২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলাদেশে আয়কর হার

-

বাংলাদেশে আয়কর হার সবচেয়ে বেশি এমনকি অনেক উন্নতশীল দেশের চেয়েও অনেক বেশি। জনমনে এজন্য তীব্র ক্ষোভ থাকলেও আজ অবধি কোনো শাসক বা নীতিনির্ধারকরা কখনো এর বাস্তব দিক ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে আয়কর হার সবচেয়ে বেশি। ১৬-১৭ কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র ১২-১৪ লাখ মানুষ আয়কর দিয়ে থাকে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন মানুষ কর কেন দিবে? সিঙ্গাপুরে আয়করের হার ১৫ শতাংশ, হংকংয়ে ১৭ শতাংশ, বাংলাদেশে তা ৩৫ শতাংশ এবং ব্যক্তিপর্যায়ে ২৫ শতাংশ। এটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হলে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে। তিনি আরো বলেন, করের হার বাড়ালে বরং আদায় কমে। রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের যে দায়িত্ব তার অন্যতম হলো আয়কর প্রদান করা, আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রত্যেক মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানসহ মানবাধিকার এবং অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা, কিন্তু আমরা পাচ্ছিটা কী? অন্যদের কথা বাদ দিলাম; যারা নিয়মিত বর্ধিত হারে এই আয়কর দিচ্ছেন তাদের ব্যাপারেও কি সরকারের কোনো দৃষ্টি আছে? যারা আয়কর দেন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেই ১২-১৪ লাখ মানুষের জন্যও কি কোনো আলাদা ব্যবস্থা আছে? অথচ তাদের দেয়া আয়কর দিয়েই এই দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। কিন্তু কখনো রোজগার বন্ধ হয়ে যায় সেই আয়করদাতার। তার ব্যবসায়ের বা সংসারের চাকা যখন বন্ধ হয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পথে নামেন, তখন রাষ্ট্র কি আর্থিক সাহায্য নিয়ে তার পাশে দাঁড়ায়? যেসব দেশের অনুকরণে আমাদের দেশের আয়করের হার এত উচ্চপর্যায়ে সেসব দেশের সরকার প্রতিটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থাসহ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সবধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে। অথচ উচ্চ হারে কর দিয়ে এ দেশে আমরা কী পাচ্ছি? মাননীয় অর্থমন্ত্রী সাহেবের কথাই সঠিক, আমাদের দেশের কর হার কোনো অবস্থায়ই ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। তাহলে মানুষ কোনো রকম লুকোচুরির আশ্রয় না নিয়ে কর প্রদানে আগ্রহী হবে। প্রতি বছর বর্ধিত বাজেটের চাহিদা মেটাতে কর কর্মকর্তাদের ওপর অধিক রাজস্ব আদায়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের চাপ বাড়ে, আর সে চাপ গিয়ে পড়ে পুরনো করদাতা অর্থাৎ যারা কর দিচ্ছেন তাদের ওপর। তখন তারা কর কর্মকর্তাদের দ্বারা ফাইল অডিটসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। একে তো করহার অত্যধিক, অন্য দিকে মানুষ মনে করে, একবার করের জালে আটকা পড়লে প্রতি বছর করকর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হয়। অথচ কর হার কম হলে অধিকসংখ্যক মানুষ কর প্রদানে উৎসাহী হবে এবং সাবিকভাবে কর আদায় বৃদ্ধি পাবে।
মো: আমিনুল ইসলাম চৌধুরী
সড়ক নং ৩, বাড়ি ১৮/এ, ব্লক, ই, নিকেতন, গুলশান-১


আরো সংবাদ



premium cement