১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

মনিপুরে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করছে ভারত

-

- শান্তি পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে অমিত শাহকে চিঠি
- পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ১০০ শিক্ষার্থী আহত

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুরে চলমান জাতিগত সঙ্ঘাত মোকাবেলায় দেশটির কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) সদস্যদের মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মনিপুর থেকে আসাম রাইফেলসের দু’টি ব্যাটালিয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ার কয়েকদিন পর দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার সহিংসতায় বিধ্বস্ত রাজ্যটিতে সিআরপিএফের দুই হাজার সদস্যের দু’টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গতকাল বুধবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে। দেশটির একজন সরকারি কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, বর্তমান সহিংস পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গলে মোতায়েনরত সিআরপিএফের ৫৮ নম্বর ব্যাটালিয়নকে মনিপুরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। একইসাথে ঝাড়খণ্ডের লাতেহার থেকে ১১২ নম্বর ব্যাটালিয়নকে সরিয়ে মনিপুরে পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ইউনিটের সদর দফতর হবে কাংভাই (চুরাচাঁদপুর) আর দ্বিতীয় ইউনিটটি ইম্ফলের আশপাশে অবস্থান করবে। কয়েকদিন আগে দেশটির জম্মু-কাশ্মির ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য এলাকায় অপারেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত আসাম রাইফেলসের দু’টি ব্যাটালিয়নকে মনিপুর থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিআরপিএফের নতুন এই দু’টি ইউনিটের সব কোম্পানিকে মনিপুরের বিভিন্ন অংশে ঘাঁটি স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। প্রত্যেক ইউনিটে পাঁচ থেকে ছয়টি কোম্পানি রয়েছে। দু’টি ব্যাটালিয়নে সিআরপিএফের প্রায় দুই হাজার জওয়ান ও কর্মকর্তা রয়েছেন।

এ ছাড়া গত বছরের সহিংসতার পর মনিপুর রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আগে থেকেই সিআরপিএফের ১৬টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহে ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, চুরাচাঁদপুর, ননি, জিরিবাম, কাংপোকপি, বিষ্ণুপুরে এসব ব্যাটালিয়নের অপারেশনাল ঘাঁটি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকারি ওই কর্মকর্তা বলেছেন, মনিপুরে নতুন করে মোতায়েন করা সিআরপিএফের দুই ইউনিটে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া কর্মকর্তারাও রয়েছেন। সেখানে তাদের লজিস্টিক, সরঞ্জাম এবং অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তিরও প্রয়োজন হবে। গত বছরের মে মাসে মনিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতে সম্প্রদায় এবং কুকি-জো উপজাতিদের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। ওই সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ও প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এরপর রাজ্যজুড়ে থেমে থেমে সহিংসতা চললেও এই প্রথমবারের মতো চলমান জাতিগত সঙ্ঘাতে ড্রোন ও রকেট ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা রাইফেল এবং গ্রেনেডেরও ব্যবহার করছে। গত কয়েক দিনের সহিংসতায় দেশটির এই রাজ্যে কমপক্ষে ১১ জন নিহত ও এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। হতাহতের এই ঘটনা মনিপুরের সহিংস পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলেছে। সঙ্ঘাত-সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে রাজধানী ইম্ফল ও তার আশপাশের এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যে ইন্টারনেট বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ১০০ শিক্ষার্থী আহত : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মনিপুর রাজ্যে সহিংসতা যেন কমছেই না। রাজ্যটিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং এতে প্রায় ১০০ জন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। দাবি আদায়ে দেয়া আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ান। ইন্ডিয়া টুডে ও এনডিটিভি জানায়, মঙ্গলবার মনিপুরে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়ার পরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৯০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মূলত দাবি আদায়ে দেয়া আলটিমেটাম বেলা ১টায় শেষ হওয়ার সাথে সাথে অস্থিরতা শুরু হয়। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর ছাত্র এবং তাদের সমর্থকরা রাজ্যটির গভর্নরের বাসভবনের দিকে মিছিল শুরু করেন। এরপরও সাড়া না পাওয়ায় হতাশ ছাত্ররা বেলা ২টার দিকে গভর্নরের অফিসের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভ দ্রুত বাড়তে থাকে। এরপর বিক্ষোভকারীরা অল্প দূরত্বে চলে আসার পর পুলিশ হস্তক্ষেপ করে এবং তাদের সামনে এগোতে বাধা দেয়। একইসাথে সংলাপের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগের আহ্বানও জানায় পুলিশ। তবে আলোচনার জন্য পুলিশের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ছাত্রদের অধিকাংশই রাজ্যপালের সাথে সরাসরি সাক্ষাতের বিষযে জোর দেন। একপর্যায়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কর্তৃপক্ষ কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করলে উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়। এর জেরে সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে ছাত্রসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি আহত হন এবং কয়েকজনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

অমিত শাহকে চিঠি : অশান্ত মনিপুরে শান্তি পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন অভ্যন্তরীণ মনিপুরের কংগ্রেস এমপি এ বিমল আকোইজাম। মঙ্গলবারের ওই চিঠিতে মনিপুরে ‘অভূতপূর্ব সহিংস সঙ্কট’ নিয়ে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। চিঠিতে, কর্তৃপক্ষকে ‘সংশোধনমূলক ব্যবস্থা’ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি লিখেছেন, মনিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের স্মৃতি জাগিয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি দুঃখজনক যে, বর্তমান প্রশাসনের নজরদারিতে এমন গুরুতর সঙ্কট দেখা দিয়েছে।’ চিঠিতে মনিপুরের এমপি বলেন, এই সহিংসতায় শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায়ই আমি ভাবি, এটি যদি তথাকথিত ভারতের ‘মূল ভূখণ্ডে’র (উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলো) সাথে থাকত, তবে কি এ ধরনের সহিংসতা এত দীর্ঘ দিন ধরে চলতে দেয়া হতো।’ ভারত সরকারের কাছে মনিপুরের মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মনিপুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ও সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ‘সংশোধনমূলক ব্যবস্থা’ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আকোইজাম। একইসাথে দৃঢ় ও সুস্পষ্টভাবে ‘একচেটিয়া পরিচয়ের রাজনীতি যা এই সঙ্কটকে ইন্ধন জোগাচ্ছে’ তা প্রত্যাখ্যান করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এছাড়া, বর্তমান সঙ্কটে অবৈধ অভিবাসী, বিদেশী উপাদান এবং অবৈধ ড্রাগ মাফিয়াদের জড়িত থাকার অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করার আহ্বানও জানান মনিপুরের সংসদ সদস্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ছোটবেলার বন্ধুদের কবিতা আবৃত্তি করে শোনালেন মির্জা ফখরুল মাসিক ৩০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে ঢাবি ছাত্রীরা সোনারগাঁও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে মিলল নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ টিউলিপের পদ্যতাগ : এবার তোপের মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নবাবগঞ্জে অপহরণের তিন ঘণ্টা পর স্কুলছাত্র উদ্ধার, গ্রেফতার ৫ বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করতে জাপানের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান চকরিয়ায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৩ ডাকাত আটক মির্জাপুরে ৭ দফা দাবি আদায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের লিফলেট বিতরণ ম্যাচ বয়কটের হুমকি ক্রিকেটারদের, জরুরি বৈঠকে বিসিবি ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করল ইরান

সকল