পুরনো পেনশনারদের দুর্ভোগ
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০৩
করোনা মহামারীতে সরকারি-বেসরকারি খাতের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। তাদের অনেকের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড স্থবির। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি মানুষের মনোবল চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করেছেন।
বয়োবৃদ্ধ যারা পেনশন পান করোনাকালে, তাদের অবস্থা খুবই করুণ। কারণ বার্ধক্যের সাথে সাথী হয় নানা দুরারোগ্য ব্যাধি। হৃদরোগ, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, কিডনি সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে তারা ভুগে থাকেন। জানেন, ভোগান্তি ও ব্যয়ের বহর কত বেশি। কোনো কোনো রোগের ওষুধ সারা জীবন খেতে হয়। এ বয়সে তারা না পারছেন কিছু আয় করতে, না পারছেন চিকিৎসাব্যয় বহন করতে। করোনাকালে তাদের দেখভাল করার মতো সন্তান ও স্বজনদের আয় কমে যাওয়ায় বা বন্ধ হওয়ায় তারা বাড়তি ব্যয় করতে পারছেন না।
বর্তমান আমলে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্ত হবার পর নিয়মিত পেনশনারদের মতো মাসিক পেনশনসুবিধার আওতায় তাদের আনা হয়েছে। তারা পেনশন সুবিধার পাশাপাশি চিকিৎসাভাতা, উৎসবভাতা, বৈশাখীভাতা এবং ১ এপ্রিল ২০১৮ থেকে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। এই সরকারের যুগান্তকারী কর্মসূচির মধ্যে বৈশাখীভাতার প্রচলন বিশেষভাবে উল্লেøখযোগ্য। পেনশন সমর্পণকারীদের দুর্দশা লাঘবের লক্ষ্যে এ সদিচ্ছা স্মরণীয় সিদ্ধান্ত।
সরকারি কর্মচারীরা বর্তমান শাসন আমলে দফায় দফায় পদোন্নতি, চাকরির বয়স বৃদ্ধি, দুই দফা বেতনভাতা বৃদ্ধি, গাড়ি ও বাড়ির জন্য সুদমুক্ত ঋণ, রেশন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। কোনো ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ৩০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা পুলিশ বাহিনীর মনোবল চাঙ্গা করেছে। আর কোনো আমলে সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশের জন্য এত সুযোগ-সুবিধা জোটেনি।
অবসরে গেলে মাসিক চিকিৎসাভাতা এক হাজার ৫০০ টাকা এবং ৬৫ বছর বয়স হলে দুই হাজার ৫০০ টাকা দেয়া হয়। এই হার ও ধাপ বাড়ানো দরকার। আমি নিজে অষ্টম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা। ২০০২ সালে অবসের যাই। এখন চিকিৎসাভাতা ও মূল পেনশন মিলে পাই ১২ হাজার ২১২.৫৩ টাকা। যারা ২০১৪-১৫ সালের পর অবসরে যাচ্ছেন, তারা ৩০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে পাচ্ছেন। এই বৈষম্য মানবিক মর্যাদা ও সমতাকে অসম্মানিত করা এবং সমগ্রেডভুক্তদের মর্মবেদনার কারণ।
চিকিৎসাব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা এবং মহার্ঘ্যভাতা বিবেচনায় ৬৫ বছর বয়স হলে পাঁচ হাজার টাকা, ৭৫ বছর বয়সে সাত হাজার টাকা এবং ৮০ বছর বয়সে ১০ হাজার টাকা চিকিৎসাভাতা নির্ধারণ করা যেতে পারে। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক পেনশনারের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে অসাম্প্রদায়িক ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতায় অর্থনীতি স্থিতিশীল ও চলমান রয়েছে। মানবিক কারণে পুরনো পেনশনারদের নতুন স্কেল অনুযায়ী ভাতা দেয়া প্রয়োজন। নতুন স্কেল অনুযায়ী পেনশন ও চিকিৎসাভাতার হার ও ধাপ বাড়ানোর বিষয় কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদারতা ও মহানুভবতা কামনা করি।
মাসুদ আহমদ
বেলাব, নরসিংদী
পুরনো পেনশনারদের দুর্ভোগ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা