১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

স্বৈরতন্ত্র ঠেকাতে সংবিধান সংশোধন না কি পুনর্লিখন প্রয়োজন?

বিবিসির বিশ্লেষণ
-

‘রাষ্ট্র সংস্কারের’ প্রশ্নে বিশ্লেষকরা শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন আমলকে উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানকে এমন কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে ওই পদে বসে যে কেউ ‘ স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার’ সুযোগ পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা হলো, দেশকে স্বৈরশাসনমুক্ত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। জনগণের এই আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধানের পুনর্লিখন করতে হবে।’
কেউ কেউ উদাহরণ টানছেন ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের সংস্কারের কথা। অনেকে মনে করছেন, ‘জোড়াতালি দিয়ে সংবিধান সংশোধন বা আইনের সংস্কার’ করা হলে স্বৈরতন্ত্র রোধ করা সম্ভব না। পাল্টা যুক্তিও আছে। অনেকে বলছেন, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, নতুন দেশ গঠিত হয়নি। তাই সংবিধান পুনর্লিখনের কোনো প্রয়োজন নেই।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে যা যা দরকার তা বর্তমান সংবিধানেই আছে। বিদ্যমান সংবিধান দিয়েই চাইলে সঙ্কটের সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশের সংবিধানে ১৫৩টি অনুচ্ছেদ আছে। কোনটা সংস্কার করতে চায়, কেন করতে চায় এই উত্তর কারো কাছে নেই। যে ধারাগুলো আছে সেটাতে আসলে অসুবিধা কোথায় সেটা তো জানা প্রয়োজন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হলেও বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করেছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল ও কিংবা শাসকরা। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয় শেখ হাসিনার ইচ্ছাতেই। অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে ক্ষমতা এককেন্দ্রিক করার সুযোগ এমনভাবে করে দিয়েছে, ভবিষ্যতেও যেকোনো ব্যক্তির পক্ষে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগসহ এমন বেশ কিছু জায়গায় পরিবর্তন যদি আনা যায় তাহলে এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমেই এটা করা সম্ভব।’
সাংবিধানিক ঝুঁকি কতখানি?
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ৭ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় এই সংবিধান বা এর কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করলে কিংবা সেটি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে তার এই কাজ রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবেন।’ এমন প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে সেটিও সংবিধানের কোথাও নেই। সুতরাং এমন অবস্থায় রাষ্ট্র সংস্কারের চাহিদা থেকে সংবিধান নতুন করে লেখার সুযোগ রয়েছে। তাতে কোনো সাংবিধানিক সঙ্কটও তৈরি হবে না।
এ ক্ষেত্রে অধ্যাপক রীয়াজের যুক্তি হচ্ছে, সঙ্কট তৈরি হবে তখন যদি আগের সংবিধান বাতিল বা স্থগিত করা হয়। কিন্তু যদি আগের সংবিধান বহাল থাকা অবস্থায় সেই সংবিধানকে মূল ধরে নতুন করে সবার মতামতের ভিত্তিতে পুনর্লিখন করা হয়, তাহলে এটি নিয়ে সঙ্কট তৈরির কোনো সুযোগ নেই।
আইনজীবী মি. কাইয়ুম বলছেন, ‘এ মুহূর্তে সংবিধান পুনর্লিখন বা সংশোধন করতে হলে সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বা দেশের মানুষের ঐকমত্য দরকার। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মতো যদি থাকে তাহলে প্রশ্ন উঠলেও পরবর্তীতে সঙ্কট তৈরি হবে না।’
দেশের জনগণের পক্ষ থেকে সংবিধান রচনার দায়িত্ব যে সাংবিধানিক কমিটির মাধ্যমে সম্পাদিত হয় তাকে গণপরিষদ বলা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৭২ সালের গঠিত গণপরিষদ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করে। এ ক্ষেত্রে গত ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণপরিষদের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কি না তা নিয়ে দুই ধরনের বিশ্লেষণ পাওয়া যাচ্ছে।
আইনজীবী মি. কাইয়ুম বলেন, ‘যেহেতু ৫ আগস্টের বিপ্লবে দেশের সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আছে এই গণপরিষদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে এটির নাম সংস্কার গণপরিষদ করা যেতে পারে।’ অধ্যাপক রীয়াজ অবশ্য সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনে গণপরিষদ গঠনসহ তিনটি পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
প্রথমত, গণপরিষদ বা সংবিধান সভা করা সংবিধান প্রণয়ন; দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দল বা সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে গণভোট আয়োজন করা; তৃতীয়ত, গণশুনানির মাধ্যমে সংবিধান প্রস্তুত করা। যখন সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন সংবিধান চূড়ান্ত হবে, তখন একটি নির্দিষ্ট তারিখে বিদ্যমান সংবিধান স্থগিত করে নতুন সংবিধান চালু করতে হবে।
অধ্যাপক রীয়াজ ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার সংস্কারের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘যদিও তখন যে সংস্কার করা হয়েছিল তা পরে আর কার্যকর থাকেনি। ফলে এই সঙ্কট কাটাতে কিংবা প্রধানমন্ত্রীর এককেন্দ্রিক ক্ষমতা কমাতে সংবিধান পুনর্লিখনের কোনো বিকল্প নেই’।
তবে আইনজীবী কিংবা বিশ্লেষকরা এটি মানছেন, ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার যে রাষ্ট্র সংস্কারের চাহিদা তা পূরণ করতে হলে আগে সব ক্ষেত্রে সংস্কার এনেই তার পর আয়োজন করতে হবে সংসদ নির্বাচনের। তাদের ধারণা সেটি না হলে এই অভ্যুত্থানের পর নতুন করে আবারও স্বৈরতন্ত্রের পথে হাঁটতে পারে ভবিষ্যতের যেকোনো রাজনৈতিক সরকার।


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেফতার সোনারগাঁয়ে শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনাসহ ২৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজার চলমান ঘটনাবলী সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভুল : বসনিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ভারতের আসাম-মেঘালয় সীমান্তে আটক ৬৫ বাংলাদেশী ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুসলিম উম্মাহ'র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হোসেনপুরে স্কুলশিক্ষকের বসতঘর পুড়ে ছাই রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টির আভাস 'শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে' সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশ উদ্ধার সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে মৎস্যচাষির মৃত্যু সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর ওপর ডিম নিক্ষেপ

সকল