ছাত্র হত্যা মামলায় হাইকোর্টে দ্বিতীয় জামিন তানিয়া আমীরের

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ইমরান হোসেন নামে এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীরকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি মো: মাহমুদুল হক ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলায় তাকে জামিন দেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে তানিয়া আমীর নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, আমরা জামিন দেয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছি। তবে আদালত সিনিয়র অ্যাডভোকেট বিবেচনা করে তাকে জামিন দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজুকে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত জামিন দেয়া হয়েছে। এটা আপিল বিভাগের গাইড লাইনের পরিপন্থী। হাইকোর্ট চার বা ছয় সপ্তাহ জামিন দিতে পারেন।

ছাত্র হত্যার অভিযোগে মামলায় উচ্চ আদালত থেকে এটি দ্বিতীয় জামিন। এর আগে গত সোমবার এ মামলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু হাইকোর্টের একই বেঞ্চ থেকে জামিন পেয়েছিলেন। এ মামলায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত তাকে জামিন দেন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বিবেচনায় আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন বলেও আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
ইমরান হোসেন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনসহ ২৯৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর ইমরানের মা কোহিনূর আক্তার বাদি হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় এ মামলা করেন।

মামলার আরো আসামিরা হলেন- সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী ও মোখলেছুর রহমান বাদল, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহের হোসেন সাজু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, একাত্তর টিভির সাবেক উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা, সময় টেলিভিশনের তৎকালীন উপদেষ্টা মোরশেদুল ইসলাম, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, একাত্তর টিভির সাবেক বার্তা প্রধান সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সাংবাদিক নজরুল কবীর, সময় টেলিভিশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের, এটিএন নিউজের সাবেক বার্তা প্রধান মুন্নী সাহা, একাত্তর টিভির সাবেক সাংবাদিক ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও তার মেয়ে তারিন হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সালমান এফ রহমানও এ মামলার আসামি।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সকাল ৯টায় যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র ও সাধারণ জনতা আন্দোলনে যায়। তখন আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে নস্যাৎ করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আসামিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপর্যুপরি এলোপাতাড়ি গুলি, পেট্রলবোমা, ককটেল বিস্ফোরণ, হাতবোমা ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ইমরান গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সন্ধ্যায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।