২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

যে কাণ্ড নিন্দার যোগ্য

-

সম্প্রতি অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে দু’টি খবর পড়েছি। প্রথম খবরটি হলো, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ফরহাদ কবির নামে একজন চিকিৎসক মোটরসাইকেলে রোগী দেখার জন্য তার চেম্বারে যাচ্ছিলেন। এমন সময় ইউএনও তাকে থামিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। চিকিৎসক যথাযথ উত্তর দেন। উত্তর পছন্দ না হওয়ায় তিনি তাকে তিরস্কার করেন এবং লকডাউন ভাঙার কারণে জেলে দেয়ার হুমকি দেন। তারপর তাকে ১০০০ টাকা জরিমানা করেন। খবরটি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানাজানি হলে চিকিৎসকদের সংগঠন-এর নিন্দা করে এবং ইউএনওর শাস্তির দাবি জানায়। দুই দিনের মধ্যে ইউএনওকে ওএসডি করা হয়েছে। এতে চিকিৎসকের মর্যাদা কিছুটা হলেও রক্ষা পায়।
অন্য একটি খবর হলোÑ রাজশাহীর বাগমারায় এসিল্যান্ড মদনপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক আবদুল আজিজকে লকডাউন ভঙ্গের কারণে পিটিয়ে হাতের হাড় ভেঙে দিয়েছেন। কলেজ শিক্ষক তার নিজ বাড়ির সামনেই দোকানে ছিলেন। এসিল্যান্ড এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ এলে লোকজন ভয়ে পালিয়ে যায়। কলেজশিক্ষক ওষুধের দোকানে আশ্রয় নেন। এসিল্যান্ড তাকে বের করে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হাতের হাড় ভেঙে দেন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নিন্দা এবং এসিল্যান্ডের শাস্তি দাবি করেছে, এসিল্যান্ডের কোনো শাস্তির খবর পাওয়া যায়নি।
লকডাউনে চিকিৎসকের চলাফেরার অনুমতি আছে। তা সত্ত্বেও মোটরযান আইন অনুযায়ী হেলমেট গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার কথা। তার কোনোটিই তার ছিল না। অন্য দিকে অসুস্থ নিরীহ গোবেচারা শিক্ষক তার বাড়ির সাথেই দোকান যেখানে এসেছিলেন। তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলতে পারতেন ‘আমি ওষুধের জন্য ওষুধের দোকানে এসেছি।’ তবে তিনি তা বলেননি। যা হোক তাকে পিটিয়ে হাড় ভেঙে দেয়া হলো।
এসিল্যান্ড একজন ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারক। বিচারকের কাজ হলো ঠাণ্ডামাথায় বাদি-বিবাদি ও সাক্ষীদের কথা ভালোভাবে শোনা। অপরাধীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া। বিবাদির বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হলে তাকে শাস্তির রায় দেয়া। সে শাস্তি জেল অথবা জরিমানা করা। অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা। তবে শারীরিক শাস্তি দেয়া নয়। শারীরিক শাস্তি দেয়ার বিধান আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে নেই। যদিও তা থাকে তাহলে এটা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর, এসিল্যান্ডের নয়। কলেজ শিক্ষক যদি সত্যিই লকডাউন ভেঙে থাকেন তাহলে তাকে জেল দেয়া অথবা জরিমানা করা যায়। তা না করে একজন কর্মকর্তা পিটিয়ে হাতের হাড় ভেঙে দিয়ে বেআইনি কাজ করেছেন। জাতি গড়ার কারিগর কিংবা জাতির বিবেককে আঘাত করার অর্থ হলো জাতি আঘাত করা। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার জন্য দাবি করছি।
মোহাম্মদ আলী শেখ
কলেজশিক্ষক, বোয়ালমারী, ফরিদপুর
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement