১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা

আপিল শুনানিতে নির্মমতার বর্ণনা দিয়ে কাঁদলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী

লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের সাথে খালেদা জিয়া। - ছবি : সংগৃহীত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানিকালে খালেদা জিয়ার ওপর ঘটে যাওয়া নির্মমতার বর্ণনা দিয়ে আদালতে কেঁদেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। শুনানিতে তিনি বলেছেন, এটা সাধারণ কোনো মামলা নয়। এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয় এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়। উনাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। নিম্ন আদালতে বিচার চলাকালে উনাকে বসতে পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আমরা অনেক সময় আদালত উনার বসার চেয়ার নিয়ে গিয়েছি। তিনি আদালতের ওপর অনাস্থা দেয়ার পরও জোর করে উনার বক্তব্য নেয়া হয়েছে। ওই সময় প্রসিকিউশনও তার উপর নির্মমতা দেখিয়েছে। এসব আদালতের এসব রেকর্ড এবং তার আত্মপক্ষ সমর্থক করে দেয়া বক্তব্য তুলে ধরে এক পর্যায়ে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর ওইসময় ঘোটে যাওয়া নির্মমতার বর্ণনা দিতে দিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে আদালতে কেঁদে ফেলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

তিনি আদালতে বলেন, উনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। উনি ছেলেকে হারিয়েছেন। ৪০ বছরের বসতবাড়ি থেকে উনাকে বের করে দেয়া হয়। অপরদিকে দিনের পর দিন উনাকে আদালতে হেয় করা হয়েছে। যিনি পিপি ছিলেন তিনি আদালতে অপমানজনক ভাষায় কথা বলেছেন।

আজ বুধবার (৯ জানুয়ারি) এ মামলার আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। তবে এ মামলার অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল আপিল আবেদন করায় এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামি ১৪ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্য উপস্থাপন করার পর এ দিন ধার্য করেন। শুনানি শেষে একই মামলায় কাজী সালিমুল হক কামালের আপিল থাকায় আদালত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মূলতবি করেন।

বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও মোহাম্মদ অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে শুনানি করে আইনজীবী মো. আসিফ হাসান।

তৃতীয় দিনের শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আপিল মঞ্জুর করার আবেদন জানিয়ে বলেন, দুঃখজনকভাবে আমাদের পক্ষে শুনানি ছাড়াই সাজার রায় ঘোষণা করা হয়। আমরা শুনানির জন্য একদিন সময় চেয়েছিলাম তা দেয়া হয়নি। হাইকোর্ট সাজা বৃদ্ধি করে রায় দেন। তিনি বলেন, অথচ এটা একটা নো এভিডেন্সের মামলা।

আদালত থেকে বের হয়ে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, যে আদালতে খালেদা জিয়ার বিচার করা হয়, সেটা কোনো আদালত ছিল না। সেটা ছিল একটি মাদরাসা। সেখানে ঢুকতে এতে পারমিশন লাগত, আইনজীবীদেরও পারমিশন নিতে হত। এমনকি কোনো সময় চাইলে বলা হত উনাকে গ্রেফতার কর। এই অবস্থার মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার মামলা করতে হয়েছে। এই মামলায় নিম্ন আদালত দিয়ে ছিল ৫ বছর আর হাইকোর্ট সেই সাজা বৃদ্ধি করে ১০ বছর করে। কোনো এভিডেন্স ছাড়া, কোনো রেকর্ড এবং কোনো তথ্য প্রমাণ ছিল না নিম্ন আদালতের রায়ে। তারপরও এটা অত্যান্ত দুঃখের বিষয় হাইকোর্টে বিচারের নামে অবিচার হয়েছে। একতরফাভাবে ৫ বছরের সাজাকে ১০ বছরে উন্নিত করা হয়। এই রায়ে বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছি। তিনদিন শুনানি করেছি। আজ আমাদের শুনানি শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের, রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদকের পক্ষে শুনানি শেষ হওয়ার পরও কাজী সালিমুল হক কামালের একটি আপিল থাকায় আইনগত ক্রটি হতে পারে সেই কারণে আজ কোনো আদেশ হয়নি।

আদালত থেকে বের হয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করতে দেয়া হয়নি। জোর করে জেলখানায় ঢুকিয়ে রেখেছে। কতকিছু করেছে। অথচ আজকে তিনি আল্লাহর মেহেরবানিতে রাজকীয় বিমানে চিকিৎসা নিতে গেছেন।

দুদকের আইনজীবী মো. আসিফ হাসান বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, ট্রাস্টের টাকা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রয়েছে। কোনো আত্মসাৎ হয়নি। তিনি বলেন, শুনানিতে আমরা ফ্যাক্ট তুলে ধরেছি। ল’পয়েন্টে বক্তব্য দিয়েছি। এখন আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি বলেন, আজকে হয়ত শেষ হয়ে যেত। কিন্তু আজ চিহ্নিত হয়েছে এ বিষয়ে একটি আপিল শুনানি হয়নি। সে কারণে আগামী মঙ্গলবার আবারও শুনানি হবে।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন- মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আমিনুল ইসলাম, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, মো: মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ।

এরআগে গত মঙ্গল ও বুধবার খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিলের শুনানি করেন।

এর আগে গত ১১ নভেম্বর এ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা পৃথক দু’টি লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। একইসাথে তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ -এর বিচারক ড. মো: আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসাথে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদ- দেন আদালত।

পরে একই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ওই বছরের ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।


আরো সংবাদ



premium cement