২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩০, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সমালোচনার পর জেড আই খান পান্নাকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন

জেড আই খান পান্না - ফাইল ছবি

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জহিরুল ইসলাম খান পান্নার (জেড আই খান পান্না) বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর সোমবার তিনি ওই মামলায় আগাম জামিন পেয়েছেন।

জামিন পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘মামলাটি প্রভাবশালী কেউ করিয়েছিল। সরকারের ভেতর থেকেও হতে পারে, আবার বাইরে থেকেও হতে পারে। দুর্নীতিবাজ অনেকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, তাদের কেউও হতে পারে। কিন্তু এসব করে আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না।’

উচ্চ আদালতে জেড আই খান পান্নার জামিন পাওয়ার কিছুক্ষণ পরই খবর আসে যে, ওই মামলার বাদি মো: বাকের মামলার এজাহার থেকে তার নাম বাদ দিতে আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে তাকে ‘অজ্ঞতা ও ভুলবশত আসামি করা হয়েছে’।

খিলগাঁও থানায় ১৭ অক্টোবর দায়ের করা ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই আহাদুল ইসলামকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করা হয়।

বাদি মো: বাকের পরে গত কয়েকদিনে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, মামলায় কাদের আসামি করা হয়েছে সেটি তার জানা নেই এবং পান্নাকে তিনি চেনেন না।

যদিও এর আগে অনেকে অভিযোগ করছিলেন, মামলায় যে বা যারাই পান্নার নাম যুক্ত করুক না কেন এর পেছনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘রিসেট বাটন’ বিষয়ক একটি বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করা কিংবা পান্না সরকারের যেসব সমালোচনা করছিলেন সেগুলোই মূল ভূমিকা রেখেছে।

লেখক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলছেন, ঘটনাটি খুবই অপ্রত্যাশিত এবং যেভাবেই হোক এটি একটি ভুল বার্তা দিয়েছে জনমনে।

তবে সরকার প্রধান বা সরকারের সমালোচনার কারণেই তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পান্না বলেন, ‘সরকারের ভেতর কিংবা বাইরে যেকোনো জায়গা থেকেই এটি হতে পারে।’

রিসেট বাটন ও জেড আই খান পান্না

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

ওই সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রথমে স্বীকার করতে হবে যে ছাত্ররা বলেছে, আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; এভ্রিথিং ইজ গন; অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলবো। দেশের মানুষও তা চায়। সেই নতুন ভঙ্গিতে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংস্কার করতে হবে।’

তার এ বক্তব্যকে ঘিরে তখন ব্যাপক আলোচনা শুরু হয় সামাজিকমাধ্যমে। অনেকে অভিযোগ করেন এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইউনূস জাতীয় জীবন থেকে ১৯৭১ সাল কিংবা মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি সরিয়ে দিতে চাইছেন।

ইউনূসের ওই মন্তব্যকে ঘিরে পাল্টা যে মন্তব্যটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছিল সেটিই করেছিলেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘রিসেট বাটন কিন্তু আমরাও চাপতে পারি। আমরা ১৯৭১ সালে রিসেট বাটনে চাপ দিয়ে পাকিস্তানকে ওয়াশ-আউট করে বাংলাদেশ তৈরি করছি, সেভাবে আবারো রিসেট বাটন চাপ দিতে পারি।’

জেড আই খান পান্নার এই বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে সামাজিকমাধ্যমে। অনেকে এও বলছেন যে তার ওই বক্তব্য আওয়ামী লীগের পক্ষে গেছে। আবার আওয়ামী লীগপন্থী অনেকেই পান্নার বক্তব্য শেয়ার বা প্রচার করেছেন।

পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও রিসেট বাটন বিষয়ক মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়া হয়। ওই ব্যাখ্যায় বলা হয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেয়া সাক্ষাৎকার ঘিরে কেউ কেউ ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

‘রিসেট বাটন’ চাপার কথা বলে তিনি কখনোই বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেননি।

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আরো বেড়ে যায় ১৭ অক্টোবর পান্নাকে হত্যা মামলার আসামি করার পর। শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন এমন অনেকেই মামলায় পান্নাকে আসামি করার তীব্র সমালোচনা করেন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলছেন জেড আই খান পান্না আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং তার পুরো ইতিহাসই অধিকার রক্ষার পক্ষে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘তাকে ঘিরে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। ঘটনাটি মানুষের মধ্যে এমন ধারণা দেয় যে সমালোচনা করলে সমস্যা হতে পারে। এমনটি তো আওয়ামী লীগ আমলে হতো। এখন কেন ভয়ের মধ্যে থাকতে হবে। বরং সরকারের উচিৎ হবে সমালোচনা মানে সহায়তা এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা।’

তিনি আরো বলেন, আপনি সমালোচনা করতে পারবেন, কিন্তু শুধু আওয়ামী লীগের এটা হলে তো হবে না। সমালোচনা করতে হবে সরকারের ভুল ত্রুটি নিয়ে যাতে সরকার সঠিক পথে এগুতে পারে। না হলে তো সেই আগের মতোই পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।’

আরেকজন বিশ্লেষক অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ‘মন খুলে সমালোচনা’র আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু তার সাথে জেড আই খান পান্নার ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া ঘটনা মিলছে না।

তিনি বলেন, তিনি (জেড আই খান পান্না) সরকার প্রধান ও সরকারের সমালোচনা করেছেন। এখন হয়তো তুমুল সমালোচনার প্রেক্ষাপটে মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হচ্ছে। মামলায় সরকারের ভূমিকা থাকুক আর না থাকুক জনমনে এ ধারণাই তৈরি হয়েছে যে ওই সমালোচনার কারণেই তাকে হেনস্থা হতে হয়েছে।’

তার মতে ঘটনাটি আওয়ামী লীগের মতোই সরকারের সমালোচনার সুযোগ না দেয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছে।

আনু মুহাম্মদ বলছেন, বিরোধী বা সমালোচকদের মামলায় আসামি করা, হয়রানি করা কিংবা গণগ্রেফতার এগুলো ছিল পুরনো সরকারের বৈশিষ্ট্য, যা বর্তমান সরকারের কাছে কেউ প্রত্যাশা করে না।

তিনি বলেন, ‘মামলা ও গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিৎ। ঢালাওভাবে মামলা ও গ্রেফতারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
সেই আহসান কিবরিয়া অবশেষে বদলি কর্মকর্তাদের উচ্ছ্বাস নারায়ণগঞ্জে সেনাসদস্য হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস, প্রধান নির্বাহী স্নিগ্ধ ‘হেফাজত অরাজনৈতিক অবস্থান দৃঢ়তার সাথে বজায় রাখবে’ ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ কবে-কোথায় আঘাত হানতে পারে? রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবিতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ওয়াশিংটন আবুধাবি ও মস্কোতে রাষ্ট্রদূতদের চুক্তি বাতিল জনসম্পৃক্ততায় ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নতি সম্ভব স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়োগকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে ৩ ডাক্তার আহত বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের রাস্তা দেখেন : হাসনাত আবদুল্লাহ ববিতে হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের গায়েবানা জানাজা

সকল