শেখ হাসিনাসহ আসামি ২৯০ জন
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৪
ময়মনসিংহের ভালুকা, গাজীপুর, ঝিনাইদহ ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় আরো মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক দুই এমপি এম এ ওয়াহিদ ও কাজিম উদ্দিন এবং ড. হাছান মাহমুদসহ ২৯০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ময়মনসিংহের ভালুকা আসনের সাবেক দুই এমপি এম এ ওয়াহেদ ও কাজিম উদ্দিন আহাম্মেদ ধনুসহ আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও দলের অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। উপজেলার চাপরবাড়ি গ্রামের কলিম উদ্দিন শেখের ছেলে মো: হৃদয় মাহমুদ জান্নাত বাদি হয়ে গতকাল সকালে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেড আদালতে ওই মামলাটি করেন। এ ছাড়াও ওই মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক খান জানান, গত ৪ আগস্ট ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্বরনিকা পালের আদালতে (৮ নম্বর আমলি আদালত) অভিযোগ করা হয়েছে। আদালতে দায়েরকৃত দরখাস্ত নম্বর ৯৬৫। আদালত প্রাথমিক শুনানি শেষে এ বিষয়ে আরো কোনো মামলা হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে সাত দিনের মাঝে রিপোর্ট দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের রিসোর্টে এক কলেজছাত্রীকে রেখে জয়দেবপুর থানার আলোচিত সাবেক ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের রাত্রি যাপনের ঘটনায় গাজীপুর আদালতে মামলা হয়েছে। রোববার গাজীপুরের সাবেক এসপিসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা ও স্টেনোগ্রাফারের বিরুদ্ধে গাজীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী ঝর্ণা আক্তার ওরফে বর্ষা (১৯)। তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা।
আদালত গাজীপুর পিবিআইকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে আদেশ দিয়েছেন। বাদির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার সাবেক ওসি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার দক্ষিণ স্বরমঙ্গল গ্রামের সৈয়দ মো: মিজানুর রহমান, সাবেক পুলিশ সুপার কাজী সফিকুল আলম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম, ওসি ডিবি দেলাওয়ার হোসেন ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের স্টেনোগ্রাফার মো: আব্দুল করিম।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে কলেজছাত্রী ঝর্ণার ফোন পেয়ে গাজীপুরের একটি রিসোর্ট থেকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। পরে ধর্ষণ মামলা থেকে রক্ষা পেতে গাজীপুরের সাবেক এসপি কাজী শফিকুল আলম ও ডিবি পুলিশের ওসি দেলাওয়ার হোসেনের পরামর্শে ওই ওসির প্রথম স্ত্রীর উপস্থিতিতে ১৮ জানুয়ারি কলেজছাত্রী ঝর্ণাকে বিয়ে করেন ওসি সৈয়দ মিজানুর রহমান। বিয়ের পর ওসি মিজান একদিনের জন্যও ছাত্রীর সাথে সংসার করেননি এবং কোনো খোঁজখবর নেননি। ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্ট করে গত এপ্রিল মাসে ওই কলেজছাত্রীকে গোপনে একতরফা তালাক প্রদান করেন ওসি মিজান।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের স্থানীয় জামায়াত নেতা এনামুল হক হত্যার ঘটনায় দুই সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পুলিশ সুপারসহ ১৯ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে কোটচাঁদপুর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাই বিএম তারিকুজ্জামান। এই নিয়ে সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের বিভিন্ন আদালতে পাঁচটি হত্যা মামলা হলো। মামলায় ঝিনাইদহ-৩ আসনের আ’লীগ দলীয় সাবেক দুই সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ ও শফিকুল আজম খান চঞ্চলসহ ১৪ জন নেতাকর্মী এবং কোটচাঁদপুরের সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, এসআই মিজানুর রহমান, এসআই সৈয়দ আলী ও কনস্টেবল সমির কুমারসহ মোট ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকায় বিএনপি নেতার ঘরবাড়ি ভাঙচুর লুটপাট ও ঘরবাড়ি দখলের অভিযোগ এনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে অভিযুক্ত করে পাঁচজনের নামে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে এবং চারজনের নামে আদালতে মামলা হয়েছে। ঘটনার প্রায় ১২ বছর পর উপজেলা বিএনপি নেতা হাজী ইলিয়াস সিকদার বাদি হয়ে এই অভিযোগ ও মামলাটি করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা হাজী মোহামদ ইলিয়াছ সিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
থানায় লিখিত অভিযোগে হাছান মাহমুদের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আদালতে দায়েরকৃত মামলায় হাছান মাহমুদের কেয়ারটেকার পূর্ব কোদালা রাইখালী এলাকার ইকবাল হাসান চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক চন্দ্রঘোনা আধুরপাড়া এলাকার আবু তাহের, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল জব্বার ও নুরুল আলমকে বিবাদি করে এই মামলাটি করেন।
ট্রাইব্যুনালে ৫ অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২২৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর ৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রথম অভিযোগ : গত ২০ জুলাই সকালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ওপর গুলিতে কলেজছাত্র শহীদ নুরে আলম সিদ্দিকী রাকিব ও শহীদ জুবায়েরকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৬৫ জনকে আসামিকে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রাকিবের বাবা আব্দুল হালিম ও জুবায়েরের বাবা আনোয়ার উদ্দিন অভিযোগটি দায়ের করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ : ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় বাড্ডা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মো: মারুফ হোসেনকে (১৯) পুলিশ গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগটি দায়ের করেন তার বাবা মোহাম্মদ ইদ্রিস।
তৃতীয় অভিযোগ : ১৯ জুলাই বিকেলে উত্তরা আবদুল্লাপুর এলাকায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী শহীদ ফয়সাল সরকারকে (গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়) গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ অজ্ঞাত আসামি করে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগটি দায়ের করেন ভিকটিমের বাবা শফিকুল ইসলাম সরকার।
চতুর্থ অভিযোগ : ১৯ জুলাই বিকেলে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় ১০ম শ্রেণীর ছাত্র শহীদ মাহফুজুর রহমানকে (১৫) গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৭৬ জনকে আসামি করে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগটি দায়ের করেন ভিকটিমের বাবা আবদুল মান্নান।
পঞ্চম অভিযোগ : ৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরা (আজমপুর ফুটওভার ব্রিজের পূর্ব পাশে) সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র শহীদ সামিউ আমান নুরকে (১৩) গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৫৮ জনকে আসামি করে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগটি দায়ের করেন তার বাবা মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।
২৩১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরায় সানজিদ হোসেন মৃধা নামে এক যুবক গুলিতে নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভুসহ ২৩১ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।
রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে সানজিদের বাবা কবির হোসেন মৃধা এ মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদির জবানবন্দী গ্রহণ করে উত্তরা পশ্চিম থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক এমপি মো: খসরু চৌধুরী আলহাজ মো: হাবিব হাসান, শওকত হাচানুর রহমান রিমন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে উত্তরার ৩ নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণিতে ৩০০-৪০০ জন গুলি চালায়। এতে সানজিদসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।