২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কারাগার থেকে স্বজনদের সাথে ফোনে কথা বলেন হাজতিরা

কারাগার থেকে স্বজনদের সাথে ফোনে কথা বলেন হাজতিরা - সংগৃহীত

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আটক বন্দীরা তাদের স্বজনদের সাথে টেলিফোনে সরাসরি কথা বলতে পারছেন। প্রতি মাসে দু’বার ১০ মিনিট করে মোট ২০ মিনিট তারা কথা বলছেন। এর জন্য প্রতি বন্দীর প্রিজনারস ক্যাশ অ্যাকাউন্ট থেকে কারা কর্তৃপক্ষ ২০ টাকা কেটে নিচ্ছে। কথোপকথনের পুরো তথ্যই কর্তব্যরত কারারক্ষীরা মনিটরিং করছেন। তবে টেলিফোনে কোনো জেএমবি বা শীর্ষ সন্ত্রাসীকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। 

কারাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাইলট প্রজেক্টটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ৬৭ কারাগারে চালু করা হবে। তবে ২০২২ সালের মধ্যে সব কারাগারে এই পদ্ধতি চালু করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। 

২০১৮ সালের ২৮ মার্চ টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাইলট প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। 

এ প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের সুপার মো: মঞ্জুর হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, যখন শুরু করেছিলাম তখন প্রথম দিকে আশঙ্কা করেছিলাম কেউ কোনো এবিউস করার চেষ্টা করে কি না। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। 

তিনি বলেন, একজন বন্দী তার স্বজনের সাথে মাসে দু’বারে মোট ২০ মিনিট কথা বলতে পারেন। তবে মহিলা বন্দীর সাথে অনেক সময় সন্তান থাকে। যদি প্রয়োজন থাকে তা হলে তাদেরকে দু’বারের বেশিও কথা বলিয়ে দেয়া হয়। দু’বারে কথা বলার জন্য বন্দীকে ২০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কোনো বন্দী যদি নতুন আসে, যার এখনো টাকা আসেনি, আত্মীয়স্বজন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেননি, তখন তাদেরকে আমরা ফ্রি কথা বলিয়ে দেই। এক প্রশ্নের উত্তরে জেল সুপার বলেন, কারাগারে মোট চারটি টেলিফোন বুথ রয়েছে। ৪৬৭ জন ধারণ ক্ষমতার এ কারাগারে প্রতিদিন গড়ে ১১৫০ বন্দী থাকে। এর মধ্যে আমরা গড়ে ৩৫-৪০ জন বন্দীকে টেলিফোনে সরাসরি স্বজনদের সাথে কথা বলাতে পারছি। কথোপকথন কিভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের দু’জন কারারক্ষী সার্বক্ষণিক টেলিফোন বুথে ডিউটিতে থাকেন। মহিলা বন্দীরা টেলিফোনে কথা বলতে গেলে সাথে মহিলা রক্ষী যান। 

টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করার নিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিকটাত্মীয়রা আমাদেরকে দু’টি নম্বর দেন। এটি পরিবারের সদস্যের নম্বর হতে হবে। এটি দিয়ে বন্দীরা যেকোনো জায়গায় কথা বলতে পারবেন না। যেহেতু সিস্টেমের নামটা হচ্ছে ‘স্বজন’। তারা শুধু তাদের পরিবারে সদস্যদের সাথে কথা বলবে বর্তমানে। আমরা বন্দীর দেয়া নম্বর দু’টি কল করে ভেরিফাই করে দেখি ঠিক আছে কি না। এরপর কল করতে দেই। তিনি বলেন, বন্দী নিজে সরাসরি কিন্তু কোনো কল ডায়াল করতে পারেন না। তিনি যখন বুথে গিয়ে রিসিভারটা উঠান, তখন তিনি সেখানে একটা পিন নম্বর দেন। তার হাতে থাকে হাজতি বা কয়েদি নম্বর। পিন নম্বর দিলে তার সিস্টেমে সেভ হয়ে আছে তার বাবা-মা বা ভাইবোনের নম্বর। সে অনুযায়ী সিস্টেমটাকে বলে যে, মা-বাবার সাথে কথা বলতে চাইলে এক চাপুন, স্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাইলে ২ চাপুন, সেই অনুযায়ী বন্দী শুধু ডায়ালে গিয়ে ওয়ান বা টু চাপ দেন। পরে সিস্টেম থেকে ডায়াল হয় এবং তিনি কথা বলতে পারেন। এই দশ মিনিটের মধ্যে তিনি দু’জনের মধ্যে অদল বদল করে যত ইচ্ছা কথা বলতে পারেন। ১০ মিনিট পর অটোমেটিক কল কেটে যায়। কল কেটে যাওয়ার ৩ মিনিট আগে একটি রিমাইন্ডার দেয়া হয়, আপনি এই সময়ের মধ্যে জরুরি কথা শেষ করুন। 

তিনি জানান, বন্দীর যে দিন কথা বলার শিডিউল তার আগের দিন স্বজনের কাছে একটা মেসেজ চলে যাবে। মেসেজে বলা হয়, আপনার ভাই বা বাবা এতটার সময় কথা বলবেন, আপনি ফ্রি থাকুন, ফোনটা হাতের কাছে রাখুন। 
টেলিফোনে বন্দীরা কী ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে জেল সুপার মো: মঞ্জুর হোসেন বলেন, জয়ীতা মান্না নামের একজন ভারতীয় নাগরিক বিজনেস ভিসায় বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। বাংলাদেশী একটি মেয়েকে অপহরণ করে ভারতে পাচারসংক্রান্ত একটি অভিযোগে তিনি কারাগারে আসেন। যেহেতু তার ফ্যামিলি থাকে ইন্ডিয়াতে, তিনি খুব ওরিড ছিলেন তার ফোন বন্ধ পাবেন। বাবা-মা দুশ্চিন্তা করবেন। পরে তার এখানে লোকাল একজন আত্মীয়ের নম্বরে আমরা কথা বলিয়ে দেই এবং তিনি তার মেসেজটা মা-বাবাকে পৌঁছে দেন এবং একটা টেনশন থেকে তার ফ্যামিলি মুক্তি পায়। বন্দীরা মানসিকভাবে প্রশান্তিতে থাকলে আমাদের লাভ। তারা সুশৃঙ্খল থাকে। 

টেলিফোনে বন্দীদের কথা বলানোর জন্য টাঙ্গাইল কারাগার কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটার অর্থায়ন পেয়েছি এ টু আই এর সার্ভিস ইনোভিশন ফান্ড থেকে। এই আইডিয়ার প্রস্তাবক ছিলাম আমি। এই সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। এক বছরের জন্য। তবে এ নিয়মে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি আইনজীবীদের সাথে কথা বলতে দেয়া হবে কি না সেটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। বর্তমানে এই সিস্টেমে জেএমবি বা কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী কথা বলতে পারে না। যদি ভবিষ্যতে তাদেরকেও সরকার সুযোগ দিতে চায় সেটিও সম্ভব। কারণ এটাও মনিটরিংয়ের মধ্যে থাকবে বলে জানান তিনি। 

বর্তমানে টাঙ্গাইল কারাগারে সরাসরি টেলিফোনে কথা বলার প্রকল্প ছাড়াও বন্দীদের জন্য একটা ইন্টারকম সিস্টেমে সাক্ষাৎকার চালু আছে। ইন্টারকম সিস্টেমে মাঝখানে একটা গ্রিল থাকে। দুই সাইডে গ্লাস থাকে। বন্দী একজন আরেকজনকে দেখতে পারবে। মাঝখানে কোনো ফাঁকা থাকে না। কাচ দিয়ে ভরাট থাকে। ফলে মাদকসহ কিছু আদান-প্রদানের সুযোগ থাকে না। এমন একটি ইন্টারকম সিস্টেম চালু করেছি পরীক্ষামূলক। সারা দেশের কারাগারে কবে নাগাদ এটি চালু করা যাবেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি নিয়ে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২০২১ সালের মধ্যে করার একটা পরিকল্পনা ছিল। সাম্প্রতিক একটা মিটিংয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব ২০২২ সালের মধ্যে সব কারাগারে ধাপে ধাপে প্রকল্পটি শেষ করতে বলেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিল মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা সুদানে গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা আগের হিসাবকে বহুগুনে ছাড়িয়ে গেছে, বলছে গবেষণা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা : যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২০ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ নিহত আইনজীবীকে নিয়ে অপপ্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম : প্রেস উইং হিজবুল্লাহ-ইসরাইল অস্ত্র-বিরতি চুক্তি জয় দিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু করতে চায় টাইগ্রেসরা সহজ জয়ে সিরিজে সমতা পাকিস্তানের ইসলামাবাদের বিক্ষোভের স্থগিত ঘোষণা পিটিআইয়ের নিটওয়্যারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে চিশিং ‘বাংলাদেশ নাইট’ অনুষ্ঠিত হিজবুল্লাহর সাথে অস্ত্র-বিরতি চুক্তি অনুমোদন ইসরাইলের

সকল