২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দায়ী কে, দোষী কে?

-


পত্রিকায় দেখলাম আলোড়ন সৃষ্টিকারী নায়িকা পরীমণির জন্য প্রবাসী লেখিকা তসলিমা নাসরিনসহ দেশের বিশিষ্ট ১৮ জন নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের বিবৃতির একটি বিষয়ে একমত ও দু’টি বিষয়ে কিছু বলার আছে বলে মনে করি। প্রথমত, তারা দেশের কলঙ্ক, মুখোশধারী কিছু সাধু সন্ন্যাসীর মুখোশ উন্মোচন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। আমরাও একমত, কারণ এরা কি কোনো মায়ের সন্তান, না আগাছা? যে মা-মেয়ে, বোন, খালা, ফুফুর সম্ভ্রম নষ্ট করা হলো, সারা পৃথিবীর সম্পদ লিখে দিলেও কি তার মূল্য শোধ হবে? তার জীবন যৌবন ভবিষ্যৎ সব শেষ। বাকি জীবন তাকে একরাশ গ্লানি বয়ে টানতে হবে জীবনের ইতি।
অপর দিকে বাঁচাতে ভুক্তভোগীকে বড় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। তা যেন বাচনিক ধর্ষণের শামিল। আমরা শান্তিকামী জনতা মনে করিÑ অভিযুক্তের ডিএনএ পরীক্ষায় যদি বাদির অভিযোগ সত্যে পরিণত হয়, তাহলে কেন কালক্ষেপণ? দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সুবিচার করা যায়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বলতে আমরা জানি স্রষ্টা মহান আল্লাহ তার শান্তিকামী বান্দা-বান্দির জন্য গোয়ালের দু-একটি দুষ্ট গরু নিপাত করে প্রয়োজনে গোয়াল শূন্য রাখার মতো যে বিধান দিয়েছেন, তা যদি প্রয়োগ হয়, ওসব শয়তান ঠাণ্ডা হয়ে যেত। কিন্তু তাতেও গেল গেল, সব গেল বলে কলরব তোলার লোকের অভাব হবে না। দ্বিতীয়ত, পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থার দোহাই দিয়ে বিষয়টাকে হালকা করে ফেলার অবকাশ নেই। কারণ পুরুষশাসিত অনেকে সমাজব্যবস্থার কথা বললেও গা ঢাকে না। প্রধানমন্ত্রী একজন সম্ভ্রান্ত নারী। বিরোধীদলীয় নেত্রী একজন নারী, স্পিকার একজন নারী। এ ছাড়া সংরক্ষিত সম্ভবত ৫০টি মহিলা আসনে সমাসীন রয়েছেন নারীরাই। দেশ রক্ষা বাহিনীতে নারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে নারী; রেলের ড্রাইভার নারী; বিমানের পাইলট নারী; সাংবাদিক নারী, শিক্ষক, অধ্যাপক নারী। সর্বোপরি বিবিসি সংবাদের বেলায় যত সাক্ষাৎকার শুনতে পাই, সবাই যোগ্যতাসম্পন্ন নারী। আর আগেকার এক রাষ্ট্রপতি তো বলেই গেছেন, এ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব তো শুধু কবর জিয়ারত করা আর ফাইলে স্বাক্ষর করা। অথচ সেই দেশে মায়ের জাতির লাঞ্ছনা যে হামলে পড়েছে। আসল গলদ কোথায়?
একটি বিষয় যেন মহামারী রূপ নিয়েছে, আর তার বেশির ভাগই শিক্ষিত মহলে। তা হচ্ছে, প্রেমের নামে সম্মতিতে ‘দেহ দান’। এটা ধর্ষণে রূপান্তরিত হচ্ছে। কেন মায়েরা বলতে পারেন না যে, আগে বিয়ে করো।
আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে প্রামাণ্য বিদ্যাপীঠ চলচ্চিত্রাঙ্গন ও ভদ্রতা মানবতা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার একটি মাধ্যম। কিন্তু সেই মাধ্যম উপলক্ষ করে তারকা খ্যাতিপ্রাপ্ত একজন বোন যদি এমন যে, একে তো মূর্খ তার উপরে গরিব ও ওড়না কেনার পয়সা নেই, তাহলে কথা নেই। কিন্তু একখানা দামি ওড়না গলার পেছনে ঝুলিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে জাতিকে কোন ভদ্রতা শিষ্টাচার, লজ্জাশীলতা আর আদব-কায়দা শেখাতে চান? আর এ ধরনের সুড়সুড়ি পেয়ে একশ্রেণীর নব্য বয়স্ক লুচ্চা ইয়াবা নিয়ে ঘুমায়। কাজেই আগে ‘কুয়োর মরা বিলাই’ তোলা জরুরি। নচেৎ নারী নির্যাতনের শুধু মহামারী নয়, একেবারে অতিমারী শুরু হতে বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।
কাজী মো: গোলজার হোসেন
ইসলামপুর, পায়রাবন্দ, রংপুর


আরো সংবাদ



premium cement