কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের নামে সড়ক বা স্থাপনা
- ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
মরহুম ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু মুজিব আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত হলে সালেহউদ্দিনের নেতৃত্বে লন্ডনে গঠিত ‘দ্য রাইটস অব ইস্ট পাকিস্তান ডিফেন্স ফ্রন্ট’ লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন ভবন দখল করে। ফলে লন্ডনে অবস্থানরত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান হোটেলের পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যান, যা তার সরকারের সেক্রেটারি আলতাফ গওহর নিজের বইয়ে উল্লেøখ করেছেন (Altaf Gauhar; Ayub Khan : Pakistan’s First Military Ruler; Lahore : Sanga-e-Meel Publication, 2011, P-423)। সালেহউদ্দিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধুকে আইনগত সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে ব্রিটিশ এমপি ও আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামকে ঢাকায় পাঠান। Faruque Ahmed, Bengal Politics in Britain : Logic, Dynamics and Disharmony, New York : Creation, 2013, Pp99-100 এবং ফারুক আহমদ, বিলাতে বাংলার রাজনীতি, ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশ, ২০১২, পৃষ্ঠা : ১২৭-১৩১)। তিনি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে, ফরিদপুর-২ আসন থেকে ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে বৃহত্তর ফরিদপুরে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগঠিত করেন (আবু সাঈদ খান, মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর, ঢাকা : সাহিত্য বিকাশ, ২০১০, পৃষ্ঠা-৪৫), প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন (মুজিবনগর তালিকা-ক্রমিক নং-৩০৯ বাংলাদেশ গেজেট, তারিখ : ১১ মার্চ ২০০৪, লাল মুক্তিবার্তা, পৃষ্ঠা-৪১, মুক্তিযোদ্ধা ক্রমিক নং : ০১০৮০৪০০৭৫, জেলা ফরিদপুর, মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকাÑ মুক্তিযোদ্ধা ক্রমিক নং-১৯৭৮ বাংলাদেশ গেজেট ৫ জুন ২০০৫; প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা সনদ ক্রমিক নং : ২৩৭৫৫ : ৭ মার্চ ২০০০)।
স্বাধীনতার পর গণপরিষদের সদস্য হিসেবে সংবিধান প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন ও সংবিধানে স্বাক্ষর দান করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর একান্ত আগ্রহ এবং সালেহউদ্দিনের পরামর্শে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে লাহোরে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন (শেখ শওকত হোসেন নিলু : পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ : আমার দেখা রাজনীতির ৪৩ বছর, ঢাকা : নিউ লাইট বুক সোসাইটি, ২০০৯, পৃষ্ঠা : ১১০-১২)। ১৯৭৫ সালের বাজেট বক্তৃতায় তিনি বঙ্গবন্ধুকে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সাবধান করে সংসদে বলেছিলেনÑ ‘মাননীয় স্পিকার এই বাজেটে আমার বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পাচ্ছি’ (জাতীয় সংসদ বিতর্ক, বাজেট অধিবেশন, জুন, ১৯৭৫)।
উল্লেøখ্য, তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে বরিশাল থেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বসে ম্যাট্র্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। স্বৈরাচারী আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন মেয়াদে ৯ বছর কারাবরণ করেন এবং সরকারের কড়া নজরদারিতে থাকেন। তিনি মাত্র ৪৫ বছর বয়সে নিঃস্ব অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তিনি পরিবারের জন্য কোনো বিষয়-সম্পত্তি রেখে যাননি। এই জাতীয় নেতার নামে স্থাপনা-সড়কের আজো নামকরণ করা হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মরহুম ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মরহুমের অবদান নিয়ে দেশ-বিদেশে বহু গ্রন্থ বের হয়েছে, শুরু হয়েছে গবেষণা। কর্তৃপক্ষের কাছে নিবেদন, মরহুম ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের নামে সরকারিভাবে কোনো স্থাপনা বা সড়কের নামকরণ করা হোক।
আবদুুল মান্নান
সুনামগঞ্জ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা