বায়াররা পাশে দাঁড়িয়েছে, গার্মেন্ট শিল্পের এখন ঘুরে দাঁড়ানোর পালা
- নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৭
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেছেন, গার্মেন্ট শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়িদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে ইন্ডাস্ট্রির চাকা চালু রাখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে মালিকদের যেমন লস হবে, তেমনি শ্রমিকরাও বেকার হয়ে যাবেন। ইতোমধ্যে আমাদের দেশ থেকে অনেক অর্ডার চলে গেছে, ক্রিসমাসের অর্ডার বেশির ভাগই চলে গেছে। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় অনেক দিন ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ ছিল। এ ছাড়াও গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। এগুলো মেনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া বিকেএমইএ ভবনে বিকেএমইএ কর্মকর্তাদের সাথে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সচিব বলেন, এখন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওআমেরিকাসহ বায়াররা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এখানেও অনেক কমিটি পলিটিসাইজ হয়ে গেছে। আমরা এগুলো সংস্কার করব।
৫ আগস্টের পর অনেক বড় বড় মালিক পালিয়ে গেছেন, আইনের আওতায় এসেছেন। সেখানে বেতন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। প্রথমে বেক্সিমকো থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। এটা সরকার ইতোমধ্যে একটি ফান্ড তৈরি করে সমাধান করেছে। আমি মনে করি এগুলো বড় কোনো সমস্যা না।
সচিব বলেন, দাবি হলো বেতন বাড়ানোর, এখানে মজুরি বোর্ড আছে। এটা দেখতে হবে। তবে এটার জন্য রাস্তা বন্ধ করে দিলে তো সমাধান হবে না। আমাদের জেন্ডার ইস্যু বায়ারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পিছিয়ে পড়া নারীরা কাজ করছে। এটা বায়ারদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
তিনি বলেন, আমি মালিক পক্ষকে নিয়ে হতাশ। আমাদের শ্রমিক প্রতিনিধিদের কথা শোনার ধৈর্য না থাকলে তো এটা সমাধান হবে না। সুতরাং কথা শুনতে হবে। শ্রমিকদের সাথে ম্যানেজমেন্টের অনেক বিভেদ রয়েছে। আমাদের এসব জায়গায় ফোকাস করা দরকার।
সচিব বলেন, শ্রমিক নেতাদের বলব ফৌজদারি অপরাধকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। যারা আগুন দিয়েছে তাদের ধরলে আপনারা ব্যারিকেড দিয়ে বলবেন ছেড়ে দিতে, সেটা করা যাবে না।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিদেশীদের হাতে যেন গার্মেন্ট ব্যবসা চলে না যায়, সেজন্য শ্রমিকদের বোঝাতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একটি ঘটনা আমরা দেখছি। একটা দাবি মেনে নেয়া হলে তারা আরো কিছু অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আসে। আমি শ্রমিক নেতাদের বলব, আপনারা শ্রমিকদের বোঝান। বিদেশীদের হাতে এই ব্যবসাটা যেন চলে না যায়। আশির দশকে শ্রীলঙ্কায় অসন্তোষের কারণেই এই ইন্ডাস্ট্রি আমাদের দেশে এসেছিল।
তিনি জানান, সোমবার সকালে একজন চীনা বায়ার এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, চলমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে তারা অর্ডার সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র চলে যাবেন। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এটা পর্যায়ক্রমিকভাবে হবে। কয়েক দিন আগে মজুরি কাঠামো দেয়া হয়েছে। অনেক কারখানা সেটাই দিতে পারছে না।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুজ্জামান বলেছেন, এখানে অনেকে বলেছেন, বেতনের সমস্যা। আমার মনে হয় সমস্যা সেটা না। এখানে সমন্বয়ের সমস্যা আছে। আমরা বাড়ি, গাড়ি বিত্ত-বৈভবের কারণে অনেক সময় শ্রমিকদের কাছ থেকে দূরে সরে যাই। আমরা যদি শ্রমিকদের কাছ থেকে দূরে না সরি, তাহলে আমার মনে হয় শ্রমিকরা আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে না। মালিকদের অবশ্যই শ্রমিকদের কথা শুনতে হবে, তাদের সাথে কথা বলতে হবে।
এ সময় বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: তরিকুল আলম, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, সেনাবাহিনীর নারায়ণগঞ্জ জেলার কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আতিক, বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুজ্জামান প্রমুখ।