১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সিন্ডিকেটের কব্জায় শিক্ষা প্রশাসন

-


শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বলয় থেকে এখনো বের হতে পারছে না শিক্ষা প্রশাসন। গত ৫ আগস্টের পরও দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষা সেক্টরের পুরনো সেই বন্দিদশার কোনো উন্নতিও হচ্ছে না। এমনকি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধা পাওয়া কর্মকর্তারা এখনো বদলির ক্ষেত্রে পাচ্ছেন বিশেষ সুবিধা। পর্দার অন্তরালে বড় ধরনের অনিয়মের মাধ্যমেই একটি সিন্ডিকেট এই বদলিবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দীর্ঘ দিন বঞ্চিত থাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা। শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত বঞ্চিতদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, শিক্ষা সেক্টরের শক্তিশালী একটি চক্রের আবর্তে এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে সবকিছু। সিন্ডিকেটের কব্জায় এখনো শিক্ষা প্রশাসন। গত কয়েক দিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চারটি বদলিয় আদেশ বিশ্লেষণ করে দেখা গছে বিগত ১৬ বছরে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ ছিলেন এবং দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন তারা এখনো সুবিধা নিয়ে পছন্দের দফতর ও লোভনীয় পদে বদলি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
সর্বশেষ গত রোববার লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশিতে) সহকারী পরিচালক (এডি প্রাশসন) পদে বদলি হয়েছেন সহকারী অধ্যাপক (পদার্থ বিজ্ঞান) ফিরোজ আলম (৩০তম বিসিএস)। যদিও সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্যানেল থেকেই (শিক্ষা ক্যাডারের) তিনি নির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন (ভোটার নং কুনোবি ১০৩২)। পরপর দুই বছর তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় প্যানেল থেকে এই নির্বাচন করেছেন। গত জুলাই আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থানও নিয়েছিলেন তিনি। পরে ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি শিক্ষার্থীদের রোষানল থেকে বাঁচতে বেশ কিছু দিন কলেজেও যাননি, পালিয়ে ছিলেন ঢাকায়। এখন অদৃশ্য ইশারায় চিহ্নিত একটি সিন্ডিকেটের সুপারিশে এই পদোন্নতি পেয়েছেন। পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধা নিয়ে আবার এখনো বদলিতে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার গোপন রহস্য কি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিরোজ আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি আওয়ামী সরকারের আমলে নির্বাচন করেছি ঠিকই কিন্তু আমার ছাত্র জীবন কিংবা আমার পারিবারিক জীবনে আমি কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম না। আর পেশাদার সংগঠন হিসেবে আমি বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন-২০২৪ এর আওয়ামী প্যানেলে তথা শাহেদ তানভীর মোস্তাফিজ লিখনের সাথে একই গ্রুপে নির্বাচন করেছিলাম। তবে আমার এখন বদলিকৃত পদের জন্য আমি কোনো তদবির বা অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলাম না।

এ দিকে শিক্ষা প্রশাসনে দীর্ঘ দিন থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতরে নতুন পদায়নের ক্ষেত্রে সুবিধা পাইয়ে দেয়ার বিষয়ে বড় একটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। বিগত সময়ে যোগ্যতা ও পদ খালি থাকার পরেও দীর্ঘ দিন থেকে ঢাকার বাইরে কর্মরর্ত ছিলেন এমন অনেক বঞ্চিত কর্মকর্তারা নয়া দিগন্তকে জানান, ৫ আগস্টের পরেও দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একটি অসাধু চক্র কৌশলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। তবে বর্তমানে তাদের কার্যক্রমেই ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ঘিরে গড়ে উঠা এই বিশাল সিন্ডিকেট। বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জন চাহিদা এবং প্রয়োজনের খাতিরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দফতর ও অধিদফতর, শিক্ষা বোর্ড এবং কলেজের প্রশাসনিক পদগুলোতে বদলি পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল রাতারাতি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয় এই বদলি পদায়ন প্রক্রিয়াকে কুক্ষিগত করতে। আর এর প্রধান হোতা হিসেবে কলকাঠি নাড়ছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সৈয়দ মামুনুল আলম (ডাক নাম নিউ)। এই কর্মকর্তা বিগত সরকারের আশীর্বাদ ধন্য এবং সে সময়ে তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ঢাকায় বিভিন্ন লোভনীয় পদগুলোতে হরহামেশাই পদায়ন করে দিতেন। অভিযোগ রয়েছে তার এই তালিকায় প্রাধান্য পেতেন তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) সাবেক ছাত্ররা। সে সময় এটিকে রাখঢাক করে রাখতে পারলেও বর্তমানে অনেকের কাছে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। তিনি নিজেকে গত সরকারের যেমন- আদর্শের অনুসারী প্রতিপন্ন করতে সমর্থ হয়েছিলেন তেমনি এই সরকারের এবং ভবিষ্যৎ সরকারের আদর্শের প্রতিও নিজেকে সমর্পিত বলে জানান দিচ্ছেন। তিনি ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তিন-চারটি আদেশ জারি করিয়ে নিজের ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন। চিহ্নিত স্বৈরাচারের সহযোগী ও বিতর্কিত বহু কর্মকর্তাকে এই আদেশগুলো দ্বারা পছন্দের লোকদের পদায়নের মাধ্যমে লাভবান করেছেন এবং নিজেও লাভবান হয়েছেন বলে শিক্ষা প্রশাসনের সর্বত্র আলোচনা চলছে।
অভিযোগ রয়েছে চলতি মাসের গত ৯ তারিখে তিনটি আদেশে ৬৭ জন কর্মকর্তাকে সুবিধাজনক পদায়ন দিয়েছেন। এতে করে বিগত সরকারের বিরাগভাজন ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সুবিধাজনক পদায়ন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে এসব কর্মকর্তারা কূটচালের মাধ্যমে নস্যাৎ করবেন এমনটাও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, সৈয়দ মামুনুল আলমের (নিউ) সিন্ডিকেটের সব সদস্যই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং অনেকে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মী ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্মে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক : অর্থ উপদেষ্টা ঢাবি ও জাবিতে গণপিটুনিতে হত্যা প্রসঙ্গে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাকুন্দিয়ায় মাদরাসাছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ছাত্রীর মাকে মারধর সুশীলতার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে বিপ্লবের মূল্যবোধ বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পত্তি দেখভালে রিসিভার নিয়োগের আদেশ সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন : ডা. জাহিদ মহাদেবপুরে স্বামীর লাঠির আঘাতে স্ত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ এক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছাড়ো : ইসরাইলকে জাতিসঙ্ঘ হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় বালুচর থেকে আহত স্কুলছাত্র উদ্ধার ঢাবি ও জাবিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের নিন্দা ও প্রতিবাদ

সকল