চি ঠি প ত্র : এ যেন হরিষে বিষাদ
- ১৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০৫
এ যেন হরিষে বিষাদ
রহস্যময় দুনিয়ায় এমন কিছু পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যাতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্র পর্যন্ত বিব্রতকর অবহার শিকারে পরিণত হয়। অথচ করার কিছু থাকে না। তেমনি কয়েকদিন আগে এমনকি এখন পর্যন্ত (জুলাই ২২) এক তিতা-মিষ্ট পরিস্থিতিতে গোটা দেশ নিমজ্জমান। এক দিকে, দেশের পূর্বাঞ্চলের সিলেট-সুনামগঞ্জসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল অনাকাক্সিক্ষত মহা প্লাবনে প্লাবিত। লাখ লাখ মানুষ, পশু, তাদের বাড়িঘর আসবাবসহ ডুবে মরছে। মরার পর পানিতেই লাশ ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। খাবার অভাবে মানুষ ও পশু জীবন-মৃত্যুর সাথে যুদ্ধরত। খাদ্য, তৎসঙ্গে পানির জন্য যেন পানিতেই কারবালা। দলমতের ভেদাভেদ ভুলে মানুষ সাহায্যের হাত বাড়ালেও বানভাসি মানুষের চাহিদা অপূর্ণই থেকে গেছে। সেই মহাদুর্যোগের মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলীয় কোটি মানুষের কাক্সিক্ষত যোগাযোগব্যবস্থা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে বড় বোন অথবা বড় ভাইয়ের বিয়ের উপচেপড়া আনন্দের লহরী। এ যেন গ্রামাঞ্চলের একটি ঘটনার হুবহু প্রতিচ্ছবি- ছোট ভাই ফোনে বড় বোনকে কাছে (রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা) ‘বু...! বুড়ামা (দাদি) এ্যালায় মারা গেল। কেন? মহাবিরক্তির সাথে বলছে, হায়রা হায়, এই বুড়ি মোক জ্বলে খাইলে। মরবু তা দুইদিন আগে না হয় দুইদিন পরে মর।। তা কওয়া নাই বলা নাই, আইজে মরা নাগে। কন্ আইজ মোর পইলা (প্রথম) নাতির বিয়া, আর বুড়ি আইজে মইর্বার যুৎ পাইলো। মোর বিয়াদ্দিনেও কি ঐ বুড়ি কম জ্বালাইচে? ঐ দিনে এ ওয়ার ডাইরিয়া হওয়া নাগে? মোর বিয়ার আনন্দয় মাটি। এ ফেলু! মুঁই যাবার পাবান্যাওঁ, আর মুই বেটি ছাওয়া মানুষ যায়ায় বা কি করিস; তোরা বুড়িক খাপান (কাফন দাফন করা), আর কলমা খানিদ্দিনে ডাকাইস-(কুলখানি)। যারা দাওয়াত খায়া আসনো।’ আমাদের বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলীয় মানুষের বিয়েবাড়ি, আর একই দেশের পূর্বাঞ্চলে মহা প্লাবনে মরার বাড়ির অপ্রত্যাশিত বিষাদে হরিষ অথবা হরিষে বিষাদের মর্মান্তিক প্রতিচ্ছবিই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, সরকারি ত্রাণ ব্যবস্থাপনা নাকি উল্লেখযোগ্য মানের নয়। তৎসঙ্গে আরো দুঃখজনক ঘটনা- কলামিস্ট ড. রেজোয়ান সিদ্দিকীর লেখা থেকে জানা গেল, ফেনীর ফুলগাজীতে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রীসহ ত্রাণবহরকে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে সরকারেরই অঙ্গসংগঠন কর্তৃক। বিপদাপদে সাহায্যের হাত যে কেউ বাড়াতেই পারে। তাতে বাধা কোনো মানসিকতায় দুর্বোধ্য। এ যেন পড়শির বউ বাড়িতে এসেছে। গৃহিণী আর কী দিয়ে আপ্যায়ন করে তাৎক্ষণিক পান ছাড়া। বলছে ‘বু...? গুয়া (সুপারি) তো নাই, পান থাকলে দিনু হয়, বাড়িৎ যায়া চুনা (চুন) দিয়া খালু হয় তেমনও নয়।’ তারপরও সান্ত্বনা, সিলেটের বিপদ একদিন কেটে যাবেই। আর পদ্মা সেতু থেকেই যাবে দীর্ঘ দিন।
কাজী মো: গোলজার হোসেন
ইসলামপুর, পায়রাবন্দ, মিঠাপুকুর, রংপুর
মুসলিমবিদ্বেষের আরেক ধাপ?
গত ৫ জুলাই ২০২২ বিবিসির অনুষ্ঠানে জানা গেল, আবারো মুসলিমবিদ্বেষী আচরণের উলঙ্গ বহিঃপ্রকাশ ভারতে জনৈক রেস্তোরাঁ মালিক কর্তৃক হিন্দুদের দেব-দেবীর ছবি সম্বলিত বাজার থেকে কেনা পুরনো খবরের কাগজে মাংস পোঁটলা করার কারণে হিন্দু দেব-দেবীর অবমাননা, হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং প্রতিবাদকারীদের হত্যা প্রচেষ্টার অজুহাতে একেবারে ত্রিধারার মামলা, গ্রেফতার, আদালতে তোলা, জেলে পোরা হলেও এই কিছু দিন আগে ভারতেরই উচ্চ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত নূপুর শর্মা এখনো মুক্ত বিহঙ্গ। যাই হোক, একজন মুসলিম হিসেবে সংশ্লিষ্টদের দু-একটি প্রশ্ন সবিনয়ে উপস্থাপন করতে চাই।
পূজ্য দেব-দেবীর ছবি পত্রিকার পাতায় কেন? সে কাগজ পুরনো পরিত্যক্ত কাগজ বিক্রেতার দোকানে কেন? পত্রিকাওয়ালারা ওই ছবিওয়ালা কি কাগজ মাত্র একটিই ছাপিয়েছিল, যা কেবল ওই সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিই কিনে ব্যবহার করে দেব-দেবীর অবমাননা করেছে? না হলে বিক্রেতা ব্যক্তি নির্দোষ কোন যুক্তিতে? যদি ওই ব্যক্তি দোষী হয়, তাহলে অন্য যারা ওই দোকান থেকে পুরনো কাগজ কিনে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ঠোঙার পরিবর্তে মাছ, শাক-মসলা, কাপড় চোপড়সহ বিভিন্ন পণ্য পোঁটলা বেঁধে বিক্রয়কালে যদি ওই ছবি থেকে থাকে তাহলে তারাই বা নির্দোষ হবে কেন?
আর এভাবে ওই ছবিওয়ালা পরিত্যক্ত কাগজ পথেঘাটে, রাস্তা-নর্দমা এমনকি আবর্জনার ভাগাড়ে অবমাননার শিকার হয়নি, তারও পরিসংখ্যান ও জবাব কী? এখন তো বলতেই হয়, সাধারণত মানুষ জানে, রাজা-বাদশাহ, সম্রাট যে-ই হোক তারা হবে প্রজাহিতৈষী, তাদের দেখভাল, রক্ষণাবেক্ষণ সব সৎ রাজার ধর্মীয় কাজের অঙ্গ। অথচ বিশ্ববাসী দেখছে ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার দাবিদার সাধু-সন্ন্যাসী, ধর্মাবতারদের দেশে শুধু ধর্মবিদ্বেষের কারণে ২০০ কোটি মুসলমান সতত যমের মুখে। আল্লাহ হেফাজতকারী।
মো: গুল হাসান, শিক্ষার্থী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা