শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বিদায় নিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৪ মে ২০২৪, ২১:৫০
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীকে ভালোবাসা ও ফুলেল শ্রদ্ধায় বিদায় জানিয়েছেন সহকর্মীরা। দীর্ঘ সাড়ে চার দশকের কর্মস্থল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরবিদায় নিয়েছেন তিনি। নামাজে জানাযায় অংশ নিয়ে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন হাজারো আইনজীবী ও বিচারপতি।
শনিবার বাদ আসর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মরহুমের জানাযায় অংশ নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, তিনি এমনই এক পরিবারের সন্তান। যার বাবা বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন এবং সুপ্রিমকোর্ট বারের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। তিনিও নিজে অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন এবং সুপ্রিমকোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এমনটি আর পাবেন কিনা বলা মুশকিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এম এইচ খন্দকারকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করেন। তারই সন্তান এই মোহাম্মাদ আলী সাহেব। আইনজীবী থাকাকালে আমরা তখন যাকে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে নিতাম তার মধ্যে মাহবুবে আলম সাহেব এবং এ জে মোহাম্মাদ আলী সাহেব অন্যতম। এ জে মোহাম্মাদ আলীর সাথে আমার অনেক স্মৃতি আছে। তিনি নিতান্ত একজন ভদ্রলোক ছিলেন। তিনি বড় মাপের মানুষ ছিলেন।
এ সময় তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট বারের যে সভাপতি মৃত্যুবরণ করবেন, তার লাশ যেন সুপ্রিমকোর্ট বারে আনা হয়, ওই উদ্যোগ নিতে হবে।
এছাড়া এ জে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে রোববার আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, রোববার কোর্ট বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
জানাযায় অংশ নিয়ে প্রবীণ আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, তিনি অত্যন্ত উঁচু মাপের ব্যক্তি ও আইনজীবী ছিলেন। তার বক্তব্য আইনের প্রতি শ্রদ্ধার উজ্জল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আইন জগতের অব্যাহত উন্নতির জন্য তার প্রয়োজন ছিল।
মরহুমের দীর্ঘ দিনের সহকর্মী বিএনপির ভাইচ চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, তিনি আইনের জগতের উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন। তিনি অত্যন্ত প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন। তার সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। আমরা একইসাথে লেখা পড়া করেছি। একজন ভালো মানুষ, এক্সসিলেন্ট পার্সন ছিলেন তিনি।
বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, গত ৩ এপ্রিল ছিল এ জে মোহাম্মদ আলী স্যারের শেষ কর্মদিবস। ওইদিন তিনি শিশু নুরজাহান নূরীর ও আকলিমার মা হাফসা আক্তারের জামিন আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে তার সারাদিন কেটে যায়। তিরি সারা জিবন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
শনিবার বাদ আসর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক ও বর্তমান বিচারপতিবৃন্দ, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, প্রবীন আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বিএনপির ভাইচ চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক শাহ মনজুরুল হক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিত্ব এবং মরহুমের আত্মীয় স্বজন জানাযায় অংশ নেন।
জানাযার পূর্বে মরহুম এজে মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়ে তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
দ্বিতীয় জানাযা শনিবার বাদ আছর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জানাযা শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বনানী কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজার পূর্বে বিশিষ্ট আইনজীবী মরহুম এ জে মোহাম্মদ আলীর জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক। এ জে মোহাম্মদ আলীর কর্মজীবনের উপর স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এছাড়া জানাজা শেষে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ জে মোহাম্মদ আলীর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, প্রথিতযশা আইনজীবী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবদুল জামিল (এ জে) মোহাম্মদ আলী বৃহস্পতিবার দুপুরে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। চিকিৎসার জন্য গত ২৮ এপ্রিল সকালে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় এ জে মোহাম্মদ আলীর লাশ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। শনিবার বাদ জোহর ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে মরহুম এ জে মোহাম্মদ আলীর প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবদুল জামিল মোহাম্মদ আলী (এ জে, মোহাম্মদ আলী) ১৯৫১ সালের ১৫ ডিসেম্বর নওগাঁ জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার বাড়ী বগুড়া জেলায়। তার পিতা বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল মরহুম এম এইচ খন্দকার। মরহুম এম এইচ খন্দকার বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৯৫২-১৯৫৩ সালে সম্পাদক এবং ১৯৬৪-১৯৬৫ ও ১৯৭১-১৯৭২ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২১ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখ থেকে ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭২ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম এটর্নী জেনারেল ছিলেন।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী তিনি ১৯৭৮ সালে ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। তিনি ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০ তারিখে হাইকোর্টের সনদ লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত হন ও ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৯ তারিখে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সহিত নিয়মিত আইন পেশা পরিচালনা করেছেন।
তিনি ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশের অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এর দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে থেকে ২০০৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশর ১২তম এটর্নি জেনারেল। তিনি ২০১৩-২০১৪ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সদস্যদের জন্য তিনি সভাপতি থাকাকালীন উনার পিতা মরহুম এম এইচ খন্দকার নামে ২৫ লাখ টাকার একটি ট্রাস্ট করে গিয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন এবং বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী এক ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা