২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণে বিড়ম্বনা

-

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আখাউড়ায় অবস্থিত স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবনগুলো দীর্ঘ দিন ধরে জরাজীর্ণ ও পুরনো। আধুনিকতার কোনো বালাই নেই। সেখানকার ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবনগুলো এতই বেহাল যে, ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে আর ভবনগুলো ড্যাম্প হয়ে পড়েছে। স্যাঁতস্যাঁতে এই ভবনগুলো বারবার সংস্কারে হাত না দিয়ে সরকার নতুন করে আখাউড়া ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ভবণ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় দুই বছর আগে এর কাজ শুরু হলেও ভারতীয় বিএসএফের হস্তক্ষেপে কাজগুলো বন্ধ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে। দফায় দফায় বাধার মুখে মাথা তুললে পারছে না আখাউড়া স্থলবন্দরে নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবনগুলো। দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের গড়িমসির কারণে প্রায় তিন বছর এ কাজ বন্ধ রয়েছে। দেখার কেউ নেই। অথচ বিএসএফ ও বিজিবি উভয়ের মহাপরিচালক বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে তা সমাধান করা তেমন কোনো ব্যাপারই নয়। প্রয়োজনে মন্ত্রীপর্যায়ে আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, সীমান্তের দেড় শ’ গজের মধ্যে এই স্থাপনা নির্মাণকাজে ভারতের পক্ষ থেকে বাধা আসছে। অথচ তারা জিরো পয়েন্টের দেয়াল ঘেঁষে এ ধরনের ভবন নির্মাণ করেছে তখন তারা কোনো বাধাই মানেনি। আর আমরা যখন নতুন ভবন প্রয়োজনে নির্মাণের কাজ শুরু করি তখন একের পর এক বাধা আসা বোধগম্য নয়। বর্তমানে আখাউড়া বন্দরের বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবন দু’টি বসবাস ও কাজের জন্য একেবারে অযোগ্য।
২০১৬ সালে আখাউড়া স্থলবন্দরে ছয়তলা ভবন নির্মাণ প্রথম বিএসএফের বাধার মুখে পড়ে। পরে আলোচনাসাপেক্ষে শুধুু দোতলা করার অনুমতি দিলেও এখনো বাধা আর বাধা। সেই দোতলা করার শর্ত বাংলাদেশ মেনে নিলেও, দীর্ঘ দিন হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনো সে কাজে সম্মতি দেয়নি। কী অবাক করা কথা, আমাদের কাজে বাধা দিলেও তারা কিন্তু জিরো পয়েন্টে তাদের আধুনিক ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবন ও অন্যান্য স্থাপনার নির্মাণকাজ বাংলাদেশের বাধা অমান্য করেই শেষ করেছে। এখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদের দোতলা করার ব্যাপারে সম্মতিদানে শুধু সময়ক্ষেপণ করছে। বাংলাদেশকে এ নির্মাণকাজ করতে দিচ্ছে না বিএসএফ। এ দিকে ভবন উঁচু করতে আপত্তি থাকায় পাশে বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করতে গিয়েও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বাধার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। সময় সময় জিরো পয়েন্ট ক্রস করে এসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী এ কাজে বাধা দেয়। পরে বিজিবি জিরো পয়েন্টে তাদের নিত্যনতুন ভবন নির্মাণে আপত্তি জানালে তা ধোপে টিকছে না। সবশেষে বাধা দেয়ার পর ব্রাহ্মণবাড়ীয়া পুলিশ আগরতলায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ভবন নির্মাণে সহযোগিতা চেয়েছে।
দেয়াল ঘেঁষেই ভারতীয়রা নানান স্থাপনা নির্মাণ করছে। এমনকি সেখানে নতুন করে বিএসএফের ব্যারাক ও সম্মেলনকক্ষ নির্মাণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় এ কাজে বিজিবির আপত্তিতে বিএসএফ কর্ণপাত করে না। বিজিবি ও বিএসএফ আলোচনায় বসলেও কোনো লাভ হয় না। দিল্লি থেকে অনুমোদন না আসা পর্যন্ত আখাউড়া স্থলবন্দরের সব নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার জন্য বিএসএফ আখাউড়ায় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। বিষয়টি আমাদের পররাষ্ট্র বা স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয় অবগত আছে কি না জানি না। তবে দুই-তিন বছর ধরে ঘন ঘন বাধার মুখে বাংলাদেশ কাজ করা দূরের কথা, নির্মাণকাজের অগ্রগতি মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের অবহেলা ও উদাসীনতাকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আশা করি, উভয় দেশের বন্ধুত্বের কথা চিন্তা করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আখাউড়াস্থ স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের আধুনিক ভবন নির্মাণে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে।
মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
আহ্বায়ক, সচেতন নাগরিক সমাজ
১৭, ফরিদাবাদ-গেণ্ডারিয়া, ঢাকা-১২০৪
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement