১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

নতুন রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে পুরনোদের কাছে

বাড়তি সঙ্কটে রোহিঙ্গা ক্যাম্প
-


মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলা সঙ্ঘাতে নাফ নদীসহ দীর্ঘ সীমান্তের নানা পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গা। তাদের অবৈধভাবে এ দেশে আসতে সহযোগিতা করছে দুই পারের দালাল চক্র। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে পুরনো রোহিঙ্গা স্বজনদের কাছে। সদ্য আসা রোহিঙ্গাদের কারণে ক্যাম্পে থাকা-খাওয়া নিয়ে তীব্র সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এ দিকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
মিয়ানমারের বন্দর শহর মংডুতে আবারো তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মিদের মধ্যে। গত রোববার থেকে গোলাাগুলিসহ বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে এপারে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য। জানা যায়, চলমান এই যুদ্ধে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে রাখাইন রাজ্য মংড়–তে থাকা রোহিঙ্গারা। তাদের হত্যার পাশাপাশি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে নাফ নদীসহ বিস্তীর্ণ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতারা জানান, এরই মধ্যে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা এ দেশে পালিয়ে আসছে। ওপারে অপেক্ষায় আছে আরো প্রায় অর্ধ লাখ। আর এসব রোহিঙ্গাকে পালিয়ে আসতে সহযোগিতা করছে দুই পারের দালাল চক্র। যারা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা পয়সাও হাতিয়ে নিচ্ছে।
সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি ও কোস্ট গার্ড কঠোর অবস্থানে রয়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে। তারা সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি আটক করছে দালালদের। তার পরও দীর্ঘ সীমান্তের কোনো না কোনো পয়েন্ট দিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়ছে। তারা এ দেশে এসে ক্যাম্পের পুরনো রোহিঙ্গা স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে।

পুরনো রোহিঙ্গারা বলছেন, জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা স্বজাতিদের আশ্রয় দিলেও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জাফর আলম জানান, ‘জীবন বাঁচানোর জন্য রোহিঙ্গারা এ দেশে চলে আসছে। তারা আমাদের আত্মীয়স্বজন এবং একই জাতের। তাদের আমরা আশ্রয় দিচ্ছি। ছোট্ট ঘরে একসাথে থাকতে হচ্ছে। ভাগাভাগি করে খাবার খাচ্ছি। কিন্তু আমরা নিজেরাই থাকা-খাওয়া নিয়ে কষ্ট আছে। তাই সরকারের কাছে প্রত্যাশা করছি নতুন আসা রোহিঙ্গাদেরকেও যেন আমাদের মতো থাকা-খাওয়ার নিরাপদ ব্যবস্থা করে দেয়।’
আরেক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, ‘আমরা নিজেরা জনপ্রতি মাসে ১,৩০০ টাকা রেশন পাই, যা দিয়ে চলা খুবই কষ্টকর। তাই বলে আমাদের কাছে আশ্রয়ে আসা রোহিঙ্গা ভাইবোনদের তো ফেলে দেয়া যাবে না। আমরা তাদের না দেখলে কে দেখবে। তারা বিপদ থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাছে আসছে। আর আমরাই যদি বিপদে ফেলে দেই তাহলে কেমনে হবে। এ অবস্থায় তাদেরকেও সহযোগিতা করা দরকার। নয়তো সবাই কষ্টে পড়ে যাবো।’
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান নেয়া নতুন রোহিঙ্গা নুর কায়দা জানান, মগেরা মংডুতে তাদের ঘরবাড়ি সব পুড়িয়ে দিয়েছে। জীবন বাঁচানোর জন্য ঝুঁকি নিয়ে হলেও চার সন্তান আর স্বামী নিয়ে এ দেশে পালিয়ে এসেছে। তারা নাফ নদী পয়েন্ট হয়ে এসেছেন। নদী পার হয়ে এ দেশে আসার জন্য দুই পারে দালালদেরকে মিয়ানমার এবং বাংলা টাকা মিলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।

আরেক নতুন রোহিঙ্গা বজিমুল হাসান জানান, ‘যুদ্ধ চললেও নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে আসতে চাইনি। মংডুতে আমার এক ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার ভাইয়ের মেয়ের শরীরে এখনো হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলির চিহ্ন রয়েছে। আমরা জীবন বাঁচানোর জন্য এই দেশে পালিয়ে এসেছে। এখানে আমার এক বোন ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিল। আমরা তাদের কাছেই অবস্থান নিয়েছি।
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, এমনিতেই রোহিঙ্গারা এ দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার মধ্যে নতুন রোহিঙ্গা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে রোহিঙ্গাদের সেবা প্রদানকারীদেরও বাড়তি চাপে পড়তে হবে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষীদের আরো কঠোর হওয়া দরকার। তবে যারা চলেই আসছে তাদের প্রতি অমানবিকও হওয়া যাবে না।
এই প্রসঙ্গে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
সীমান্তে কড়াকড়ির মাঝে কিভাবে এত রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশ ঘটছে তা নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে। বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার রয়েছে। প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে একজন রোহিঙ্গাও যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এ ছাড়া দালালদের বিরুদ্ধেও নিচ্ছে আইনানুগ ব্যবস্থা।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় আমরা বিএনপি পরিবারের সহায়তা পেল ৩ শহীদ পরিবার শিক্ষাভবনে দুই গ্রুপের উত্তেজনা ও হাতাহাতি কাঁচপুরে ছয় হাজার স্কয়ার ফুটের ক্যালিগ্রাফিতে ঐক্যের ডাক ‘মহানবী সা: জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন : আল্লামা আবদুল হাই নদভী এনআইডি কার্যক্রম স্থানান্তরে ভোটার তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে ডিআরইউর সাবেক সভাপতি আজমল খাদেমের ইন্তেকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আহ্বান সময়োপযোগী : জাতীয় আইনজীবী সমিতি ১৫ বছর আমার কণ্ঠ রোধ করে রাখা হয়েছিল : মনির খান অরুণা ও রোকেয়া প্রাচীর বিরুদ্ধে মামলা এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার কাল থেকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন

সকল