২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

লেবাননের হিজবুল্লাহকে ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ দিয়ে আঘাত করছে ইসরাইল

গত সোমবার থেকে ৬০০ মানুষ ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছে - ছবি : বিবিসি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অন্যান্য মিত্র দেশগুলো যুদ্ধবিরতি দেয়ার আহ্বান জানালেও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির সেনাবাহিনীকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৯২ জন নিহত হয়েছে। গত সোমবার থেকে সেখানে হামলা বেড়ে যাওয়ায় আরো শতাধিক নিহত হয়েছে।

হিজবুল্লাহ নিশ্চিত করেছে যে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে একটি ভবনে বিমান হামলা হওয়ায় তাদের ড্রোন ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ সুরুর নিহত হয়েছেন।

এর আগে, গত সোমবার থেকে দেশটিতে ইসরাইলি হামলার তীব্রতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় ইসরাইল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।

ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার লড়াই ক্রমশ বাড়তে থাকায় গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মোট ১২টি দেশ লেবাননে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে।

এই প্রস্তাবটি শুরুতে আশার আলো দেখিয়েছিল, যখন জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের দূত ড্যানি ড্যানন বলেছিলেন, তার দেশ যেকোনো প্রস্তাবের ব্যাপারে উদার মনোভাব পোষণ করে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের মাঝে ইসরাইলি রাজনীতিবিদরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে যোগদানের জন্য ওই দিন নিউইয়র্কে পৌঁছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইল তার লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত লেবাননে অভিযান চালানো বন্ধ করবে না। এর মধ্যে একটি লক্ষ্য হলো, দেশটির উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলি নাগরিকদেরকে তাদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে আনা।’

তবে নেতানিয়াহুর ওই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দাবি সত্ত্বেও হোয়াইট হাউস পরে বলেছে যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ইসরাইলের সাথে সমন্বিত করা হয়েছে।

নিউইয়র্কে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার তার বক্তব্যে লেবাননে চলমান সংঘাত সমাধানের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এই সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তখন তা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

এক বছর আগে শুরু হওয়া গাজায় যুদ্ধের কারণে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বৈরিতা দেখা দেয়। তারপর দেশে প্রায় ৭০ হাজার ইসরাইলি দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যূত হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের মতে, লেবাননে গত সোমবার থেকে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আরো এক লাখ ১০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরাইলে ৫০টি রকেট এবং ৮০টি মিসাইল ছুঁড়েছে।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে, বৃহস্পতিবার সারাদিন দক্ষিণ লেবানন এবং পূর্বাঞ্চলের বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এছাড়া সিরিয়া-লেবানন সীমান্তেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।

তারা বলছে, এই সীমান্তে হামলা চালানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, হিজবুল্লাহর জন্য অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করা। ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলছে, ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া একটি মিসাইল তারা প্রতিহত করেছে।

ইসরাইল সেনাবাহিনীর প্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল হারজি হালেভি বুধবার বলেন, লেবাননে ইসরাইলের বিমান হামলা মাধ্যমে ‘শত্রুদের ভূমিতে’ ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ঢোকার পথ তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমান বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল টমার বার সৈন্যদের তৈরি থাকতে বলেছেন যাতে করে স্থল অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করতে পারে।

এদিকে, লেবাননে হামলা চালানো বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে কাতার। দেশটির সরকারের মুখপাত্র মাজেদ-আল-আনসারি বলেন, লেবানন থেকে তারা ভয়াবহ তথ্য পাচ্ছেন। লেবাননে এমন ঘটনা ঘটছে যেখানে পুরো পরিবারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এ ধরনের নৃশংসতা গাজায় চালানো হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা লয়েড অস্টিন লন্ডনে বৈঠক করেছেন ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে।

অস্টিন বলেন, ইসরাইল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যাবার ঝুঁকি রয়েছে, তবে এ সঙ্কটের কূটনৈতিক সমাধান করা এখনো সম্ভব।

অস্টিন আরো বলেন, ‘ইসরাইল বলেছে, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশটির উত্তরাঞ্চলে তাদের নাগরিকদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে আনা। আমি বিশ্বাস করি, এই কাজ খুব দ্রুততার সাথে করা যাবে কূটনীতিক উপায়ে।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের চলমান সামরিক অভিযানের জন্য আমেরিকার কাছ থেকে তারা প্রায় নয় বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে।

এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আমেরিকার কাছ থেকে যে সাহায্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার হচ্ছে ‘যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম’ এবং পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার হচ্ছে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য, যার মধ্যে আয়রন ডোম এবং উন্নত প্রযুক্তির লেজার সিস্টেম রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement