কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না
প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দকে তথ্য উপদেষ্টা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে উজ্জীবিত রাখার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না।
গতকাল দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময়ে অংশ নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আয়ুব ভূঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী রওনক হোসেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কবি আবদুল হাই শিকদার, মাসুমুর রহমান খলিলী, শাহনাজ পলি ও মোমিন হোসেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে নানামুখী ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্বৈরাচারের সময় বন্ধ হওয়া গণমাধ্যমগুলো অবিলম্বে খুলে দিতে হবে।
নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মানুষের ওপর ভিনদেশী সংস্কৃতি ও আধিপত্য চাপিয়ে দেয়ার জন্য স্বৈরাচার আমলে সব দ্বার খুলে দেয়া হয়েছিল। এ জন্য আমার দেশ, ডিটিভি, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামী টিভি, সিএসবিসহ অনেক গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে। এখন আধিপত্যবাদবিরোধী গণমাধ্যমকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে হবে।
এই গণ-অভ্যুত্থান কোনো দলমত কিংবা গোষ্ঠীর নয়
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান কোনো দলমত কিংবা গোষ্ঠীর নয় দাবি করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। স্বৈরাচার সরকার পুলিশকে দিয়ে একটি ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত গোলাম নাফিজের স্মরণসভায় তিনি এ দাবি করেন।
শিক্ষার্থীরাই দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করেছে দাবি করে নাহিদ বলেন, গণ-আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন। আন্দোলনে নিহত শহীদরাই অভ্যুত্থান এনেছেন। তাদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই।
স্বৈরাচার সরকার পুলিশকে দিয়ে একটি ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা করেছে অভিযোগ করে নাহিদ বলেন, ‘কেবল জুলাই-আগস্ট নয়, গত ১৬ বছর ধরেই বাংলাদেশে নিষ্ঠুরতা চলছিল। তিনি আরো বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাফিজের মরদেহের মর্মান্তিক ছবি দেখলে আর কিছু বলার অবকাশ থাকে না। তাকে হাসপাতালে নেয়ার মতোও কেউ ছিল না।’
শহীদদের চেতনা ধারণ করে দেশ পরিচালনা করার অঙ্গীকার করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তাদের নামে কেবল কয়েকটা ভবনের নামকরণ করে কিছু হবে না। তাদের চেতনা ধারণ করতে হবে।’
রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজ ও ব্যক্তির সংস্কার প্রয়োজন জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘আগের বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার ছিল না। আমরা নতুন বাংলাদেশে এসব চাই।’
বারবার গণতন্ত্রের জন্যই রক্ত দিতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিস্টদের প্রতি কোনো উদারতা দেখানো হবে না। গোটা পৃথিবীর জন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ছাত্র-আন্দোলনে নিহত মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘নাফিজের মাথায় বাংলাদেশের পতাকা, রিকশায় তার নিথর দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এই শহীদদের আমরা কখনো ভুলব না। রাষ্ট্রকেও ভুলতে দেবো না।
নাফিজের বাবা গোলাম রহমান বলেন, ‘ফার্মগেটে আন্দোলন করছিল আমার ছেলে। বন্ধুর ফোনে সবশেষ কথা হয় তার সাথে। সারা দিন সারা রাত থানা আর হাসপাতালে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ছেলেকে পাচ্ছিলাম না। পরে পত্রিকায় ছবি দেখে জানতে পারি আমার নাফিজ মারা গেছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেরই মর্গে গিয়ে তার লাশ পাই। পুলিশ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়।
তিনি আরো বলেন, ‘বাবা হিসেবে ছেলের রক্তাক্ত মুখ দেখতে পারিনি। ওই মুখের জন্য এখনো রাতে ঘুমাতে পারি না।’