২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজার আল-শিফা হাসপাতাল ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক

গাজার আল-শিফা হাসপাতাল ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক - সংগৃহীত

গাজার চিকিৎসকদের এক সময়ের গর্ব, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের প্রধান হাসপাতাল আল-শিফা ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত রোগীরা বছরের পর বছর ধরে গাজার হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের সেরা সেবাটাই পাচ্ছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে, তাদের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়।

ইসরাইলের দুটি সামরিক অভিযানে আল-শিফা হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইলি বাহিনী হাসপাতালটিতে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম ও ২০২৪ সালের মার্চ মাসে দ্বিতীয়বার হামলা চালায়।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আল-শিফার পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়াকে সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে আটকে রেখেছে। ওই সময় তাকে ‘নির্যাতন’ করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।

এরপর থেকে হাসপাতালে একটি জরুরি বিভাগ পুনরায় চালু করা হয়েছে। যদিও হাসপাতালটির কমপ্লেক্সের বাকি অংশ যুদ্ধের আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক আবু জাফর বলেন, জরুরি বিভাগটি পুনরায় চালু করার জন্য হাসপাতাল কর্মীদের ‘ডায়ালাইসিস মেশিনগুলোকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে টেনে বের করতে হয়েছে।

বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, ১৫ নভেম্বর রাতে যখন ইসরাইলি ট্যাঙ্কগুলো হাসপাতালে হামলা চালায়, জাতিসঙ্ঘের মতে এ হাসপাতাল কমপ্লেক্সে তখন কমপক্ষে দুই হাজার ৩০০ লোক ছিল।

তাদের অনেকেই এটিকে গাজার মধ্যে একটি নিরাপদ স্থান ভেবে এখানে আশ্রয় নিয়েছিল।

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের হামলায় বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে এক সংবাদদাতা বলেন, বন্দুকযুদ্ধ ও বিস্ফোরণে রোগী, কর্মচারী এবং যুদ্ধ থেকে আশ্রয় নেয়া অন্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

১৯ মার্চ ইসরাইলি বাহিনী ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে দ্বিতীয় হামলা শুরু করে। ১১ দিন ধরে সৈন্যরা হাসপাতাস প্রাঙ্গনে চিরুনি অভিযান চালায়।

অভিযান শেষে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ‘২০০ যোদ্ধাকে’ হত্যা ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খুঁজে পাওয়ার দাবি করে।

গাজার সিভিল ডিফেন্স অ্যাজেন্সি জানায়, ওই হামলার পর অন্তত ৩০০ জনের লাশ পাওয়া গেছে। অ্যাজেন্সিটি ফিলিস্তিনি উপকূলীয় ছিটমহল জুড়ে উদ্ধার কাজ চালায়।

কমান্ড সেন্টার নাকি স্বাস্থ্য সুবিধা?
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর দাবি, হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আল-শিফা হাসপাতালকে তাদের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করায় ইসরাইল হাসপাতালটির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে।

এ দাবির পক্ষে ইসরাইল একটি প্রেস ইভেন্টের আয়োজন করে। ইভেন্টে সৈন্যদের সাইটের নিচে সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ ফুটেজের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের সময় আটক ২৫১ বন্দীকে মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। নভেম্বরে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি চলাকালে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীরা ওই সময়ে তাদেরকে হাসপাতাল বা এ ধরনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে।

সামরিক বাহিনী আরো বলেছে, আল-শিফা হাসপাতালের কাছে অন্তত দু’টি বন্দী- নোয়া মার্সিয়ানো ও ইহুদিত ওয়েইসের লাশ পাওয়া গেছে।

হামাস ক্রমাগতভাবে হাসপাতালগুলোকে কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ইসরাইলের সমালোচনা করেছে। ইসরাইলি সরকারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, হামাসের হামলায় ইসরাইলি পক্ষের এক হাজার ২০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে- যাদের বেশিভাগই বেসামরিক নাগরিক।

হামাস পরিচালিত অঞ্চলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুসারে, ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৪১ হাজার ৪৩১ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিভাগই বেসামরিক নাগরিক।

জাতিসঙ্ঘ এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে মত দিয়েছে। গাজায় এখনো ৯৭ জনকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৩ জনকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিহত বলে দাবি করেছে।

সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ ফিলিস্তিনি-আমেরিকান ইয়ারা আসি বলেন, ইসরাইল প্রতিষ্ঠার দু’বছর আগে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আল-শিফা হাসপাতালটি গাজার বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এটি কেবল একটি হাসপাতালই ছিল না, এটি ছিল ফিলিস্তিনিদের জীবনের আশা ও এ ভূমিতে তাদের বসবাস করার ইচ্ছার একটি প্রতিফলন।

ইয়ারা যুদ্ধ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্যতাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ।

ঘাসান আবু-সিত্তাহ বলেন, আল-শিফা হাসপাতাল গাজার অন্যতম বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। তিনি একজন ফিলিস্তিনি-ব্রিটিশ সার্জন যিনি যুদ্ধের প্রথম ৪৩ দিন আহতদের চিকিৎসা করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি যুদ্ধের পর, এই হাসপাতালটি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।’

আবু-সিত্তাহ গাজায় ২০০৮-৯, ২০১২, ২০১৪ ও ২০২১ সালে আগের চারটি যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আল-শিফার ধ্বংসের পর, মানুষ দেখল যে গাজা উপত্যকার উত্তরে চিকিৎসার জন্য তাদের যাওয়ার কোনো জায়গাই নেই।’

আল-শিফা ধ্বংসের পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মূলত ধসে পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করেছে, গাজায় মাত্র কয়েকটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এখন আহতদের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা পরিচালিত উন্মুক্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।

আবু-সিত্তাহ বলেছেন, আল-শিফা স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থার মূল প্রাণকেন্দ্র ছিল। ইসরাইলের অভিযানগুলো এটি ধ্বংস করে দিয়েছে।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
বিএনপি নেতা হত্যা : সাবেক প্রতিমন্ত্রী রিমিসহ ৪৯ জনের নামে মামলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তে ১ হাজার কেজি ইলিশসহ পাচারকারী আটক ববির ভিসি হলেন অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী এমপিদের বিচার করতে হবে : ফয়জুল করীম ভারতের কাছে বন্যা ও বৃষ্টিপাতের তথ্য চাওয়া হবে : পানিসম্পদ উপদেষ্টা ছেলের ফল জালিয়াতি, বাবা ওএসডি কুলাউড়ায় সীমান্তে ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে এক যুবক আটক আগামী সপ্তাহে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন হতে পারে : তথ্য উপদেষ্টা কক্সবাজারে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা, আটক ২ আনোয়ারায় সাগর থেকে একজনের লাশ উদ্ধার ‘কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে’

সকল