১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কৃষি প্রকল্পের কনসালট্যান্ট যেন রাজনৈতিক পুনর্বাসন কেন্দ্র

-

- এক প্রকল্পেই কনসাল্ট্যান্ট ৫২ জন, বেতন সোয়া লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা
- দলবাজি আর টেন্ডার নিয়েই ব্যস্ত তারা

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। ৩৬ জন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) করা হয় কৃষিবিদ হামিদুর রহমানকে। ২০১৫ সালের ৩০ জুন থেকে ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান মতিয়া চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এই কর্মকর্তা। কিন্তু অবসর জীবনেও ভাগ্য যেন তার সুপ্রসন্ন। ড. আব্দুর রাজ্জাক ২০১৮ সালে কৃষিমন্ত্রী হওয়ার পর তার অনুসারী হিসেবে বিদেশী ঋণের ‘স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি)’ প্রকল্পের কনসাল্ট্যান্ট (প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশ্যালিস্ট) হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের নির্বাহী সভাপতি হামিদুর রহমান গ্রেড-১ নিয়ে অবসরে যান। তখন মূল বেতনের পাশাপাশি বাড়িভাড়া, আপ্যায়ন, সার্ভেন্ট ও চিকিৎসাভাতাসহ সর্বসাকুল্যে প্রায় দেড় লাখ টাকার সুযোগ সুবিধা পেতেন। কিন্তু এসএসিপি প্রকল্পের কনসাল্ট্যান্ট হিসেবে প্রতি মাসে পাচ্ছেন চার লাখ টাকারও বেশি।
রাজধানীর খামারবাড়িতে ডিএইর প্রধান কার্যালয়। সারা দেশে সংস্থাটির প্রায় দুই হাজার ৮০ জন বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারসহ মোট ২৪ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ঘনিষ্ঠ হামিদুর রহমান ডিজির পদ থেকে অবসরে গেলেও শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর্যন্ত খামারবাড়ি অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, বদলি, পিডি নিয়োগ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই তার ক্ষমতা ছিল অন্য কর্মকর্তাদের চেয়ে একটু বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড. রাজ্জাক অনুসারী হয়ে মূলত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের চেয়েও হামিদুর রহমান বেশি ক্ষমতার চর্চা করেছেন সরকার পতনের আগ পর্যন্ত। ডিজি থাকাবস্থায় এসএসিপি প্রকল্পটি অনুমোদনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ২০১৮ সালের জুন থেকে প্রায় ৮১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়, শেষ হবে ২০২৬ সালের জুনে। বাস্তবায়ন করছে ডিএই, বিপণন অধিদফতর, বিএডিসি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)।
প্রকল্পের ডিএই অংগের পরিচালক ড. মুহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, বিদেশী অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পে মোট কনসাল্ট্যান্ট সংখ্যা ৫২ জন। তবে তিনজন কনসাল্ট্যান্ট এখন নেই (শূন্য)। ডোনারদের চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পে কনসাল্ট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হয়। একজন কনসাল্ট্যান্টের সর্বনিম্ন বেতন এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা পর্যন্ত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আরেক প্রকল্পের কনসাল্ট্যান্ট কৃষিবিদ মোয়াজ্জোম হোসেন। মেয়াদোত্তীর্ণ বিসিএস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তিনি। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকপর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের পিডি ছিলেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে অবসরে যান অতিরিক্ত পরিচালক তথা তৃতীয় গ্রেড নিয়ে। মূল বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ সর্বসাকুল্যে তিনি মাসে বেতন পেয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার টাকার মতো। ২০২৩ সালে তিনি কনসাল্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে। বেতন সব মিলে আড়াই লাখ টাকা। কফি উৎপাদন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি যোগ দিলেও এ বিষয়ে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই বলে জানা যায়। একই প্রকল্পের কাজুবাদাম উৎপাদন বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী। একই গ্রেডে অবসরে গিয়ে একই সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন তিনিও। তারও এ বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।
তৃতীয় গ্রেড থেকেই অবসরে গিয়ে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের কনসাল্ট্যান্ট বা বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দিয়েছেন মো: নজরুল ইসলাম (প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ) ও কেশব লাল দাশ। দেড় লাখ টাকা বেতনে চাকরি শেষে করে তারা কনসাল্ট্যান্ট হিসেবে বেতন তুলছেন মাসে আড়াই লাখ টাকা। বছরব্যাপী প্রকল্পের দুই কনসাল্ট্যান্ট এস এম কামরুজ্জামান (পরামর্শক হর্টিকালচার) ও মো: রেজাউল করিম (পরামর্শক প্ল্যানিং, মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যুলুয়েশন)। এর মধ্যে কামরুজ্জামান পিডি হিসেবে এবং রেজাউল করিম অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে যান। কৃষি খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প (প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশী ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পে ৯ জন স্পেশ্যালিস্ট বা কনসাল্ট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারজনের বেতন সোয়া চার লাখ টাকা করে। বাকি পাঁচজনের বেতন দুই লাখ ৭৫ হাজার করে।
জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ভুক্ত বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৬৮টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর প্রায় অর্ধেক প্রকল্পেই বিশেষজ্ঞ বা কনসাল্ট্যান্ট নিয়োজিত রয়েছেন উচ্চ বেতনে। মন্ত্রী, সচিব ঘনিষ্ঠ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় অধিকাংশ কনসাল্ট্যান্ট নিয়োগ হয়েছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে। অনেকের আবার সংশ্লিষ্ট কাজে যোগ্যতা না থাকলেও নিয়োগ পেয়েছেন। কনসাল্ট্যান্টে হিসেবে তারা যতটা না প্রকল্পের কাজে ব্যস্ত থাকেন তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন তদবিরে। অনেকে আবার টেন্ডারবাজিতেই বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকে আবার নানা ফরম্যাটে প্রকল্পগুলোতে গাড়ি সরবরাহ দিয়ে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ নির্ধারণের প্রস্তাব রাজবাড়ীতে সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি-ওসিসহ ৭ জনের নামে মামলা গজারিয়ায় মামলা তুলে না নেয়ায় ২ সাংবাদিকের ওপর হামলা ভারতের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান শ্রীনগরে স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে আটক ৩ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফেল করলে জাতির দুর্ভোগ আছে : এ্যানি সংবিধান সংস্কার কমিশন : শাহদীন মালিক বাদ, প্রধান আলী রীয়াজ শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময়কে রাজনৈতিক সভা বলে আমাদের বিব্রত করা হচ্ছে : সারজিস আলম ইসলামী ব্যাংকে বৈষম্যের মুলোৎপাটনের দাবি পেশাদার ব্যাংকারদের বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর পর্বাতারোহণের ৫ লোকেশন আপাতত স্থগিত থাকবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা

সকল