প্রকৃতিকে রক্ষা করুন
- ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০৫
প্রকৃতি থেকেই মানুষ বস্ত্র, খাবার, ওষুধ সংগ্রহ করে জীবনধারণ করেছে। সেই প্রকৃতি আজ হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে পশুপাখির অভয়ারণ্যে মুখরিত হওয়ার কথা আজ তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
যে পরিবেশে একসময় চিল, শকুনের সমারোহ আকাশে বিচরণ ছিল, আজ আমাদের প্রকৃতি ধ্বংসের অবলীলায় সেসব প্রাণী বিলুপ্তির সম্মুখে। আর এসবের জন্য একমাত্র দায়ী মনুষ্যজাতি। আগে শীত মৌসুমে অনেক অতিথি পাখি দেখা গেছে কিন্তু বর্তমানে তাদের তেমন বিচরণ দেখতে পাওয়া যায় না। এর মূল কারণ পাখিদের বিচরণের উপযুক্ত পরিবেশের অভাব। মানুষের অবাধ বৃক্ষ নিধনের ফলে পরিবেশে তাপমাত্রা বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
কবির ভাষায় : ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লহ এ নগর।’ বাংলার কবির এ আবেদন আজ অরণ্যরোদনে পরিণত হয়েছে। অরণ্য দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের দানবরূপী করাল গ্রাসে। এক দিকে মানুষের হাতে রয়েছে জীবনসংহারী কুঠার, অপর দিকে ক্ষুধা মেটাতে এবং ঘরের সাজসজ্জায় করাতের মরণ ছোবলে নিধন হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য বৃক্ষ।
২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১১৪। তবে ২০২০ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমেছে না বেড়েছে, সে সম্পর্কে জানাতে পারেনি বন বিভাগ। এর আগে গত বছরের ১৪ মে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের এক সমীক্ষায় সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছিল, সমুদ্রের স্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে বিশেষত বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার আগামী ৫০ বছরের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে।
৯ এপ্রিল ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জালাল সিকদার পুড়িয়ে দিয়েছে বাবুইয়ের তৈরি করা শতাধিক বাসা। তাতে পুড়েছে ৩৩টি বাবুই ছানা। ক্ষেতের ধান খাওয়ার অপরাধে বাঁশের মাথায় মশাল জ্বালিয়ে তালগাছে বাঁধা বাসাগুলো জ্বালিয়ে দেয় এই নির্দয় মানুষটি। অতএব, প্রকৃতির নিরাপদ কোলেই (মায়ের কোলে শিশু যেমন) পোড়ানো হলো বাবুইয়ের যতনে তৈরি করা বাসাগুলো। আর সেই নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা বাচ্চাগুলো রক্ষা পায়নি মানুষের মর্মন্তুদ অপকর্ম থেকে। এটা হতে পারে মানুষ দ্বারা সৃষ্ট নৃশংসতার চূড়ান্ত রূপ। প্রকৃতি ও পরিবেশ হত্যার জ্বলন্ত উদাহরণ এটি।
অন্য দিকে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে পরপর দুই দিনে ভেসে এসেছে প্রায় ১০ টন ওজনের দু’টি বিশালাকার তিমির মরদেহ। ব্রাইডস হোয়েল প্রজাতির এই তিমি দু’টির মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাধারণত তিন কারণে তিমি মারা যেতে পারে। প্রথমত, বার্ধক্য। দ্বিতীয়ত, আঘাত বা ধাক্কা। গভীর সমুদ্রে বড় ফিশিং জাহাজের সাথে ধাক্কা লাগতে পারে। সাগরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাছ ধরার সময় হার্ট অ্যাটাক বা আঘাতেও তিমি মারা যেতে পারে। তৃতীয় কারণ পলিথিন বা প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য যা তিমির খাদ্য নয়; তা খাদ্যনালীতে আটকে গেলে তিমি মারা যেতে পারে।
এ মৃত্যুর প্রথম কারণটা বাদ দিলে বাকি দুই কারণই মানুষের সৃষ্ট। অর্থাৎ ধারণা করা যেতে পারে তিমির নিরাপদ আশ্রয়স্থল সামুদ্রিক সীমানায় মানুষের অবাধ অপরাধই তিমি দু’টির মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এইভাবে চলতে থাকলে প্রকৃতি থেকে বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হবে। প্রাণসঞ্চারী প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে আগে মনুষ্য সমাজ নিজেকেই শোধরাতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয়পর্যায় পর্যন্ত সবাইকে প্রকৃতিবান্ধব হওয়াটা জরুরি। প্রকৃতির ওপর মানুষের উপর্যুপরি আঘাতই বড় দুর্যোগ নিয়ে আসে। প্রকৃতিগত এই অভিশাপ অনেক সময় বড় ক্ষতির কারণ হয়, আবার অনেক সময় মড়ক সৃষ্টি করে বিশ্বজুড়ে। তাই প্রকৃতি রক্ষার্থে আমাদের সবাইকেই একসাথে কাজ করতে হবে।
প্রসেনজিৎ কুমার রোহিত
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা