২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

লেবাননে ইসরাইলের হামলার পেছনে ৩টি মূল কারণ?

লেবাননে ইসরাইলের হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে - ছবি : সংগৃহীত

ইসরাইলের দাবি, সীমান্তে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হিজবুল্লাহর ওপর হামলার প্রয়োজন রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, লেবাননে ইসরাইলের হামলার পেছনে তিনটি মূল কারণ রয়েছে।

এক বছর আগে লেবাননের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ মিলিশিয়া উত্তর ইসরাইলের সীমান্ত এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু করলে প্রায় ৬০ হাজার ইসরাইলিকে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিজবুল্লাহর সশস্ত্র শাখাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। হামাসকেও জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং অন্য অনেক দেশ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

তবে হিজবুল্লাহর দাবি, গাজার প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সমর্থনে তারা রকেট হামলা চালাচ্ছে।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধে অন্তত ৪১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পথে
লেবাননে ইসরাইলের হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইসরাইলের বিমান হামলা, যোগাযোগ ডিভাইসের বিস্ফোরণে লেবানন জুড়ে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল পরিস্থিতিটিকে ‘প্রায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক সানাম ভাকিলের মতে, বর্তমান সামরিক অভিযান এবং সংঘাতের বিপজ্জনক মোড় প্রধানত ‘ইসরাইলের উত্তরে বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিজের এলাকায় ফেরত চাওয়ার ন্যায্যতা বা আবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।’

তবে তার মতে, লেবাননে ইসরাইলের বর্তমান হামলার পেছনে আরো কারণ রয়েছে।

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, ইসরাইল তার সীমান্তে গাজা এবং হিজবুল্লাহ ফ্রন্টকে আলাদা করার চেষ্টা করছে।’

ভাকিল মনে করেন, ‘ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জন করতে পারেনি এবং গাজার কারণে হিজবুল্লাহর কাছ থেকেও শান্তিচুক্তি আদায় করে নিতে পারেনি।’

অন্যদিকে, ইরান ও ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইয়েমেনভিত্তিক হাউছিদের মতো একাধিক সশস্ত্র সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ তাদের বাহিনীগুলোকে একত্রিত করে ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধের পরের ঘটনা
ভাকিল বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, ইসরাইল অবশ্যই লেবাননের হিজবুল্লাহর কারণে চিরস্থায়ী নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে।’

২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে একটি মাসব্যাপী যুদ্ধ জাতিসঙ্ঘের ১৭০১ রেজল্যুশনের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে চলার প্রথম যুদ্ধের পর এটিকে দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধ বলা হয়।

জাতিসঙ্ঘের শর্তগুলো ছিল তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, দক্ষিণ লেবাননে লেবানিজ সৈন্য ও জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন, একই এলাকা থেকে ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং হিজবুল্লাহর প্রত্যাহার, সেইসাথে হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ।

তবে শর্ত অনুযায়ী হিজবুল্লাহ লেবাননের লিতানি নদী পর্যন্ত পিছু হটেনি। সীমান্ত থেকে নদীটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। শিয়া মিলিশিয়াটির সদস্যরা অস্ত্রও ত্যাগ করেনি। বরং পরের বছরগুলোতে ইরানের সমর্থনে হিজবুল্লাহর সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত যোদ্ধার সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।

এর ফলে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ভবিষ্যতে ইসরাইলি নাগরিকদের তাদের ভূখণ্ড থেকেই অপহরণ করতে পারে, এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

ভাকিলের মতে, ‘ইসরাইল (আরো একবার) হিজবুল্লাহকে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ মেনে নিতে বাধ্য করতে চাইছে।’

গাজা যুদ্ধ থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা
তৃতীয় কারণ হিসেবে ভাকিল মনে করেন, ‘লেবাননে এই অপারেশনের ফলে গাজার দিক থেকে দৃষ্টি সরেছে।’

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর পরও হামাসের বন্দিদশায় থাকা ৯০ জনেরও বেশি ইসরাইলি পণবন্দী রয়ে গেছেন। কিন্তু তারপরেও লেবাননের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মনোযোগ গাজা থেকে সরে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

ভাকিলের মতে, ‘গাজা থেকে বের হয়ে আসার কোনো কৌশল ইসরাইলের নেই এবং তারা কী পরিকল্পনা করছে সেটাও স্পষ্ট করেনি। ইসরাইল-ফিলিস্তিনি প্রক্রিয়ার কথাও তারা বলছে না।’

তার দৃষ্টিতে, লেবাননের যুদ্ধ ‘গাজায় কৌশলের অভাব থেকে দৃষ্টি সরানোর একটি প্রচেষ্টা।’

লেবাননে স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা
ইসরাইলি জনগণ ক্রমশ অধৈর্য্য হয়ে উঠছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে।

বৈরুতভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক এবং জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোর পরামর্শদাতা লরেঞ্জো ট্রম্বেটা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ইসরাইলের দৃষ্টিকোণ থেকে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ খুব বেশি এবং প্রতি সপ্তাহে তা তীব্রতর হচ্ছে।’

তার ধারণা, ইসরাইলি সরকারের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে। ট্রম্বেটা মনে করেন, এটা অর্জনের একটা উপায় হতে পারে উত্তর ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, ‘তবে, ইসরাইল তা অর্জনে সক্ষম হবে কিনা সেটা বলা কঠিন।’

ট্রম্বেটার প্রশ্ন, ‘ইসরাইলের স্থল অভিযান শুরু হবে কিনা বা কখন হবে, কে জানে! হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলে ইরান কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে?’

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
সড়কে প্রতিকূলতার মধ্যেই কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে : ঢাবি ভিসি স্বাস্থ্যে বৈষম্যের শিকারদের পদায়ন না করলে জনগণ ফুঁসে উঠবে : অধ্যাপক জাহিদ হোসেন ধামরাইয়ে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকসেবা মাস অনুষ্ঠিত মায়ের সাথে শহীদ হওয়ার গল্প বলতেন খোবাইব চট্টগ্রামে গার্মেন্টকর্মী ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেফতার দুর্গাপূজায় অপতৎপরতা ঠেকাতে চট্টগ্রামে মাঠে থাকবে বিএনপি পোরশা সীমান্তে বিএসএফের হাতে ২ বাংলাদেশী আটক বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিতে চাঁদাবাজি করায় কারেন্ট জসিম গ্রেফতার বিভিন্ন স্থানে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয় যৌক্তিক সংস্কার চায় শিবির

সকল