হেলিকপ্টার থেকে গুলি : র্যাবের সাবেক ডিজির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৪১
জুলাই-আগস্টে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে গণহত্যার অভিযোগে করা মামলায় র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন উর রশিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) প্রসিকিউশনের আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
এছাড়া আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পুড়িয়ে ফেলার মামলায় এস আই মালেক ও কনস্টেবল মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত সংস্থাকে অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ৫ জুন থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত র্যাবের ডিজি ছিলেন হারুন উর রশিদ। তার বিরুদ্ধে ওই সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা, নির্বিচারে মানুষকে হত্যা, প্ররোচনা, অধঃস্তনদের বাধা না দেয়ার অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ থাকার কথা জানিয়ে র্যাবের সাবেক ডিজির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানায় প্রসিকিউশন।
এছাড়া জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার এসআই মোহাম্মদ আবদুল মালেক ও কনস্টেবল মুকুল চোকদারের বিষয়েও আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবয়ুনাল।
দুপুরে ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় হেলিকপ্টার থেকে যে গুলি করা হয়েছে, তার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পেয়েছে।
র্যাবের যে ডিজি ছিলেন হারুন অর রশীদ, তিনি পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার যে নির্দেশ বা পরিকল্পনা ছিল, তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, র্যাবকে ব্যবহার করে তিনি এত ধরনের অপরাধ করেছিলেন, যার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পাচ্ছে। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য প্রসিকিউশনের কাছে আবেদন করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পিটিশন দিয়েছি। আদালত তাকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২৩ মার্চ আদালত এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন। এর আগে যখনই হারুনকে গ্রেফতার করা হবে, তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
তাজুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির অভিযোগ আছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করার যে নির্দেশনা ছিল, সেটি তার দেয়া। এছাড়া র্যাবের মাধ্যমে যেসব অপরাধ হয়েছিল, তা সবই তার নির্দেশনায় করা। তার অধীনস্থ যে কর্মকর্তারা ছিলেন, তাদের মাধ্যমে তিনি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। এ ধরনের সুশৃঙ্খল বাহিনীর কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি খুবই কঠিনভাবে মেনে চলা হয়। সুতরাং তিনি কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির দায়ে অভিযুক্ত।
তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধ যখন র্যাব কর্মকর্তারা করেছিলেন, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি বা তাদের কোনো শাস্তি দেননি। এই যে পাওয়ার টু প্রিভেন্ট বা পাওয়ার টু পানিশ, সেটিও তিনি ব্যবহার করেননি। উল্টোদিকে তিনি পরিকল্পনা করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। এসব অভিযোগই তার বিরুদ্ধে আছে, তদন্ত চলমান আছে। তার অধীনস্ত যে কর্মকর্তারা ছিলেন, তাদেরও আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
তাজুল ইসলাম বলেন, আজ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর অধিকাংশই পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং কিছু আছে সিভিলিয়ান (বেসামরিক)। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতারা আছেন। আর একমাত্র সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে জিয়াউল আহসান আছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, পাশাপাশি আশুলিয়াতে যে লাশ পোড়ানোর ঘটনা ছিল, সেখানকার দুই আসামি কনস্টেবল মুকুল ও এসআই মালেক, তারা দু’জনই ঘটনার সাথে যুক্ত। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। আদালত তাদের এক দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। ২৮ জানুয়ারি মুকুলকে ও ৩০ জানুয়ারি মালেককে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
সূত্র : ইউএনবি