১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বন্যার ক্ষতি কাটাতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৪ উদ্যোগ

প্রাথমিক হিসাবে কৃষিতে ৩৩৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি
-

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের ২৩টি জেলায় বন্যা হয় গত আগস্টে। এর মধ্যে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট জেলা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। অনেক স্থানে এখনো বন্যার পানি পুরোপুরি নামেনি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বন্যায় কৃষি খাতে তিন হাজার ৩৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় মোট তিন লাখ ৭২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে ধানসহ অন্যান্য ফসল রয়েছে। এ অবস্থায় বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চার রকম উদ্যোগ বা কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন কৃষি সচিব ড. মো: এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, কৃষকদের নিয়মিত প্রণোদনার পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় এরইমধ্যে রাজস্ব বাজেট থেকে প্রায় ১৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ধানের বীজ, চারা, সার ও নগদ অর্থসহায়তা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বন্যার পানি চলে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে সেই অনুযায়ী কর্মসূচি নিয়ে আগাবে মন্ত্রণালয়।
গত বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যনুযায়ী, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ২০ আগস্ট থেকে বন্যা শুরু হয়। বন্যায় ১৪ লাখের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির মধ্যে রয়েছে ৩৮ হাজার ৬৮৯ হেক্টর আউশ, এক লাখ ৪১ হাজার ৬০৯ হেক্টর রোপা আমন, ৭৬৪ হেক্টর বোরো আমন, ১৪ হাজার ৯০৮ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা এবং ১১ হাজার ২৯০ হেক্টর সবজি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয় একটি পুনর্বাসন কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছে। এর আওতায় ৯টি জেলার ৮০ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে রোপা আমনের বীজ ও সারসহ ১৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হবে।
এ ছাড়াও ২২ জেলার এক লাখ ৫০ হাজার কৃষককে তাদের ৫ শতাংশ জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের জন্য ২২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মতে, সাম্প্রতিক বন্যায় ৫০ লাখেরও বেশি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পানিতে আটকা পড়ে প্রায় ৯ লাখ পরিবার। শুধু ফেনীতেই ২৯ জন নিহত হওয়ার খবরসহ ১১টি জেলায় মোট ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও স্পষ্ট হচ্ছে। এখনো অনেক পরিবার জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে।
এ দিকে সাম্প্রতিক বন্যা-পরবর্তী কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় নানামুখী পরিকল্পনা ও করণীয়ের কথা জানিয়েছে সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচারাল পলিসি স্টাডিজ (ক্যাপস)। এতে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পরামর্শ তুলে ধরেন। বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি ফসলের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি, বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর রোপা আমনের বীজতলা, রোপিত আমন এবং আউশ ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি নির্ধারণ করে দ্রুত পুনর্বাসনকাজ শুরু করা; আগাম শীতকালীন শাক-সবজি, ডাল ফসল, তেল ফসলসহ অঞ্চল উপযোগী ফসল চাষের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম দ্রুত চালু করা; বিভিন্ন দফতর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত নিজস্ব উঁচু জমিতে নাবী জাতের আমনের বীজতলা, পলি ব্যাগে অথবা বেডে বিভিন্ন সবজি, চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ক্লাইমেট চেঞ্জের মেডিটেশন অ্যান্ড অ্যাডাপটেশনের দিকে নজর দিতে হবে। আবারো ওই এলাকায় বন্যা হতে পারে। এ ছাড়া বন্যা-পরবর্তী রোগ থেকে নিরাপদ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ক্যাপস চেয়ারম্যান কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান স্বাস্থ্যসেবা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণপূর্বক দ্রুত পুনর্বাসন ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থায় গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, কৃষকদের শস্যঋণের/কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে ঋণগ্রস্তদের ঋণ মওকুফ অথবা ঋণের কিস্তি মওকুফ করতে হবে।
বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার চার রকম কর্মসূচি নিয়ে আগাচ্ছে উল্লেখ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো: এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ৮০ হাজার কৃষককে ( প্রত্যেককে ১ বিঘা জমি) বীজ ফসল, বীজ ধান অথবা বীজতলার বীজ দেবো আমরা। বীজ ধান যাদের দেয়ার কথা, দেয়া হয়ে গেছে। সাথে দুই রকমের সার ও এক হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। পরে আমরা দেড় লাখ কৃষককে আগাম রবিশস্য করার জন্য বীজ ও নগদ এক হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এরপর শস্য করার জন্য ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি সার ও এক হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এগুলো রাজস্ব খাত থেকে দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে প্রণোদনা খাত থেকেও দেয়া হবে।
দেশে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের ২৩ জেলায় বন্যা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি জেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। অন্য জেলায় তো বন্যা হয়নি। কৃষি মন্ত্রণালয় রোপা আমনের জন্য ৮০ হাজার একর বীজতলা করছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে প্রণোদনা হিরসবে দেয়া হবে। এ ছাড়া এর বাইরে কৃষকদের আমরা বীজ দিচ্ছি। কৃষিসচিব বলেন, আমরা মনে করছি, দুই-চারটি জেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে, তা আমরা পুষিয়ে উঠতে পারব। এ ছাড়া আগামী বোরোটাকে বোরো (মৌসুম) যদি স্ট্যান্ডার্ডে নিতে পারি, আমার মনে হয় এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেফতার সোনারগাঁয়ে শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনাসহ ২৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজার চলমান ঘটনাবলী সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভুল : বসনিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ভারতের আসাম-মেঘালয় সীমান্তে আটক ৬৫ বাংলাদেশী ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুসলিম উম্মাহ'র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হোসেনপুরে স্কুলশিক্ষকের বসতঘর পুড়ে ছাই রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টির আভাস 'শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে' সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশ উদ্ধার সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে মৎস্যচাষির মৃত্যু সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর ওপর ডিম নিক্ষেপ

সকল