২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

১৫ দিনের মধ্যে আমদানি করা হবে ৬ লাখ টন চাল ও গম

-

- সৌদি-কাতার থেকে আসছে ২৩৬ কোটি টাকার ইউরিয়া
- সারের ঘাটতি নেই, সার আসতেই থাকবে : অর্থ উপদেষ্টা

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতির মাধ্যমে দুই লাখ মেট্রিক টন চাল এবং চার লাখ টন গম আমদানি করবে সরকার। এই চাল-গম আমদানি করা হবে ১৫ দিনের মধ্যে। এ লক্ষ্যে আমদানির সময় ৪২ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিকবিষয়ক সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এ ছাড়াও এই কমিটি সৌদি আরব ও কাতার থেকে ২৩৬ কোটি টাকার ইউরিয়া সার আমদানি করারও অনুমতি প্রদান করেছে।

গতকাল বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভাটি অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, চাল ও গম আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমরা চাই না কোনোক্রমেই খাদ্যঘাটতি পড়ুক। ইমেডিয়েট হয়তো দরকার নেই। কিন্তু আমাদের স্টকে রাখার জন্য ২ লাখ টন চাল ও ৪ লাখ টন গম আমদানি করার জন্য অ্যাপ্রোচ করেছি।
বৈঠক সূত্র জানা যায়, বৈঠকে খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে চাল ও গম আমদানির সময়সীমা ১৫ দিন নির্ধারণ করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর আগে এ সময়সীমা ছিল ৪২ দিন। অর্থাৎ দরপত্রের বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের মধ্যে চাল বা গম সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সে সময় কমিয়ে ১৫ দিন করা হলো।

এ জন্য জি টু জি ভিত্তিতে চাল ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ মোতাবেক আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্রয় প্রক্রিয়ায় সময় হ্রাস করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সরকারি বিতরণব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জি টু জি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানি করা হয়।
রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) এবং পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুসরণে প্রয়োজনের সময়ে রফতানিকারক দেশ থেকে জি টু জি ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয় এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্রয়োজনের সময়ে সর্বোচ্চ ২ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির লক্ষ্যে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ এর (১)(ক) অনুযায়ী দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১৯ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সভায় জি টু জি ভিত্তিতে গম কেনার নীতিগত অনুমোদন এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ মোতাবেক আন্তর্জাতিক দরপত্রে ক্রয়প্রক্রিয়ায় সময় হ্রাস করার প্রস্তাবেও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সরকারি বিতরণব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জি টু জি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গম আমদানি করা হয়।
রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) এবং পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুসরণে রফতানিকারক দেশ থেকে জি টুুজি ভিত্তিতে চার লাখ মেট্রিক টন গম ক্রয় এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চার লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির লক্ষ্যে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ এর (১)(ক) অনুযায়ী দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকা বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ হতে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সাত লাখ মেট্রিক টন এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে, সৌদি আরব ও কাতার থেকে পৃথক দু’টি প্রস্তাবের বিপরীতে ৬০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ২৩৬ কোটি ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এ সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমন শেষ হওয়ার পর বোরোতে সব থেকে বেশি সারের প্রয়োজন হবে। বৈঠকে সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, সার ও খাদ্যদ্রব্যের কোনো ঘাটতি হবে না। যেখান থেকে পারি আমরা সংস্থান করেছি। মজুদও ভালো রয়েছে। আমাদের সার আসতেই থাকবে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১১৮ কোটি ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৩২৭ দশমিক ৮৩ মার্কিন ডলার।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১১ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তির আলোকে প্রথম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া আনা হবে।
এদিকে বৈঠকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১১৮ কোটি ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৩২৭ দশমিক ৮৩ মার্কিন ডলার।
অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাতার থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি সই হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় এখন দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement