প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৫
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো: শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১ আগস্ট ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর ১২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের উদ্দেশে অভিষেক বক্তৃতায় রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, সারাদেশের ডিস্ট্রিক্ট জুডিসিয়ারিসমূহ বিচার বিভাগের বিস্তৃত ক্ষেত্র। এ কারণে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও জবাবদিহিতামূলক বিচার বিভাগ গড়ার প্রত্যয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে দেশের বিচারকদের উপস্থিতিতে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।
প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ তুলে ধরেন, যাতে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণের বিষয়ে আলোকপাত করেন।
প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাস্তবায়নে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার আনয়ন বিষয় তুলে ধরেন। বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দকরণ, অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকল্পে এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিচার বিভাগে মেধার চর্চার উন্মেষ, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়ন, সকল প্রকার দুর্নীতি বিলোপের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক বিচারসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন রোডম্যাপে।
সোমবার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি তার ঘোষিত বিচার বিভাগীয় রোডম্যাপের বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে গত ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট হতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ -এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে হাইকোর্ট বিভাগ, অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ যথাযথরূপে পালনের উদ্দেশে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশের খসড়া, প্রস্তাবিত সচিবালয়ের অর্গানোগ্রাম এবং সম্ভাব্য সংস্কার সম্পর্কে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, সংবিধানের ৪র্থ তফসিলের অন্তর্গত ‘অন্তর্বর্তী ও সাময়িক বিধানাবলী’র দফা ৬(৬) অনুযায়ী অধস্তন আদালত সম্পর্কিত সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগের ২য় পরিচ্ছেদের বিধানাবলী যথাশিগগিরই সম্ভব বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।' তাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার আলোকে সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাবিত পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে অধস্তন আদালতের বিচারকগণের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, ছুটি ইত্যাদি বিষয়ে প্রচলিত দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটবে এবং বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপে অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। বদলি ও পদায়ন নীতিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে তা সম্পর্কে সারা দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকগণের মতামত আহ্বান করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি পত্র দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন আদালতসহ সব ট্রাইব্যুনালে ৩ নভেম্বর পাঠানো হয়েছে। খসড়া নীতিমালা সম্পর্কে অধস্তন আদালতের বিচারকগণের মতামত গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রহণ করা হয় এবং মতামত গ্রহণের সুবিধার্থে খসড়া নীতিমালাটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়। গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা ও দায়রা জজ আদালত হতে মোট ৫২টি মতামত পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাইক্রম করে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে অচিরেই আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
ঘোষিত রোডম্যাপের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলো বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে যে সব প্রক্রিয়া অনুসৃত হয় তা বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এই খসড়া সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিবৃন্দের মতামত গ্রহণের জন্য ১৪ নভেম্বর প্রেরণ করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত খসড়ায় উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য একটি জুডিসিয়াল এপোয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত প্রস্তাবিত জুডিসিয়াল এপোয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল সম্পর্কে বিচারপতিগণের ১৮টি লিখিত মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
এ সংক্রান্তে মোট ১৮টি লিখিত মতামত পাওয়া গেছে। প্রধান বিচারপতির সার্বিক তত্ত্বাবধানে মতামতসমূহ নিরীক্ষাপূর্বক খসড়া অধ্যাদেশটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচার সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতি গত ১৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তৃতা দেন। সুপ্রিম কোর্টের সেবা সহজীকরণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে ১২ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে ১২ দফা বাস্তবায়নে সুপ্রমি কোর্ট রেজিস্ট্রির বিভিন্ন শাখার গৃহীত পদক্ষেপ ও দাখিলকৃত অগ্রগতি প্রতিবেদন আজ মূল্যায়ন করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংক্রান্ত রোডম্যাপের আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কার্যক্রমগুলো বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সার্বিক মানোন্নয়ন এবং বিচার বিভাগের কার্যকর পৃথকীকরণের মাধ্যমে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা