো নিষেধাজ্ঞা দিল্লিতে মুইজ্জু-মোদির বৈঠক, ভারত-মালদ্বীপের বরফ কি গলল? আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলবেন মাহমুদউল্লাহ মহাকাশে বসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন সুনীতা! নাম না নিয়েই পাকিস্তানের সমালোচনা জয়শঙ্করের ইসরাইলি সামরিক অবস্থানে আরো হামলার দাবি হিজবুল্লাহর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড সামরিক সাহায্য ৪ দেশের মালাবার নৌ-মহড়ায় কোয়াড মালদ্বীপের পাশে থাকার বার্তা মোদির

সকল