২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩০, ১৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
কারাগার সংস্কার : বাস্তবতা ও করণীয় শীর্ষক কর্মশালা

১৫ বছর মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি : উপদেষ্টা আদিলুর

কারাগার সংস্কার : বাস্তবতা ও করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, বিগত ১৫ বছর মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি। ভয়ের সংস্কৃতি, ভয়ের শাসন ও ফ্যাসিবাদের কারণে স্বাধীনভাবে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর কারা অধিদফতরের কনভেনশন হলে ‘কারাগার সংস্কার : বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।

আইন, আদালত, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) ও কারা অধিদফতর যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো: মোতাহার হোসেন কারা সংক্রান্ত বিদ্যমান ব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো: রুহুল কুদ্দুস। আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির সদস্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো: জাহাঙ্গীর কবির, সাবেক কারা উপমহাপরিদর্শক মো: শামসুল হায়দার সিদ্দিকী।

এলআরএফ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক জাভেদ আখতার ও নিউ এজ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক শহীদুজ্জামান।

উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, মানবাধিকার নিয়ে রিপোর্ট করায় তাকে দুবার জেলে যেতে হয়েছে। প্রথমবার তাকে তুলে নেয়া হয় এবং রিমান্ডে শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। দ্বিতীয় বার মামলায় দু’বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

তিনি বলেন, কারাগারগুলোকে সংস্কারের চেষ্টা করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদযোগী হতে হবে। এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করতে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপারিশ করবে। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশন কাজ করছে। তার জেল কোড যুগোপযোগী করতে সুপারিশ করবেন।

উপদেষ্টা বলেন, দেশে বহু নির্যাতিত মানুষ রয়েছে। আদালত থেকে নির্যাতিত মানুষেরা যেন বিচার পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

কুষ্টিয়া আদালতে মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রক্তাক্ত হয়েছেন ওই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারে কমিশন গঠন করা হয়েছে। আরো কমিশন গঠন আলোচনার ব্যাপার।

বিচারপতি মো: রুহুল কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশের জেল কোড ১৯৮৯ সালে সর্বশেষ পুনমুদ্রিত হয়েছিল। বিভিন্ন সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে কারা সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কারাগার আমাদের সমাজেরই অংশ। কারাবন্দী একজন মানুষের শুধু ফ্রিডম অফ মুভমেন্ট থাকবে না। তার ভোটাধিকার বা অন্যান্য ফ্রিডম রেসট্রিকটেড থাকবে না।

ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, কারা আইন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। মানবিকভাবে কারাগারগুলোকে গড়ে তুলতে হবে। জেল কোড ও দণ্ডবিধি সংশোধন করে যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি।

এ সময় তিনি তার কারাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। কারাগারের ভিতরে দুর্নীতি ও বিভিন্ন বৈষম্য তুলে ধরে তিনি বলেন, কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে সত্যিই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও প্রয়োজন। কারা ব্যবস্থাপনা যুগোপযোগী করতে হলে সংশ্লিষ্টদের তেলবাজি ও দলবাজি পরিত্যাগ করতে হবে।

কারাগারকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও সরকারি প্রভাব মুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো: মোতাহার হোসেন বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৭টি কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সব কারাগারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশের সব কারাগারে এখন নিরাপদ ও স্বাভাবিক পরিবেশ রয়েছে। তিনি কারা ব্যবস্থাকে আধুনিককরণে গুরুত্বারোপ করেন। কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক থাকে বিভিন্ন সময় যা অমানবিক। এটি সমাধান জরুরি।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে প্রস্তাবনা তুলে ধরে বক্তৃতা করেন আইনজীবী শিশির মনির। তিনি বলেন, কারগার মূলত সংশোধানাগার। কারাগারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরাধীর সংস্কার বা সংশোধন। বর্তমানের কারাগার ব্যবস্থা সংশোধনমূলক তত্ত্বনির্ভর। জেলগুলো মূলত ১৮৬০ সালের জেল কোড, দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট ও দ্য প্রিজনার্স অ্যাক্ট আইনসমূহের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এসব আইন ঔপনিবেশিক আমলে আনা এসব আইন সংশোধন করে জেল ব্যবস্থা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় জেল কোডে নেই। আবার বিদ্যমান আইনে রয়েছে এমন অনেক সুবিধা কার্যকর ও প্রয়োগ হচ্ছে না। এটির সমাধান জরুরি। তিনি কারাগার ব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে এবং কারাগারে নির্জন স্থানে রাখা আইনের লংঘন উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে জেলগুলোতে সুযোগ-সুবিধা দেয়া অতীব জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement