আবরার হত্যার আসামিসহ ৫৩ ফাঁসির আসামির খোঁজ নেই
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩০
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৫৩ জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ ১৫১ জন আসামির খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। গত বছর ৫ আগস্টে আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কারা বিদ্রোহ করে তারা পালিয়ে গিয়েছিল। এসব আসামির মধ্যে বুয়েটের বহুল আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও আছে। এ কারণেই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন (৬ আগস্ট) কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে থেকে মোট ২০২ জন আসামি পালিয়ে গিয়েছিল। এদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিল ৮৮ জন।
কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন জানান, ‘ওই সময়ে যারা পালিয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে ৫১ জনকে আমরা ফেরত পেয়েছি। এদের মধ্যে ৩৫ জন বিভিন্ন মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।’
তবে এখনো যারা পালিয়ে আছে, তাদের মধ্যে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি ছাড়া আলোচিত আর কোনো মামলার আসামি নেই বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
মুনতাসিরের পালিয়ে যাওয়ার খবর সোমবার গণমাধ্যমে আসার পর রাতে বুয়েটে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে একদল শিক্ষার্থী। রাতেই এক সংবাদ সম্মেলনে তারা পালিয়ে যাওয়া আসামিকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। তখন ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় বুয়েটসহ সারাদেশে তুমুল অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল।
ওই ঘটনায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল বিচারিক আদালত।
বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির আল জেমিসহ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই বর্তমান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের সময় যে কয়েকটি ঘটনায় দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডকে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অনেকে।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি সোমবার শেষ হয়েছে। এখন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছে হাইকোর্ট।
এর মধ্যেই সোমবার ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির কারাগার থেকে পালানোর খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যার জের ধরে রাতে বুয়েটে বিক্ষোভে নামে একদল শিক্ষার্থী।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরদিন ওই আসামি জেল থেকে পালিয়েছে বলে সোমবার বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ এবং ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন।
আবরারের বাবা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘সোমবার শুনানির শেষ পর্যায়ে বিচারপতি জানতে চান, কোন কোন আসামির পক্ষে কোন কোন আইনজীবী আছেন। তখন সেখানেই জানানো হয় যে কাশিমপুর কারাগার থেকে মুনতাসির আল জেমি পালিয়েছে।’
তিনি জানান, গত ৬ আগস্ট ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালালেও সোমবারই প্রথম তিনি তা জানতে পারেন আদালতে মামলার শুনানির সময়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসীমউদ্দিন জানান, জেমির সাথে জেলে থাকা আরেক আসামির মাধ্যমেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে গত আগস্টে পালিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, একইসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী ও কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেও বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাইয়াজ লিখেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেমি জেলখানা থেকে পালিয়ে গেছে ৫ আগস্টের পরে। অথচ আমাদের জানানো হচ্ছে আজকে, যখন ওর আইনজীবী কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে আসেনি তখন। ফাঁসির আসামির তো কনডেম সেলে থাকার কথা ছিল, সে পালায় কিভাবে!’
কারাগার থেকে কিভাবে পালালো জেমি
কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন জানান, ওই কারাগার থেকে যে ২০২ জন পালিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৮৮ জন ফাঁসির আসামির পাশাপাশি ১১ জন ছিল বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর বাকি ১০৩ জন বিভিন্ন মামলায় বিচারাধীন ছিল।
কারা কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ওই কারাগার কমপ্লেক্সের ভেতরে মোট চারটি কারাগার আছে, যার একটি নারী আসামিদের জন্য।
এর মধ্যে হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, উগ্রবাদী, ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামিদের পাশাপাশি কিছু রাজনৈতিক মামলার আসামিদেরও রাখা হয়।
আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন এই হাই সিকিউরিটি কারাগারের রক্ষীদের জিম্মি করে একদল কয়েদী তাদের মুক্তি দাবি করে।
তখন কারাগারের নিরাপত্তায় সেনাসদস্যরাও নিয়োজিত ছিলেন। তারাও বন্দিদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
এক পর্যায়ে বিদ্রোহী বন্দিরা একটি দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে এবং মই ব্যবহার করে দেয়ালের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারারক্ষীরা গুলি করে। পরে হেলিকপ্টারে করে আরো সেনা সদস্য সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন।
ওই ঘটনার সময় গুলিতে হোলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের মামলার দু’জন আসামিসহ মোট ছয় জন নিহত হয়।
এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় যে মামলা করে সেখানে বলা হয় ‘কারাগারের দেয়াল ভেঙ্গে ও বিদ্যুতের পোল উপড়ে ফেলে মই বানিয়ে কারাগারের দেয়াল টপকে ২০৩ জন পালিয়ে যায়’। যদিও এখন কারা কর্তৃপক্ষ বলছেন এই সংখ্যা আসলে ২০২ জন।
ওই দিনের এ ঘটনায় যারা পালিয়ে ছিলেন তাদেরই একজন হলেন আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি মুনতাসির আল জেমি।
জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলছেন এখনো যারা পালিয়ে আছে তাদের ধরতে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে এবং ওই সরকারের পতনের আগে পরে সারাদেশে কমপক্ষে ১৭টি কারাগারে হামলা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির ঘটনা ঘটেছিল।
তখন আটটি কারাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলে জানিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া তখন কাশিমপুর ও নরসিংদী কারাগারসহ পাঁচটি কারাগার থেকে বন্দিদের পালানোর ঘটনা ঘটেছিল।
১৯ জুলাই নরসিংদী কারাগারে হামলার ঘটনার পর সেখানে থাকা সব বন্দির পালানো ও অস্ত্র লুটের ঘটনা তখন ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল।
ওই ঘটনার পর গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কারা অধিদফতরে এক মতবিনিময় সভায় কারা মহাপরিদর্শক জানিয়েছিলেন যে কারাগার থেকে তখন উগ্রবাদী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯৮ জন পালিয়ে গিয়েছিল। এরমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত উগ্রবাদী ছিল নয়জন।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা