১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

ভারতে বাংলাদেশের ‘ইলিশ কূটনীতি’র ধাক্কা

-


আসন্ন দুর্গাপূজায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা এবার তাদের প্রিয় ইলিশ মাছ পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপনে ইলিশ মাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্বের বৃহত্তম ইলিশ মাছ উৎপাদনকারী বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতে ইলিশ পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের কোটি মানুষ অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় পূজায় তাদের প্রিয় রুপালি ইলিশের ঘাটতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। বিগত বছরগুলোতে অর্থাৎ আওয়ামী লীগের শাসনামলে সরকার দুর্গাপূজার সময় বছরে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দিত। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বিষয়টিকে দেখছে ভারতের জন্য বাংলাদেশের ‘মাছ কূটনীতি’র ধাক্কা হিসেবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার ইলিশ মাছ বাংলাদেশের ভোক্তাদের কাছে আরো সহজলভ্য করার জন্য এর রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। উপদেষ্টা এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, এখনো অনেক মাছ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে (নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও)। এবার আমরা ইলিশকে সীমান্ত পার হতে দেবো না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ অবস্থান ভারতের সাথে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিখ্যাত ‘ইলিশ কূটনীতি’ থেকে একটি স্পষ্ট পিঠটান হিসেবে চিহ্নিত করে। হাসিনা প্রতি বছর উৎসবের মৌসুমে ইলিশ মাছের চালান ভারতে পরিবহনের অনুমতি দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিনের পানিবিরোধের সমাধানের আশায় তিনি বিশেষ উপহার হিসেবে একাধিকবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে ইলিশ পাঠিয়েছেন। ২০১৭ সালে ভারতের তৎকালীন বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে ৩০ কেজি ইলিশ উপহার দিয়েছিলেন হাসিনা।
ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ কিন্তু বর্তমানে এটি একটি বিলাসবহুল খাদ্যে পরিণত হয়েছে। শুধু ধনী ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের পক্ষেই কেনা সম্ভব। নিম্নবিত্তদের জন্য ইলিশ কেনা এখন অসম্ভব হয়ে গেছে। উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, ‘আগের সরকার দুর্গাপূজার সময় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিত। তারা এটিকে উপহার বলত। এবার আমি মনে করি না আমাদের উপহার দেয়ার দরকার আছে। কারণ ভারতে প্রচুর পরিমাণে রফতানি করার অনুমতি দেয়া হলে আমাদের লোকেরা ইলিশ মাছ খেতে পারবে না।’

কয়েক সপ্তাহের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের পর ৫ আগস্ট নাটকীয়ভাবে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। ভারতে তার অবস্থান ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য দিল্লির প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে। ভারতের জন্য বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার ও মিত্র, সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক, বিশেষ করে এর উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য।
অন্তর্বর্তী সরকার ইলিশ সরবরাহের অনুমতি দিয়ে ভারতের প্রতি সদিচ্ছা প্রদর্শন করতে পারত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মিসেস আক্তার বলেন, ‘অন্য সব উপায়ে আমাদের শুভেচ্ছা থাকবে। তারা আমাদের বন্ধু। কিন্তু আমাদের জনগণকে বঞ্চিত করে কিছু করা উচিত নয়। শুভেচ্ছার প্রশ্ন এর থেকে আলাদা।’

তবে রফতানি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম তেমন কমেনি। একটি ১.৫ কেজি ইলিশ প্রায় ১,৮০০ টাকায় (১৫ ডলার; ১১.৫০ পাউন্ড), ১.২ কেজি ১,৬০০ টাকা এবং এক কেজি ১,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এসবের দাম দেড় শ’ থেকে ২০০ টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মৎস্যজীবীরা মাছের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মাছের সরবরাহ কম বলে মনে করে। হোসেন মিয়া নামে এক জেলে বলেন, গত তিন মাসে আমরা পাঁচবার সমুদ্রে যাওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফিরে আসতে হয়েছে। সীমান্তের দুই পাশের বাঙালিদের কাছে ইলিশ প্রায় পবিত্র মর্যাদা ধারণ করে এবং এর অভাব অনেককে হতাশ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement
স্বচ্ছ কাঁচের ঘরে রিমান্ডের সুপারিশ পুলিশ সংস্কার কমিশনের রেস্তোরাঁ খাতে ভ্যাট পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত এনবিআরের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ৯০ শতাংশ মানুষ : সংস্কার কমিশন গাজীপুরে বিদেশি পিস্তল ও ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার শরীয়তপুরে ছাত্র আন্দোলনে নিহত জালালের লাশ উত্তোলন সাবেক এমপিদেরসহ শতাধিক গাড়ি নিলামে তুলছে চট্টগ্রাম কাস্টম পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগে শারীরিক যোগ্যতা অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ বাড়ল স্বর্ণের দাম ঢাকার ১৯ খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক মতাদর্শ না দেখার সুপারিশ কমিশনের বেনাপোলে আ’লীগের হামলায় নিহত বিএনপি নেতার লাশ আড়াই বছর পর উত্তোলন

সকল